মতামত

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশে

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশে ক্রমেই যে উগ্রবাদ জায়গা করে নিচ্ছে। মতাদর্শগত কারণেও হত্যার মতো বর্বরোচিত ঘটনা ঘটছে। শঙ্কার বিষয় হচ্ছে অপরাধীরা অবাধে তাদের কর্মকাণ্ড করে যেতে পারছে। একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে চললেও ধরা পড়ছে না পুলিশের জালে। এরফলে মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে নিরাপত্তাহীনতার বোধ। উগ্রবাদীদের টার্গেট থেকে  ব্লগার হতে মসজিদের ইমাম- বাদ যাচ্ছে না কেউ। প্রশ্ন উঠেছে এভাবে আর কতোদিন?সর্বশেষ টার্গেট বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সাবেক চেয়ারম্যান খিজির খানকে গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। সোমবার রাত ৯টায় মধ্যবাড্ডার জ-১০/১ নং বাড়ি থেকে তার গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে বাড্ডা থানা পুলিশ। খিজির খানের হাত-পা মুখ বেঁধে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলায় কোপ দিয়ে হত্যা করা হয়। একইভাবে ২০১৪ সালের ২৭ আগস্টে হত্যা করা হয় টেলিভিশনের ইসলামী অনুষ্ঠানের উপস্থাপক মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকীকে। ওই একই কায়দায় হাত-পা বেঁধে পরিবারের সামনে জবাই করে হত্যা করা হয় তাকেও। এরআগে  একই কায়দায় ২০১৩ সালের ২১ ডিসেম্বর রাতে রাজধানীর গোপীবাগে কথিত পীর লুৎফর রহমানসহ ৬ জনকে হত্যা করা হয়।  এসব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কে বা কারা জড়িত পুলিশ এখনো সুনির্দিষ্ট করে তা বের করতে পারেনি। তবে বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা ধর্মীয় উগ্রবাদিরাই এসব হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা।  বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক  চেয়ারম্যান রহমতিয়া খানকা শরিফ পরিচালনা করতেন। তার বেশকিছু মুরিদ-ভক্তও ছিল। প্রাথমিকভাবে এই হত্যাকাণ্ডের মোটিভ ‘ধর্মীয় মতাদর্শগত’ বলে ধারণা করলেও এবিষয়ে পুলিশ স্পষ্ট করে কিছু বলছে না। ফারুকী হত্যা মামলার ঘটনায়ও  হত্যার কারণ হিসেবে ‘ধর্মীয় মতাদর্শগত পার্থক্যের কথা বলেছিলেন তদন্ত কর্মকর্তারা।’ গোপীবাগের ছয় খুনের ব্যাপারেও ধর্মীয় মতাদর্শজনিত বিরোধের কথা বলা হচ্ছে। কথা হচ্ছে, ধর্মীয় মত বিরোধ হোক আর যাই হোক না কেন খুনিরা নির্বিঘ্নে একের পর এক এ ধরনের হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাবে অথচ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের ধরতে পারবে না, কারণ খুঁজে বের করতে পারবে না- এটা কোনো কাজের কথা হতে পারে না। খুনিরা ধরাছোয়ার বাইরে থাকা মানে এক ধরনের প্রশ্রয় পাওয়া। আর এতেই আরও হত্যার পথ প্রশস্ত হয়।  এ কারণে শুধু ‘ধর্মীয় মতাদর্শগত বিষয়’ কিংবা ‘উগ্রবাদীদের’ ওপর দোষ চাপিয়ে পার পাওয়া যাবে না। খুনি যে বা যারাই হোক না কেন তাদের ধরতে হবে। যদি একটি ঘটনার অপরাধীরা ধরা পড়ে এবং বিচার হয় তাহলেই কিন্তু আরেকটি অপরাধ করতে সাহস পাবে না দুর্বৃত্তচক্র। এ জন্যই পুলিশ, আইন-আদালত। যে কোনো নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করা সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব। সে দায়িত্ব পালনে কোনো অবহেলা কিংবা অক্ষমতা দেখানোর কোনো সুযোগ নেই। সমাজ থেকে ধর্মীয় উগ্রবাদের শেকড় চিরতরে উপড়ে ফেলতে হলে এদের আইনের আওতায় আনা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই। এইচআর/এমএস

Advertisement