সীমান্তঘেঁষা ভারতের পর এবার মিয়ানমারেও প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণে ভোগা সন্দেহভাজন একজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তবে তিনি মিয়ানমারের নন, চীনা নাগরিক। এই প্রথম দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহভাজন কোনো ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হলো।
Advertisement
সংবাদমাধ্যম মিয়ানমার টাইমস জানায়, গুয়াংজহু থেকে চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে করে ৬০ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি শুক্রবার সকালে ইয়াঙ্গুনে আসেন। বিমানের পাইলট বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে জানান যে, ওই ব্যক্তি জ্বরে আক্রান্ত।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্সের ওই বিমানে দুই মিয়ানমারের নাগরিক, সাত ক্রুসহ ৭৯ যাত্রী ছিলেন। সন্দেহভাজন আক্রান্ত ব্যক্তি ও মিয়ানমারের দুই নাগরিক বাদে একই বিমানে করে সাবইকে চীনে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, বিমানবন্দরে অবতরণের পর আক্রান্ত ব্যক্তিকে চিকিৎসার জন্য ইয়াঙ্গুনের ওয়াইবার্গি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংক্রামক ব্যাধির জন্য এটি একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল।
Advertisement
হাসপাতালের এক কর্মকর্তা জনান, ভুক্তভোগীকে বিশেষ একটি কক্ষে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে তার শরীরে করোনাভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ দেখা গেছে।
মরণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর মিয়ানমারের সরকার গত সপ্তাহ থেকে দেশটির বিমানবন্দরসহ স্থলবন্দরগুলোতে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থা জারি করে। ইতোমধ্যে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। তারা সবাই চীনা নাগরিক। এছাড়া বিশ্বের ১৯টির দেশে ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ১০ হাজার মানুষ। এর মধ্যে বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ছয়জন এবং নেপালে এ ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহভাজন একজনকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
দেশটির জনস্বাস্থ্য অধিদফতরের সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নির্মূল বিভাগের উপ-পরিচালক ডা. খিন খিন গাই বলেন, ‘মিয়ানমারে করোনভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম সন্দেহভাজন চীনা ওই নাগরিককে পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। অন্য কেউ যাতে আক্রান্ত না হন বা ভাইরাসটি অন্যত্র ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য তাকে বিচ্ছিন্ন একটি কক্ষে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।’
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানায়, একই বিমানে আসা দুই মিয়ানমারের নাগরিকেরও স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। তাদের শরীরে ভাইরাসের কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। ডা. খিন খিন গাই বলেন, ‘মিয়ানমারের ওই দুই নাগরিককেও একই হাসপাতালে আলাদাভাবে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে স্বাস্থ্য ও ভ্রমণ বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য নেয়া হচ্ছে।’
Advertisement
তিনি আরও বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালটিতে পৃথক একটি ওয়ার্ড খোলার পরিকল্পনা আছে আমাদের।
চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে চীনের মূল ভূখন্ডে এখন পর্যন্ত ২১৩ জন মারা গেছেন। এছাড়া আক্রান্ত হয়েছেন আরও প্রায় ১০ হাজার। যাদের বেশিরভাগে হুবেই প্রদেশের বাসিন্দা। এছাড়া চীনের বাইরে মোট ৯৮ জন এখন ভাইরাসটিতে আক্রান্ত।
মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া চীনের প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ‘বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা’ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বৃহস্পতিবার জেনেভায় এক জরুরি বৈঠক শেষে এ ঘোষণা দেয় সংস্থাটি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভাইরাসটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার কারণে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে। কিন্তু আতঙ্কিত না হয়ে মানুষের উচিত দ্রুত সতর্ক হওয়া। বিশেষজ্ঞরা প্রাত্যহিক কাজগুলো গুরুত্বের সঙ্গে পালন করতে বলছেন। যেমন- খাওয়ার আগে ভালোভাবে হাত ধুয়া, মাস্ক ব্যবহার করা, গণপরিবহন এড়িয়ে চলা- এসব পদক্ষেপ নিলে করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে অনেকটা দূরে থাকা সম্ভব।
এমএআর/আরএস