ধর্ম

বিশ্বনবি যেভাবে কথা বলতেন

মানুষের কথা হবে সাজানো গোছানো। শব্দে-শব্দে, অক্ষরে-অক্ষরে থাকবে না কোনো জড়তা। কথা হবে সুস্পষ্ট। আর তাতে শ্রোতা তার পুরো উদ্দেশ্য বুঝতে সক্ষম হবে। কথা শুনেও মজা পাবে মানুষ। সুন্দরভাবে কথা বলাও মানুষের একটি উত্তম গুণ। বিশ্বনবির কথা বলার ধরণেও রয়ে উম্মতের জন্য শিক্ষা।

Advertisement

বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বোত্তম ও প্রাঞ্জল ভাষায় কথা বলতেন। তিনি ছিলেন ঝাওয়ামিউলি কালিম। তিনি কথা বলতেন কম। কিন্তু তা ছিল ব্যাপক অর্থবোধক।

তাইতো মানুষ কথা বলবে কম, কিন্তু কথার অর্থ হবে, আবেদনমূলক, বোধগম্য ও সুন্দর। এমনভাব কথা বলা যাবে না, যে কথা শ্রুতি মধুর নয় এবং জড়তায় একাকার।

বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুন্দর ও গুছানো ভাবে ধীরে ধীরে কথা বলতেন। কথায় ছিল নো কোনো তাড়াহুড়ো কিংবা জড়তা। হাদিসে পাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথা বলার ধরণও ওঠে এসেছে। যা উম্মতের জন্য শিক্ষণীয় ও পালনীয়। আর তাহলো-

Advertisement

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমাকে ‘জাওয়ামিউল কালিমসহ (সুসংক্ষিপ্ত ও মর্মসমৃদ্ধ বাণীসহ) প্রেরিত হয়েছি এবং আমাকে প্রভাব দিয়ে সাহায্য করা হয়েছে। একবার আমি ঘুমের অবস্থায় দেখলাম, পৃথিবীর ভান্ডারগুলোর চাবি আমাকে দেয়া হয়েছে এবং তা আমার হাতে রেখে দেয়া হয়েছে।’ (বুখারি)

ইমাম যুহরি রহমাতুল্লাহি আলাইহি হাদিসটি প্রসঙ্গে বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন সংক্ষিপ্ত কথা বলতেন যা শব্দ বা উচ্চারণের দিক থেকে হত অল্প কিন্তু ব্যাপক অর্থবোধক।’

বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো সাধারণ মানুষের মতো তাড়াহুড়ো করে কথা বলতেন না। তিনি যখন কথা বলতেন তখন কেউ চাইলে প্রত্যেক শব্দ ও অক্ষর গনণা করতে পারতো। হাদিসে পাকে এসেছে-

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সা্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো কোনো কথা বলতেন, চাইলে যে কেউ তার কথা গণনা করতে পারতেন। তিনি স্পষ্ট কথা বলতেন। অক্ষর,-অক্ষর ও শব্দে শব্দে সুসজ্জিতভাবে গুছিয়ে কথা বলতেন।’ (বুখারি ও মুসলিম)

Advertisement

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথা ছিল সুস্পষ্ট। তিনি যখন কোনো কথা বুঝানোর জন্য বলতেন তখন তিনি তা তিনবার বলতেন-

হজরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোনো কথা তিনবার বলতেন, যাতে শ্রোতারা (যারা কথা শুনে) ভালোভাবে হৃদয়ঙ্গম করতে পারে।’ (শামায়েলে তিরমিজি)

হজরত হাসান ইবনে আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনায় এসেছে-

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বদা আখেরাতে উম্মতের মুক্তির চিন্তায় বিভোর থাকতেন। এ কারণে তাঁর কোন স্বস্তি ছিল না। তিনি অধিকাংশ সময় নিরব থাকতেন। বিনা প্রয়োজনে কথা বলতেন না। তিনি স্পষ্টভাবে কথা বলতেন। তিনি ব্যাপক অর্থবোধক বাক্যালাপ করতেন। তাঁর কথা ছিল একটি থেকে অপরটি পৃথক। তাঁর কথাবার্তা অধিক বিস্তারিত ছিল না কিংবা অতি সংক্ষিপ্তও ছিল না। অর্থাৎ তাঁর কথার মর্মার্থ অনুধাবনে কোন প্রকার অসুবিধা হতো না। তাঁর কথায় কঠোরতার ছাপ ছিল না, থাকত না তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের ভাব।’ (শামায়েলে তিরমিজি)

সুতরাং প্রত্যেক মানুষেরেই উচিত কথা বলার সময় তা গুছিয়ে সুন্দরভাবে বলা। কম কম বললেও তা যেন হয় অর্থবহ। মার্জিত ও সুস্পষ্ট।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বিশ্বনবির সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মতো গুছানো সুষ্পষ্ট সুসজ্জিত ও মার্জিত কথা বলার তাওফিক দান করুন। সুন্নাতের অনুসরণ ও অনুকরণে জীবন সাজানোর তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/পিআর