প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের মনের অনেকটাই মিল। তাইতো গাছপালায় ঘেরা কোনো জায়গা থেকে ঘুরে এলে মন আপনাআপনিই ভালো হয়ে যায়। কিন্তু ব্যস্ত এই নাগরিক জীবনে না মেলে সবুজের দেখা, না মেলে অতটুকু অবসর। এখনকার বাসাগুলো যতটুকু বারান্দা পাওয়া যায়, তা বাগান করার জন্য যথেষ্ট নয়, মানছি। তবু এরই ফাঁকে যতটুকু সম্ভব সবুজ ধরে রাখা।
Advertisement
দিনশেষে ক্লান্ত শরীর আর মন নিয়ে বাড়ি ফিরে বারান্দায় একচিলতে বাগানে কিছুটা সময় কাটান। হাতে থাকতে পারে গরম একমগ কফি। দেখবেন, ক্লান্তি দূর হয়ে সেখানে জায়গা করে নিয়েছে প্রশান্তি। রঙিন ফুলের বাগান হোক কিংবা সবুজ শাক-সবজি, তাজা নিঃশ্বাসের সঙ্গে সতেজতাও ফিরে পাবেন।
বাগান করার উত্তেজনায় প্রথমেই গাদাখানেক টাকা খরচ করে টব কেনার প্রয়োজন নেই। বরং বাতিল প্লাস্টিকের বোতল, বাথটাব বা বালতিতেও চমৎকার গাছ হতে পারে। পুরনো বাথটবে তো ক্যাপসিকাম, মুলা, ফুলকপিও ফলানো সম্ভব। মাটি অবশ্য ভালো কোনো নার্সারি থেকেই কিনবেন। কেনার পর মাটির সঙ্গে খানিকটা গোবর মিশিয়ে নিতে পারলে খুব ভালো হয়।
ছোট আকারের বারান্দাগুলোর জন্য ছোট আকারের অনেকগুলো টবের কথা ভাবতে হয়। এতে সেই বারান্দার গোটা জায়গারই ভালো ব্যবহার করা সম্ভব। তাছাড়া ঝুলিয়ে রাখা যায় যে গাছের টবগুলোকে, সেগুলোও অমন বারন্দায় বেশ মানিয়ে যায়। আর বড় বারান্দার জন্য বড় বড় টব থেকে শুরু করে চাইলে সুন্দর নকশার টবের স্ট্যান্ডগুলোর কথাও ভাবা যায়।
Advertisement
এবার ভাবুন, আপনি কীসের গাছ লাগাতে চান? যারা ফুল বেশি ভালোবাসেন তারা সামান্য পরিশ্রমেই জবা, গাঁদা, গোলাপ, রঙ্গন, বোগেনভিলিয়ার বাগান পেতে পারেন। বীজ কিনুন স্থানীয় নার্সারি থেকে। গরমে সাধারণত দিনে দু’বার পানি দিতে হয়। শীতের দিনে দু’দিনে একবার দিলেও চলে। ঠিক কতটা পানি বা সার দেবেন, নার্সারি থেকেই জেনে নিন। গাছের পরিচর্যার নানা দিক নিয়ে বই কিনতে পাওয়া যায়। সেখান থেকেও সাহায্য নিতে পারেন।
সবজি বা এধরনের গাছ লাগাতে চাইলে তাও সম্ভব। ধনেপাতা, পুদিনাপাতা, কারিপাতা, পালংশাক, পুঁইশাকও বাড়িতে সহজেই ফলানো সম্ভব। বাজার থেকে গোড়াসহ পুদিনা কিনে এনে মাটিতে লাগালেই গাছ হয়। আস্ত ধনে আগের রাতে হালকা গরম পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরদিন পুঁতলেই তাজা ধনেপাতা ফলবে। মরিচ আর লেবুও ধরে সামান্য পরিচর্যাতেই। করতে পারেন লাউ, ঢেঁড়শ, করলা, পেঁয়াজের চাষও।
মানি প্লান্ট দেয়াল বা গ্রিলের কাছাকাছি রাখুন। একসময় বেয়ে ওপরে উঠবে কিংবা নিচে নামবে। বারান্দার গ্রিল সাজাতে বেছে নিন ঝুলন্ত গাছ যেমন- ফার্ন, পোলিয়োনিয়া পুলক্রো ও অপরাজিতা। বারান্দার গ্রিলের সৌন্দর্য বেড়ে যাবে অনেকখানি।
টবে ফুল, ফল কিংবা ঔষধি গাছের চাষ করলে গাছে রোগ হতেই পারে। তার জন্য চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। সঠিক পরিচর্যা ও স্থানীয় জৈব কীটনাশক ওষুধ ব্যবহার করতে পারেন। এতে রোগ প্রতিরোধ করা সহজ হবে।
Advertisement
গাছের যত্ন করতে গিয়ে দেখা যায় প্রায়ই বিভিন্ন পোকামাকড়ের জন্য গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আধা লিটার পানিতে সাধারণ কোনো হ্যান্ডওয়াশ কয়েক ফোঁটা গুলে গাছের পাতা ও ডাল ভালো করে ধুয়ে দিন। একদিনেই উপকার পাবেন।
একটা মুখবন্ধ জায়গায় সবজি আর ফলের খোসা, চা পাতা, চাল ধোয়া পানি ইত্যাদি জমিয়ে রাখুন। কিছুদিনের মধ্যেই খুব ভালো অরগ্যানিক সার তৈরি হয়ে যাবে।
এইচএন/এমকেএইচ