আন্তর্জাতিক

করোনাভাইরাস: উহানের রাস্তায় মরে পড়ে থাকলেও কাছে যাচ্ছে না কেউ

করোনাভাইরাস সংক্রমণের কেন্দ্রস্থল চীনের উহান যেন ভুতুড়ে শহরে পরিণত হয়েছে। রাস্তাঘাটে লোকজন নেই, দোকানপাট বন্ধ- ঠিক যেন অঘোষিত কারফিউ জারি হয়েছে সেখানে। ভাইরাস আতঙ্ক মানুষকে এতটাই ভীত করে তুলেছে যে রাস্তায় মানুষ মরে পড়ে থাকলেও কাছে যেতে সাহস করছে না কেউই। সম্প্রতি এমনই হৃদয়বিদারক দৃশ্য ধরা পড়েছে বার্তা সংস্থা এএফপির এক সাংবাদিকের ক্যামেরায়।

Advertisement

উহানে এক কোটি ১০ লাখ মানুষের বসবাস হলেও করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর শহরের চিত্র বদলে গেছে। গত বৃহস্পতিবার সকালে রাস্তার পাশে ফার্নিচারের দোকানের সামনে একটি মরদেহ চিৎ হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। ধূসর চুলের ওই ব্যক্তির এক হাতে ব্যাগ ও মুখে মাস্ক পরা ছিল।

উহান নাম্বার সিক্স হাসপাতাল থেকে সামান্য দূরত্বে হলেও দীর্ঘক্ষণ পড়েছিল মরদেহটি। এ সময়ের মধ্যে অন্তত ১৫টি অ্যাম্বুলেন্স ও বেশ কিছু পথচারী পাশ দিয়ে গেলেও কেউই মৃত ব্যক্তির কাছে যাননি। অবশেষে প্রায় দুই ঘণ্টা পর একটি অ্যাম্বুলেন্সে কয়েকজন স্বাস্থ্যকর্মী এসে মরদেহটি তুলে নেন। অ্যাম্বুলেন্সটি যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থল জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করেন পুরো শরীরে প্রোটেকটিভ স্যুট পরা কর্মীরা। এরপর কার্ডবোর্ড দিয়ে জায়গাটি ঢেকে দেয় পুলিশ।

মৃত ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত হওয়া না গেলেও ধারণা করা হচ্ছে তার বয়স প্রায় ৬০। তিনি কীভাবে মারা গেছেন সেটাও নিশ্চিত নয়। তবে ওই ব্যক্তি প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণেই মারা গেছেন বলে মনে করছেন প্রত্যক্ষদর্শী এক নারী। তিনি বলেন, ‘এটা ভয়াবহ ব্যাপার। আজকাল অনেক লোক মারা যাচ্ছে।’

Advertisement

গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহানে প্রথমবারের মতো নতুন করোনাভাইরাসটি ধরা পড়ে। সেখান থেকে এটি রাজধানী বেইজিংসহ অন্যান্য প্রদেশেও ছড়িয়ে পড়ে। এখন পর্যন্ত চীন, থাইল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ভিয়েতনাম, হংকং, সিঙ্গাপুর, ভারত, মালয়েশিয়া, নেপাল, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানি, কম্বোডিয়া, শ্রীলঙ্কা, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং তাইওয়ানে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ২১৩ জন, আরও আক্রান্ত অন্তত ৯ হাজার ৬৯২ জন। তবে চীন মৃতের প্রকৃত সংখ্যা অনেক কম দেখাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা ধামাচাপা দিয়ে তারা ভুল তথ্য দিচ্ছে বলে দাবি করেছে বেশ কিছু গণমাধ্যম।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নতুন ভাইরাসটির নাম দিয়েছে ২০১৯ নভেল করোনাভাইরাস। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে চীন সফর করেছেন এমন লোকজনের মাধ্যমেই এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। সে কারণে অনেক দেশই করোনাভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে চীন সফরে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ভাইরাস সংক্রমণের কারণে বৃহস্পতিবার বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

এছাড়া, করোনাভাইরাস সংক্রমণের কেন্দ্রবিন্দু উহানসহ অন্তত ১৮টি শহরে যান চলাচল নিষিদ্ধ করেছে চীনা কর্তৃপক্ষ। সংক্রমণ এড়াতে চীনগামী ফ্লাইট বাতিল করেছে বেশিরভাগ বিমানসংস্থা। শহরগুলোতে আটতে পড়া নিজ দেশের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে বিশেষ বিমান পাঠাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেনসহ বেশ কিছু দেশ।

Advertisement

তবে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন উহানের স্থানীয়রা। দোকানপাট, বাজার, বিমানবন্দর বন্ধ হওয়ায় কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন তারা। মিলছে না পর্যাপ্ত চিকিৎসাও। এএফপির সাংবাদিকরা উহানের হাসপাতালগুলোতে খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, অনেকেই দিনের পর দিন অপেক্ষা করেও চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাননি। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে বলে অনেকেই বাড়ি থেকে চেয়ার নিয়ে এসেছেন।

সূত্র: এএফপি, বিবিসি, দ্য সান

কেএএ/পিআর