বিশ্বব্যাপী পরিবেশ রক্ষায় সোলার প্যানেল ব্যবহারে মানুষকে উৎসাহী করতে ২৭টি দেশের ৩২ হাজার কিলোমিটার পথ বাইক চালিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন বেলজিয়ামের নাগরিক Gregory lewyllie। পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতার লক্ষ্যে বাঁশের তৈরি এবং সোলারের সাহায্যে বিশেষ ধরণের একটি বাইক নিয়ে ৪৮ বছর বয়সী এই পরিবেশপ্রেমী চষে বেড়াচ্ছেন পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত। ব্রাসেল ইউনিভার্সিটি থেকে টেলিভিশন সাংবাদিকতা বিষয়ে মাস্টার্স শেষ করে বেলজিয়ামের একটি কলেজে তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষকতা করছেন। ৩ দিন মৌলভীবাজারে অবস্থান করে তিনি ঢাকায় এসেছেন। বাংলাদেশ ঘুরবেন ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ৬ মার্চ বাংলাদেশ ছেড়ে ভুটানে চলে যাবেন। তবে ভুটান যাওয়ার আগেই বাইক জাহাজে করে বেলজিয়ামে পাঠিয়ে দেবেন।
Advertisement
মৌলভীবাজারের সার্কিট হাউজ এলাকায় Gregory lewyllie’র সঙ্গে আলাপ হলে তার ভ্রমণসহ যাবতীয় বিষয়ে আলাপ করেন। তিনি জানান, বিশ্বব্যাপী পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। পরিবেশ নষ্টের কারণে জলবায়ুর প্রভাবে হুমকিতে পড়েছে এই পৃথিবী। এই পৃথিবীর মানুষসহ প্রতিটি প্রাণ বাঁচানোর জন্য পরিবেশ রক্ষা প্রয়োজন। পরিবেশের জন্য বড় একটি হুমকি বিদ্যুৎ। তবে সভ্যতার প্রয়োজনে বিদ্যুৎ দরকার। আর এর সমাধান হচ্ছে সোলার প্যানেল। সোলার প্যানেল বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হলে বিদ্যুতের কারণে পরিবেশের যে দূষণ হয় তা কমে আসবে। বিশ্বব্যাপী সচেতনতার লক্ষ্যে তৃতীয় ধাপে ২০১৮ সালের ৩ জুন বেলজিয়াম থেকে শুরু করে ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, জার্মানি, হল্যান্ড, রাশিয়া, কাজাখস্তান, চীন, লাওস, ভারত এবং সর্বশেষ বাংলাদেশসহ ২৭টি দেশ বাইকে করে ভ্রমণ করেছেন। বাঁশের তৈরি বাইক নিয়ে ২৭টি দেশ ঘুরতে ৩২ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়েছে তাকে।
গত মাসের ১৮ তারিখ তিনি সিলেটের ডাউকি বর্ডার দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। এরই মাঝে ডান কাঁধে ব্যথা পেয়ে ৮ দিন বিশ্রামে ছিলেন। সোমবার যাবেন শ্রীমঙ্গল। সেখান থেকে যাবেন ঢাকায়। ঘোরাঘুরি শেষ করে ৬ মার্চের ভেতর চট্টগ্রাম থেকে জাহাজে বাইকটি পাঠাবেন নিজ দেশ বেলজিয়ামে। বাইকে ব্যাটারি থাকার কারণে তা বিমান বহন করবে না। তাই জাহাজে পাঠাতে হবে বলে জানিয়েছেন। এর পর ২ সপ্তাহ বাইক ছাড়া ভুটান ঘুরে চলে যাবেন নিজ দেশে।
তার বাহনটি মূলত বাইসাইকেল হলেও সোলার প্যানেলে ব্যাটারির মাধ্যমে চালানো হয় যা অনেকটা মোটরসাইকেলের ইঞ্চিনের কাজ করছে। তবে চার্য চলে গেলে বা ব্যটারির সংযোগ আলাদা করে বাই সাইকেলের মতো চালানো যায়।
Advertisement
বিশেষ এই বাইক তৈরিতে তিনি বাঁশ ব্যবহার করেছেন। বেলজিয়ামে বাঁশ না থাকায় উগান্ডা থেকে ইম্পোর্ট করে বাঁশ আনিয়েছেন শুধু এই বাইকটি তৈরির জন্য। ৪.২০ মিটার লম্বা এই বাইকের পেছনের দিক অনেকটা ঠেলাগাড়ির মতো যার প্রস্থ ১ মিটার। মূলত পেছনের এই অংশে রয়েছে দুইটি সোলার প্যানেল যা থেকে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় আর এর সাহায্যেই চলে বাইকটি। এবারের রাইডটি তৃতীয় ধাপের জানিয়ে তিনি বলেন, সোলারের প্রতি সচেতনতা বাড়াতে তিনি এর আগে ২০০৬ থেকে ২০০৯ সাল এবং ২০১৩ থেকে ২০১৪ সালে দুইবার সাধারণ বাইসাইকেল নিয়ে ভ্রমণ করেছেন। এই দুইবারে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, চিলি বুলগেরিয়া, পেরু, ইকুয়েডর, কাজাখস্তান, চায়নাসহ বেশ কিছু দেশ ভ্রমণ করেছেন। আগের দুটি রাইড সাধারণ বাইসাইকেল হলেও ২০১৮ সালের ৩ জুন থেকে সোলার চালিত বাঁশের এই বাইক নিয়ে বের হয়েছেন। দেশে ফিরে গিয়ে আবারও নতুন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
দীর্ঘ এই পথে অনেক বন্ধু স্বজন পেয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিটা দেশে নতুন নতুন পরিবেশ এবং নতুন নতুন মানুষ, সংস্কৃতি আমাকে আনন্দ দেয়। এই আনন্দ ভ্রমণের সব থেকে বড় পাওয়া। যেখানেই গেছি সাধারণ মানুষ আমাকে আপন করে নিয়েছে। অনেক সময় ঘিরে ধরেছে আমার বাঁশের বাইক দেখতে।
তবে দীর্ঘ এই ভ্রমণে দুর্ঘটনায় পড়ে ২ মাস বিশ্রামে ছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, লাওসে ৮ মিটার উঁচু থেকে বাইক নিয়ে পড়ে যান এতে তার ডান কাঁধে মারাত্মক আঘাত পান। সেসময় তিনি ২ মাস বিশ্রামে ছিলেন।
এফএ/পিআর
Advertisement