ফিট থাকতে আমরা কত কিছুই না করে থাকি। না খেয়ে, নিয়মিত শরীরচর্চা করেও ওজন কমছে না! দু:শ্চিন্তার যেন শেষ নেই।
Advertisement
আপনার সেই চিন্তা দূর করতে পরামর্শ দিয়েছেন ডা. মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর কবীর। জেনে নিন এখনই-
সকালের নাস্তা: যাদের সকালে খাওয়ার অভ্যাস তারা আটটা বা সাড়ে আটটার দিকে দুধ চিনি ছাড়া এক কাপ চা (আদা, লেবু সামান্য লবণ দেওয়া যেতে পারে) খেয়ে নিন। কুসুম গরম পানির সাথে অ্যাপেল সিডার বা কোকনাট ভিনেগার খেতে পারেন এবং কুসুম গরম পানির সাথে লেবু চিপে খেতে পারেন। এছাড়া যাদের দেরিতে নাস্তা খাওয়ার অভ্যাস তারা এগারোটার দিকে নাস্তা করবেন এবং দুপুরের খাবার আড়াইটা তিনটায় খাবেন। আর সকাল আটটায় নাস্তা খেলে দেড়টার ভেতর দুপুরের খাবার খেতে হবে।
দুপুরের খাবার: দুপুরের খাওয়ার আগে অবশ্যই অ্যাপেল সিডার ভিনেগার এক চামচ এক গ্লাস পানির সাথে মিশিয়ে খাবেন। এতে আপনার গ্যাসের সমস্যা হবে না এবং চর্বি কাটতে সাহায্য করবে। শাক, সবজি অবশ্যই এক্সট্রা ভার্জিন অলিভয়েল দিয়ে রান্না করবেন এবং মাছ ভাজলে (ডিপ ফ্রাই থেকে বিরত থাকবেন এতে খাদ্যগুণ নস্ট হয়) বা রান্না করলে এই তেল দিয়েই করবেন।
Advertisement
সবজি যতটুকু সম্ভব কম সেদ্ধ করবেন। যেন সবজির গুণগত মান ঠিক থাকে। ডিম কুসুমসহ ঘি বা মাখন দিয়ে ভেজে খাবেন। এক দিনে সর্বোচ্চ ছয়টা ডিম কুসুমসহ খেতে পারবেন কোন সমস্যা নেই। কারণ ডিম প্রোটিন এবং ভালো ফ্যাটের উৎস। তবে একবার ফ্যাট এ্যাডাপটেশন হয়ে গেলে চাইলেও এত খেতে পারবেন না।
দেশি মুরগি খেতে পারেন, এক দুই টুকরো অথবা উল্লিখিত গরুর মাংস। মাছ খেলে মাংস খাবেন না। মাংস খেলে মাছ খাবেন না। এছাড়া প্রবাসীরা ফার্মের মুরগি এক টুকরো করে খেতে পারেন। কারণ আমার জানা মতে সেখানে ফার্মের মুরগিকে আদর্শ খাবার খাওয়ানো হয় (যদিও ফার্মের মুরগি ব্যায়াম করে না যেটা দেশি মুরগি করে )। দুম্বা, উট, ভেড়ার, মাংস খেলে এক টুকরোর বেশি নয়। দুপুরের ম্যানুতে শাক, সবজি মাছ অথবা মাংস, ঘি-এ ভাজা ডিম, ঘি-এ ভাজা বাদাম সাথে বাটার রাখতে পারেন। অবশ্যই শসা বা শসার সালাদ রাখবেন সঙ্গে টমেটো, গাজর।
বিকেলে ক্ষুধা লাগলে উপরে উল্লেখিত চা, বাটার কফি এবং যে কোন প্রকার মাখন বা ঘি দিয়ে ভাজা বা মেশানো বাদাম খাবেন।
রাতের খাবার: রাতের খাবারের পূর্বেও ভিনেগার মিশ্রিত এক গ্লাস পানি খেয়ে নিবেন এবং রাতের খাবার দুপুরের অনুরূপ খাবেন। আইটেম দুই একটা কম বেশি হোক কোন সমস্যা নেই। রাত আটটার আগেই সমস্ত খাবার শেষ করুন। এরপর আর পানি ছাড়া কিছুই খাবেন না।
Advertisement
যা খাওয়া যাবে না -
১. চালের তৈরি সব কিছু ( ভাত, চাউলের রুটি, চাল দিয়ে বানানো দ্রব্যাদি)২. গমের তৈরি সব কিছু (রুটি, পাওরুটি, বিস্কুট যে কোন প্রকার, গম দিয়ে বানানো অন্যান্য দ্রবাদি)৩. কোন প্রকার ডাল৪. আলু, মিষ্টি আলু, গাছ আলু বা আলু সাদৃশ্য অন্যান্য আলু, যা শর্করা জাতীয় সবজি যেমন- মূলা।৫. চিনি এবং চিনি দিয়ে বানানো দ্রব্যাদি যা কিছু আছে।৬. দই, টক দই, দুধ এবং সরাসরি দুধ দিয়ে বানানো দ্রবাদি।৭. মধু এবং মিষ্টি ফলমূল খাওয়া যাবে না।৮. সয়াবিন তৈল, সূর্যমুখী তেল, রাইস ব্যান ওয়েন, ক্যানোলা ওয়েল এবং সাধারণ কোন তেলে রান্না করা কিছু খাওয়া যাবে না।৯. ফ্রার্মের মুরগি, যে মুরগি গুলো টেনারির বর্জ্য থেকে উৎপাদিত খাদ্য খাওয়ানো হয়। ১০. ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে মোটা তাজা করা হয় এমন গরু বা খাসির মাংস।
যা খেতে বাঁধা নেই-
১. সবুজ শাক, সবজি (গাজর, মিষ্টি কুমড়া [কচি সবুজ ] খেলে অল্প পরিমাণ)২. টক জাতীয় ফল (যেমন- জলপাই, আমলকি, একটি কচি ডাবের পানি)৩. মাছ যে কোন প্রকার খেতে পারবেন। তবে তৈলাক্ত দেশিয় মাছের ভেতর পাংগাশ, বোয়াল, ইলিশ, সরপুঁটি, ব্রিগেড, গ্রাসকার্প, বাইম (তৈলাক্ত বা সাগরের মাছ হলে আরো ভালো)।৪. গরু এবং খাসির মাংস খাওয়া যাবে তবে যে গরু বা খাসি গুলো ইঞ্জেকশান মুক্ত এবং ঘাস, লতা পাতা বা খড় কুটো খেয়ে লালিত পালিত (বেশি পরিমাণে খাওয়া যাবে না)। এছাড়া গরু বা খাসির পায়া খাওয়া যাবে। যেটা খাওয়া এই সময়ে খুবই উপকারি এটাও অল্প পরিমাণে খেতে হবে।৫. মুরগির ডিম (ফার্ম হলে সমস্যা নেই তবে ওমেগা ৩ বা দেশি মুরগি বা হাঁস হলে বেশি ভালো) এবং মাছের ডিমও খেতে চেষ্টা করবেন যথা সম্ভব।৬. ঘি, অর্গানিক বাটার, এক্সট্রা ভার্জিন অলিভয়েল, MCT ওয়েল, অর্গানিক Extra Virgin Cold Pressed কোকোনাট ওয়েল। ৭. বাদাম যে কোন প্রকার। চিনাবাদাম, কাজুবাদাম, পেস্তা বাদাম, অন্যান্য বাদাম যা আছে চাইলে বাদাম ব্লেন্ড করে সাথে উপরে উল্লেখিত নারকেল তেল দিয়ে বানাতে পারেন পিনাট বাটার যেটা খেতে তুলনাহীন। তবে খাবেন অল্প।৮. দুধ চিনি ছাড়া রং চা বা কফি। সবুজ চায়ের সাথে লেবু, আদা, সামান্য লবণ মেশাতে পারেন। কফির সাথে, MCT ওয়েল, মাখন বা ঘি এবং অর্গানিক কোকোনাট অয়েল মিশিয়ে বাটার কফি বানিয়ে খেতে পারেন। এতে ভালো কাজ হবে।
ডা: মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর কবীরের পরামর্শ অনুযায়ী শ্রুতিলিখন আবুল কালাম আজাদ
এএ