গরু বিক্রির টাকা হাতিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়ে খালু রশিদ আলীকে (৬৫) শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে নেশাগ্রস্ত এক যুবক। ঘটনাটি ঘটেছে নীলফামারীর ডোমার উপজেলার হরিণচড়া ইউনিয়নের আটিয়াবাড়ি গ্রামে। সোমবার রাত ৮ টায় পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করেছে। এ ঘটনায় পুলিশ বাবুকে আটক করেছে। হত্যার শিকার রশিদ আলী উক্ত গ্রামের মৃত নছিমুদ্দিনের ছেলে। আর আটক বাবু ডোমার উপজেলা শহরের ছোট রাউতা গ্রামের রশিদুল ইসলাম সানু মিয়ার ছেলে ও হত্যার শিকার রশিদ আলীর দ্বিতীয় স্ত্রী শাহিদা বেগমের ছোট বোন বুলু বেগমের ছেলে। অভিযোগ মতে, বাবু ও তার বাবা সানু ডোমার বাস্ট্যান্ডের সড়কের ধারে বিস্কুট ও চা দোকানের আড়ালে অবৈধভাবে ফেনসিডিল বিক্রি করে আসছে। পাশাপাশি বাবা-ছেলে দুইজনেই নেশাগ্রস্ত। ইতোমধ্যে বাবা-ছেলে মাদক বিক্রির দায়ে একাধিকবার গ্রেফতার হয়েছেন এবং জেল খেটেছেন। অভিযোগে আরো জানা যায়, হত্যার শিকার রশিদ আলী কুরবানির ঈদের সময় ডোমারের বোড়াগাড়ী হাটে ৬০ হাজার টাকায় গরু বিক্রি করেছিল। ঈদের পর গত শনিবার (৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বাবু তার খালু রশিদ আলীর বাড়িতে বেড়াতে আসে এবং রাত্রী যাপন করে। ছোট বোনের ছেলের স্বভাব চরিত্র ভাল নয় জেনেই পরের দিন রোববার দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর বাবুকে নিয়ে তার খালা ডোমারে বাবুদের বাড়িতে যায়। সেখানে বাবু তার খালাকে তাদের বাড়িতে রাত্রী যাপনের জন্য আটকিয়ে রেখে সন্ধ্যার পর বাবু পুনরায় ডোমার থেকে তার খালুর বাড়িতে হরিণচড়া ইউনিয়নের আটিয়াবাড়িতে আসে। এখানে পুনরায় বাবু এসে খালু রশিদ মিয়াকে জানায় তাকে তার বাবা-মা গালমন্দ করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। সরল বিশ্বাসে খালু তাকে নিয়ে এক ঘরে রাত্রী যাপন করে। সোমবার ফজরের নামাজের সময় রশিদ মিয়ার ছেলেরা বাবা ও খালাতো ভাইকে ঘরে দেখতে না পেয়ে খুঁজতে থাকে। এ সময় বাড়ির অদূরে রাস্তার ধারে বাবুকে তারা বসে থাকতে দেখে। এ সময় বাবু তাদের জানায় খালু মসজিদে ফজলের নামাজ পড়তে গিয়ে এখনো ফিরেনি। এদিকে, সকাল ৭টার দিকে বাড়ির পেছনে পুকুরে একজনের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে এলাকাবাসী। বাড়ির লোকজন ছুটে গিয়ে দেখে রশিদের মরদেহ পুকুরে ভাসছে। সেখান থেকে তারা মরদেহ উদ্ধার করে বাড়িতে নেয়। বিকালে জানাজার সময় লাশের নাক মুখ দিয়ে রক্ত ঝড়তে থাকলে এলাকাবাসী লাশের গলায় দাগ ও মুখ নাক ফুলে উঠা দেখে সন্দেহ করলে তারা সেখানে উপস্থিত বাবুকে আটক করে। এলাকাবাসীর জিজ্ঞাসাবাদে বাবু ঘটনার কথা স্বীকার করে জানায়, তার খালুর গরু বিক্রির ৬০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিতে সে রাতে তার খালুকে নেশা ঢুকিয়ে কে-টু সিগারেট খাইতে দিয়েছিল। খালু সিগারেট খাওয়ার পর ঘুমিয়ে পড়ে। এরপর ঘরে গরু বিক্রির টাকা খুঁজতে থাকে। কিন্তু টাকা না পেয়ে সে ক্ষিপ্ত হয়ে ঘুমন্ত খালুকে গামছা দিয়ে গলা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে টেনে হিজড়ে প্রথমে খালুর বাড়ির অদূরে একটি ধান ক্ষেতে ফেলে দেয়। পরে সেখান থেকে খালুর লাশ পুনরায় টেনে এনে খালুর বাড়ির পেছনে পুকুরে ডুবিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু সকালে পুকুরে লাশ ভেসে উঠে। বাবু গরু বিক্রির টাকা না পেয়ে খালুকে হত্যার ঘটনার কথা স্বীকার করলে এলাকাবাসী পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে লাশসহ বাবুকে আটক করে থানায় নেয়। এদিকে হত্যার শিকার রশিদ মিয়ার দ্বিতীয় স্ত্রী বাবুর খালা শাহিদা বেগমের তিন ছেলে যথাক্রমে সহিদ আলী, তমিজার উদ্দিন ও রশিদুল ইসলাম অভিযোগ করে জানায়, এ ঘটনায় তাদের খালু সানু মিয়া তাদের হুমকি দিয়ে বলেছে তার ছেলে বাবুকে পুলিশে ধরিয়ে দেয়ার খেসারত একদিন পেতে হবে। তারা এ ঘটনাটি পুলিশকে জানিয়ে দিয়েছে বলে জাগো নিউজকে বলেন। ডোমার থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জম হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জাগো নিউজকে জানান, এ ঘটনায় হত্যার শিকার রশিদ আলীর বড় স্ত্রী জ্যোৎস্না বেগমের বড় ছেলে আনোয়ারুল ইসলাম বাদী হয়ে সোমবার রাতেই বাবুকে আসামি করে ডোমার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে (মামলা নম্বর ৪)। মঙ্গলবার সকালে জেলা মর্গে লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়।জাহেদুল ইসলাম/এসএস/এমএস
Advertisement