করোনাভাইরাস নিয়ে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া আতঙ্কের মধ্যে যেন আশার প্রদীপ জ্বালল চীন। এ ভাইরাসে আক্রান্ত ২০ রোগীর সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়ার ভিডিও ছেড়েছে তারা। করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে যে উহান থেকে, সেই মহাবিপদগ্রস্ত শহরেরই একটি হাসপাতালের এই ভিডিও যেন আতঙ্কিত বিশ্ববাসীর প্রাণসঞ্চার ঘটিয়েছে।
Advertisement
চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে প্রচারিত ১১ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, করোনাভাইরাস মহামারির কেন্দ্রস্থল হুবেই প্রদেশের শহর উহানের জিনযিনতান হাসপাতালের সামনে ২০ রোগী দারুণ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন এবং ‘ভি’ চিহ্ন দেখাচ্ছেন। এরা প্রাণঘাতী ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে ওই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
করোনাভাইরাস ছড়ানোর পর সবচেয়ে বেশি রোগী যেসব হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে একটি জিনযিনতান হাসপাতাল। হুবেই রেডিও ও টিভি স্টেশনে প্রচারিত খবরে বলা হয়, সুস্থতা লাভের পর বিভিন্ন পর্যায়ের স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) বিকেল ৫টার দিকে ওই রোগীদের হাসপাতালের ছাড়পত্র দেয়া হয়।
লং শ্যাং ঝিং অনুষ্ঠানে প্রচারিত ভিডিওতে মাস্ক-পরিহিতি ওই নারী-পুরুষ রোগীদের উচ্ছ্বসিত ভঙ্গিতে হাসপাতাল ভবন ছাড়তে দেখা যায়।
Advertisement
রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, এবারই প্রথম একদিনে এত বিপুলসংখ্যক রোগী করোনাভাইরাসকে হারিয়ে সুস্থ জীবনে ফিরলেন।
গত বুধবার (২৯ জানুয়ারি) করোনাভাইরাস-জয়ী হিসেবে সংবাদমাধ্যমের সামনে আসেন ২৩ বছর বয়সী এক রোগী। শানঝি প্রদেশের হাসপাতাল থেকে ছাড় পাওয়ার পর তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
নতুন করে ২০ রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার খবর এমন সময় রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম দিলো, যখন করোনাভাইরাস মোকাবিলায় পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রে ধীরগতির জন্য সমালোচনার মুখে পড়েছে চীন। কেবল পদক্ষেপে ধীরগতির জন্যই নয়, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বোঝাতে মৃতের সংখ্যা নিয়ে ‘মিথ্যাচার’র জন্যও নিন্দিত হচ্ছে তারা।
এদিকে চীনের স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) জানানো হয়, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশটিতে ২৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। হুবেই প্রদেশে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেশি। সেখানে ২৪৯ জন মারা গেছেন এ রোগে।
Advertisement
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বলছে, চীনে করোনাভাইরাসে এক লাখ দুই হাজারের অধিক লোক আক্রান্ত হয়েছেন- এমন সন্দেহে তাদের বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
তবে মহামারি করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা নিয়ে চীন সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে যে হিসাব দিয়েছে, প্রকৃতপক্ষে সে সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে মনে করা হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বোঝাতে চীনের কর্তৃত্ববাদী সরকার হাসপাতালে মৃতের কোনো রেকর্ড না রেখে তড়িঘড়ি করে মরদেহগুলো সৎকার করার কাজ করছে।
অন্যদিকে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)।
চীন থেকে করোনাভাইরাস এখন পর্যন্ত ২০টির মতো দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। সেগুলো হলো- থাইল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ভিয়েতনাম, হংকং, সিঙ্গাপুর, ভারত, মালয়েশিয়া, নেপাল, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানি, কম্বোডিয়া, শ্রীলঙ্কা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, তাইওয়ান ও ইসরায়েল।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এবং নিহতের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকায় বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনেক দেশ তাদের নাগরিকদের উহান থেকে সরিয়ে নিচ্ছে। একইসঙ্গে চীন সফর করেছে- এমন বিদেশি নাগরিকদের ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হচ্ছে। বাতিল করা হচ্ছে চীনের সঙ্গে সরাসরি সকল ফ্লাইট। এছাড়া চীনের সঙ্গে থাকা সীমান্তগুলোও বন্ধ করে দেশ সংশ্লিষ্ট দেশগুলো। নিজ নিজ দেশের নাগরিক ছাড়া অন্য কোনো দেশের নাগারিকদের ভ্রমণে বাধা দেয়া হচ্ছে।
২০০৩ সালে একই গোত্রের ভাইরাস সার্সের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় চীনে। সেই সময় সার্সে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা এবার ছাড়িয়ে গেছে প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস। চীন থেকে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্ব-অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
২০ জনের উচ্ছ্বাসের ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন
এইচএ/পিআর