ফিচার

বাবাসহ ৩ প্রতিবন্ধি সন্তানের জীবন সংগ্রামের গল্প

তার সকালটা শুরু হয় মাথায় একরাশ চিন্তা নিয়ে। দু’বেলা দু’মুঠো আহারের সন্ধানে অপলক তাকিয়ে থাকা। তবে সেটা ভিক্ষাবৃত্তি নয়, সেলাইয়ের কাজ করেই চলে তার সংসার। নিজে প্রতিবন্ধি, তিন সন্তানও প্রতিবন্ধি। এ যেন ভাগ্য বিড়ম্বনার গল্প। গল্পের চরিত্রগুলো একই। কেউই জন্ম থেকে প্রতিবন্ধি নন। সুচিকিৎসার অভাবে আজ তাদের এমন দশা। যেখানে ভাত জোটাতে পাহাড় সমান কষ্ট; সেখানে চিকিৎসা করানোর চিন্তা করা অরণ্যে রোদন। বলছিলাম চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার হাঁসা গ্রামের লোকমান মিজির জীবন সংগ্রামের গল্প।

Advertisement

লোকমানের শুরুর জীবন: জন্মের পর চার কি পাঁচ বছর বয়সে হঠাৎ এক জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাঁটা-চলা করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। পরিবারে অভাব-অনটন থাকায় ভালো চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি। ফলে জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। প্রতিবন্ধি হয়েই জীবন পার করতে হচ্ছে তাকে। পিতা সিকান্দর মিজি এবং মাতা তৈয়বেন্নেছার তিন ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে বড় ছেলে লোকমান মিজি। তার মাও ছিলেন প্রতিবন্ধী। ছেলেকে ভালো করার বহু চেষ্টা করলেও ভাগ্য আর বদল হয়নি।

তিন সন্তানও প্রতিবন্ধি: দিন যায়, মাস যায়, বছরও গড়ায়। দেখতে দেখতে লোকমান এখন যৌবনের পথে পা বাড়িয়েছে। বিয়ের বয়স হয়েছে তাই মা চিন্তা করলেন তাকে বিয়ে দেওয়ার। কিন্তু লোকমানের চিন্তা হলো, ‘এমনিতেই প্রতিবন্ধকতা নিয়ে জীবন পার করছি, তার উপর আবার বিয়ে করে কষ্টের বোঝা ভারি করতে চাই না।’ কিন্তু মায়ের কথা তো রাখতে হবে। তাই রাজি হয়ে গেলেন বিয়েতে। বিয়ের পর একে একে তিন সন্তানের জন্মও দিলেন। তবে ভাগ্য খুব প্রসন্ন ছিল না। তার তিন সন্তানও প্রতিবন্ধি।

গল্পগুলো যেন একই: গল্প আর বাস্তবতা যা-ই বলি না কেন। শেষ পরিণতিটা যেন একই রকম ঘটেছে। ভাগ্য বিড়ম্বনার এক দৃষ্টান্ত পরিবারটির সামনে। লোকমানের তিন সন্তানের কেউই জন্ম থেকে প্রতিবন্ধি নন। জন্মের কয়েক বছর পর থেকেই তাদের জীবনে এমনটা ঘটতে শুরু করে। বহু চিকিৎসা করিয়েও তাদের ভালো করা যায়নি। রকিব, মুক্তা ও নিশু- তিন জনের মধ্যে দু’জনের অবস্থা খুবই মারাত্মক। হাঁটা-চলা তো দূরের কথা, বসা থেকে উঠতেই পারেন না দু’জন। নিশু কোনো রকমে হাঁটেন; তাও বহু কষ্টে।

Advertisement

চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিঃস্ব: একদিকে ‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়’, অন্যদিকে সন্তানদের চিকিৎসা ব্যয় মেটানো। অনেকটাই যেন আলাদিনের চেরাগ পাওয়ার মতোই কাল্পনিক কাহিনির অবয়ব। নিজে চিকিৎসার অভাবে সুস্থ হতে পারেননি, তা বলে যে সন্তানদের চিকিৎসার জন্য চেষ্টা করবেন না সে কী হয়? তাই তো চিকিৎসা করাতে গিয়ে যা কিছু ছিল; সবই হারিয়ে এখন বহু কষ্টে দিনাতিপাত করছেন তিনি।

এক কক্ষের ছোট্ট কুটির: কোনো রকম ছোট্ট একটি খুপড়ি ঘরে বসবাস করে তার পরিবার। পরিবারের ৮ সদস্য নিয়ে বেশ কষ্টেই কাটে তার জীবন। একটি ঘরে কোনো রকমে রাত-দিন পার করছেন। বহু জায়গায় আবেদন করেও মেলেনি একটি ঘর। অনেকেই সরকারি ঘর পায়। তবুও এত কষ্টে বসবাস করেও একটি ঘর পায়নি তার পরিবার। উপজেলা পরিষদ থেকে শুরু করে ইউএনও, ডিসি অফিস- এমনকি প্রধানমন্ত্রীর কাছেও অসহায়ত্বের কথা পৌঁছানোর চেষ্টা করেছেন। তবে কোনো লাভ হয়নি।

হয়তো ভাগ্য ফিরবে: এবার বিষয়টি নজরে এসেছে বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাড. জাহিদুল ইসলাম রোমানের। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আসলেই দুঃখজনক। তবে বিষয়টি যেহেতু আমার নজরে এসেছে; সেহেতু পরবর্তীতে সরকারি ঘরের জন্য বরাদ্দ এলে অবশ্যই এ পরিবারকে একটি ঘর দেওয়া হবে।’

এসইউ/পিআর

Advertisement