আন্তর্জাতিক

ব্রেক্সিট : ভ্রমণকারীদের আশীর্বাদ না অভিশাপ?

এক ছাতার নিচে কেটেছে বহু বছর। অবশেষে নানা আলোচনা-সমালোচনা, বিল-ভোটের পর শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বেরিয়ে গেল যুক্তরাজ্য। গণভোটে রায়ের সাড়ে তিন বছর পর কার্যকর হলো ব্রেক্সিট। তবে এই কাহিনী এখনই শেষ হচ্ছে না। ব্রেক্সিট পুরোপুরি কার্যকর করতে ১১ মাসের ট্রানজিশন পিরিয়ড (পরিবর্তনকাল) নিয়েছে যুক্তরাজ্য। এই ১১ মাস যুক্তরাজ্যকে ইইউ’র নিয়ম-নীতি মেনে চলতে হবে, তার সুবাদে আঞ্চলিক এ জোটের পুরনো সব সুযোগ-সুবিধাও ভোগ করবে তারা। কিন্তু, তারপর?

Advertisement

যুক্তরাজ্যের ট্রানজিশন পিরিয়ড ভ্রমণকারীদের ওপর কী প্রভাব ফেলবে? ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বরের পরই বা কী ঘটতে যাচ্ছে?

বদলাচ্ছে কী?

যুক্তরাজ্য ৩১ জানুয়ারি ইইউ থেকে বেরিয়ে গেলেও ট্রানজিশন পিরিয়ডের শর্ত অনুসারে তারা এখনও একই বাজার ও কাস্টমস ইউনিয়নের অংশ। এটি আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। আশা করা হচ্ছে, এই সময়সীমার মধ্যেই যুক্তরাজ্য-ইইউ নতুন বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন হবে। তা নাহলে চুক্তি ছাড়াই বেরিয়ে যেতে হবে দেশটিকে।

Advertisement

ইউরোপিয়ান ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান নির্বাহী টম জেনকিনসন জানান, যুক্তরাজ্যের নাগরিকেরা এখন যেভাবে ইইউ ভ্রমণ করছেন, ট্রানজিশন পিরিয়ড চলাকালেও একইভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন। এ জন্য কোনও ভিসা, পাসপোর্টের মেয়াদ ন্যূনতম ছয় মাস বা রিটার্ন টিকিটের প্রমাণ দেখাতে হবে না। তবে ট্রানজিশন পিরিয়ডের মধ্যে নতুন চুক্তি করতে না পারলে এই সুবিধা আর নাও থাকতে পারে।

বিমানবন্দর ও ফেরি টার্মিনাল

ট্রানজিশন পিরিয়ডের মধ্যে যুক্তরাজ্যে বিমান চলাচলেও তেমন কোনও পরিবর্তন আসছে না। ইউরোপীয় পর্যটকেরা পরিচয়পত্র ও ই-পাসপোর্ট ব্যবহার করে সহজেই যুক্তরাজ্য ভ্রমণ করতে পারবেন। তবে নতুন চুক্তি না হলে বছর শেষে ভ্রমণকারীদের বিমানবন্দর বা ফেরি টার্মিনালে পৌঁছে আলাদা লাইনে দাঁড়াতে হতে পারে, যেখানে তাদের অতিরিক্ত তল্লাশির মধ্য দিয়ে যেতে হবে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নে ড্রাইভিং

Advertisement

গাড়ি নিয়ে চ্যানেল টিউব বা ফেরিতে করে যুক্তরাজ্য থেকে ইইউ ভ্রমণে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কোনও বাধা নেই। কিন্তু এরপর পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে। যুক্তরাজ্য সরকার জানিয়েছে, ভবিষ্যতে অন্য দেশ ভ্রমণে যেতে তাদের নাগরিকদের আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে হতে পারে। এছাড়া চালকদের তাদের বীমা কোম্পানির কাছ থেকে বিশেষ ধরনের ‘গ্রিন কার্ড’ এবং বাম্পারে লাগাতে একটি জিবি স্টিকারও সংগ্রহ করা লাগতে পারে। তবে সফল চুক্তি হলে এগুলো থেকে মুক্তি পাবেন ভ্রমণকারীরা।

ভ্রমণ বীমা দরকার হবে?

কারও কাছে ইউরোপীয় হেলথ ইনস্যুরেন্স কার্ড (ইএইচআইসি) থাকলে তিনি বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা পান। ট্রানজিশন পিরিয়ডে এটিও কার্যকর থাকবে। তবে সময়সীমা শেষে যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের জন্য এটি আর কার্যকর নাও হতে পারে।

ধারণা করা হচ্ছে, যুক্তরাজ্য ইএইচআইসি সিস্টেমে হয়তো আর যুক্ত থাকবে না। সেক্ষেত্রে জরুরি স্বাস্থ্য সেবার জন্য তাদের নাগরিকদের বিকল্প বীমা পদ্ধতি প্রয়োজন হতে পারে। আর এমনটি হলে অসুস্থ নাগরিকদের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভ্রমণ যথেষ্ট ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে।

মোবাইল ফোনের বিল বাড়বে?

২০১৭ সালে চুক্তির মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নাগরিকদের জন্য ফোনের রোমিং চার্জে ছাড় দেয়া হয়। যুক্তরাজ্যের ট্রানজিশন পিরিয়ডেও এটি কার্যকর থাকবে। তবে সময়সীমা শেষে তাদের জন্য এই সুবিধা আর থাকার সম্ভাবনা নেই।

যুক্তরাষ্ট্রের সুবিধা?

ব্রেক্সিট ভোটের পর থেকেই ইউরো এবং মার্কিন ডলারের বিপরীতে মান কমেছে ব্রিটিশ পাউন্ডের। গত ডিসেম্বরে বরিস জনসন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর পরিস্থিতির সাময়িক উন্নতি হলেও এ বছর চুক্তি অনিশ্চয়তার কারণে সেটি আবারও দুর্বল হয়ে পড়েছে। তবে পাউন্ড যত দুর্বল হবে যুক্তরাজ্যে ইইউ’র বাইরের ভ্রমণকারীদের জন্য তত সুবিধা।

আন্তর্জাতিক যাত্রী জরিপের হিসাবে, যুক্তরাজ্যে ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শুধু যুক্তরাষ্ট্রের পর্যটকেরাই ৪৪০ কোটি ডলার ব্যয় করেছেন। চলতি বছর এই ব্যয় অন্তত ৯ দশমিক ১ শতাংশ বাড়তে পারে। এছাড়া গত বছর ৩৫ লাখ মার্কিন নাগরিক যুক্তরাজ্য ভ্রমণ করলেও এ বছর সেই সংখ্যা দাঁড়াতে পারে ৩৮ লাখে। তবে যুক্তরাজ্যের পর্যটকদের জন্য ইইউ ভ্রমণ ব্যয়বহুল হয়ে ওঠায় তাদের সংখ্যা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সূত্র: সিএনএন

কেএএ/এসআইএস/পিআর