শীতের মধ্যেও ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে ইলিশ। অথচ মনে করা হতো যে, বর্ষা হলো ইলিশের ভরা মৌসুম। শুধু বর্ষা মৌসুমেই ধরা পড়বে ইলিশ।
Advertisement
বরিশাল অঞ্চলের জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৮-১০ দিন থেকে উপকূল এলাকা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর ও মেঘনা নদীতে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। বেশিরভাগ ইলিশের ওজন প্রায় এক কেজি। শীত মৌসুমে মেঘনায় এত ইলিশ ধরা পড়ার নজির নেই।
বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ইলিশের প্রজনন মৌসুমে মা মাছ ধরা বন্ধ থাকায় সাগর ও নদীতে মাছের উৎপাদন বেড়েছে। ফলে শীত মৌসুমেও প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে।
দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় ইলিশের মোকাম বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় অবস্থিত বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রেও এক সপ্তাহে ইলিশের আমদানি বেড়েছে। সেখানে গত ১০-১২ দিন ধরে গড়ে প্রতিদিন ২০০ মণ ইলিশ আমদানি হচ্ছে বলে জানা গেছে।
Advertisement
অন্যদিকে, পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার আলিপুর-মহিপুর বেসরকারি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রেও ইলিশ সরবারহ বেড়েছে। এখানে প্রতিদিন ২০০-২৫০ মণ ইলিশ আমদানি হচ্ছে।
মৎস্য অধিদফতর বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আজিজুল হক জানান, সরকার ও মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পিত একাধিক উদ্যোগে গত কয়েক বছরে ইলিশ উৎপাদন বেড়েছে। মা-ইলিশ সংরক্ষণ ও জাটকা রক্ষা কার্যক্রম বিভিন্ন বাহিনীর সহায়তায় কঠোরভাবে পরিচালিত হচ্ছে। জেলেদের মধ্যেও সচেতনতা বেড়েছে। নিষেধাজ্ঞার মধ্যে মাছ শিকারি জেলেদের সংখ্যা দিনে দিনে কমছে। ফলে শীতের মৌসুমেও বড় বা মাঝারি আকারের ইলিশ ধরা পড়ছে। কার্যক্রমগুলো এভাবে চললে সামনে ইলিশের উৎপাদন আরও বাড়বে।
লক্ষ্মীপুরের মৎস্য কার্যালয় বলছে, ২০১৯ সালে এ সময়ে সপ্তাহে বড়জোর ৫০-৬০ মেট্রিক টন মাছ ধরা পড়েছিল। অথচ গত এক সপ্তাহে লক্ষ্মীপুর জেলায় মেঘনা নদীতে ধরা পড়ে প্রায় ৪০০ মেট্রিক টন ইলিশ।
লক্ষ্মীপুরের জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘এটা খুবই অস্বাভাবিক ঘটনা। গত ১৫-২০ বছরেও এমন ঘটনা দেখিনি। মনে হচ্ছে এটা ইলিশের নতুন মৌসুম হতে পারে, কিন্তু আমরা চাই বারো মাসই মৌসুম চলুক।’
Advertisement
তিনি আরও বলেন, যে ইলিশ এখন পাওয়া যাচ্ছে এগুলো মূলতঃ সাগর থেকে নদীর মোহনায় ইলিশ। এই সময়টাতে ইলিশ সাধারণত ডিম ছাড়ে না। কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইলিশের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায়, তারা অনেকটাই আগের জীবনচক্রে ফেরত গেছে। এর মানে হচ্ছে, আগে ইলিশ কমবেশি বারো মাসই ডিম ছাড়ত, কিন্তু সেই জীবনচক্র অনেকটা হারিয়ে যায়। যা ইদানীং আবার ফেরত আসছে।
মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ইলিশ বিষয়ক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আনিসুর রহমান বলছেন, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে ইলিশের পরিমাণ অনেক বেড়েছে, সেটা একটা কারণ।
‘ইলিশ রক্ষায় আগে কেবল জাটকা ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকতো, কিন্তু গত মৌসুমে জাটকা ইলিশের সঙ্গে মা ইলিশ ধরার ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হচ্ছে। ফলে এখন ইলিশ তার জীবনচক্র পূর্ণ করতে পারছে। এর ফলে শীতেও ইলিশের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
এএইচ/এমএস