দিল্লির মেডিকেল শিক্ষার্থী নির্ভয়া গণধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামির ফাঁসি কার্যকরে আরও বিলম্ব হচ্ছে। শনিবার আলোচিত এ মামলার অন্যতম আসামি অক্ষয় ঠাকুর ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছেন।
Advertisement
আজ ভোর ৬টায় দণ্ডিতদের ফাঁসি কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, শুক্রবার আদালতের আদেশে তা স্থগিত করা হয়। ওইদিন রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছিলেন আরেক আসামি বিনয়কুমার শর্মা। তার আবেদন খারিজ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
চার অপরাধীর মধ্যে মুকেশ সিংহের সামনে আর কোনও আইনি পথ খোলা নেই। তবে, এখনও প্রাণভিক্ষার আবেদন জানাননি আরেক অপরাধী পবন গুপ্ত।ভারতের আইন অনুযায়ী, একই অপরাধে দণ্ডিতদের মৃত্যুদণ্ড একই দিনে কার্যকর করতে হবে। সেকারণে শনিবার মুকেশের একার ফাঁসি কার্যকর হওয়া সম্ভব নয়- এই যুক্তিতে চারজনেরই ফাঁসি পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন জানান তাদের আইনজীবী। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তিহার জেল কর্তৃপক্ষকে তলব করেন পাতিয়ালা আদালতের বিচারক। শুক্রবার তাদের প্রতিবেদন পাওয়ার পর আসামিদের ফাঁসি স্থগিত করার নির্দেশ দেন তিনি।
গত ১৭ জানুয়ারি ভারতের বহুল আলোচিত মেডিকেল শিক্ষার্থী নির্ভয়া ধর্ষণ ও হত্যায় অভিযুক্ত চার আসামির সর্বোচ্চ সাজা কার্যকরের নতুন সময় ঘোষণা করে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। ওইদিন আসামি মুকেশ সিংয়ের প্রাণভিক্ষার আবেদন দেশটির রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ নাকচ করে দেয়ার পর আগামী ১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৬টায় অপরাধীদের ফাঁসি কার্যকর করা হবে বলে জানানো হয়।
Advertisement
ভারতের আইনে প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার পর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগে অন্তত ১৪ দিনের নোটিশ দেয়ার বিধান রয়েছে। সেই হিসাবে ১ ফেব্রুয়ারি নয়াদিল্লির তিহার কারাগারে অভিযুক্তদের সাজা কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। এর আগে দিল্লি হাইকোর্ট জানিয়েছিলেন, নির্ভয়া ধর্ষণকাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত বিনয় শর্মা, মুকেশ কুমার, অক্ষয় কুমার সিংহ এবং পবন গুপ্তকে ২২ জানুয়ারি সকাল ৭টায় তিহার কারাগারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর দিল্লির একটি হলে সিনেমা দেখে বন্ধুর সঙ্গে বাসে করে ফিরছিলেন প্যারামেডিক্যালের ওই ছাত্রী। যাত্রী কম থাকায় বাসের চালক-সহকারীসহ অন্তত ছয়জন মিলে নির্ভয়ার বন্ধুকে পিটিয়ে হাত-পা বেঁধে বাসের পেছনের দিকে ফেলে রেখে মেয়েটিকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে তারা। পরে দু’জনকে দিল্লির একটি সড়কের পাশে বাস থেকে ছুড়ে ফেলা হয়।
গুরুতর আহত প্যারামেডিকেলের ওই শিক্ষার্থীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর পাঠায় দেশটির সরকার। সেখানে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর ২৬ ডিসেম্বর মারা যায়। এ ঘটনায় ভারতজুড়ে তীব্র বিক্ষোভ শুরু হয়। নির্ভয়ার হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ সাজার দাবিতে দেশটির লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে দিনের পর দিন বিক্ষোভ করতে থাকে।
নির্ভয়া হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি বাসচালক রাম সিং কারাগারে বন্দি অবস্থায় মারা যান। এছাড়া দোষী সাব্যস্ত আরেক ধর্ষক অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় আদালতের নির্দেশে তাকে তিন বছরের জন্য কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়। ২০১৫ সালে সাজার মেয়াদ শেষে এই তরুণ মুক্তি পাওয়ার পর আবারও ভারতে তীব্র বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে দেশটির ধর্ষণের সাজার আইন পরিবর্তন করে ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সীদেরও ‘প্রাপ্তবয়স্ক’ হিসেবে বিবেচনা করার বিধান করা হয়।
Advertisement
২০১৩ সালে দেশটির দ্রুত বিচার আদালত বাকি চার ধর্ষকের সর্বোচ্চ সাজা ঘোষণা করেন। পরে দেশটির হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগও ওই সাজা বহাল রাখেন।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা
কেএএ/জেআইএম