আন্তর্জাতিক

নতুন আতঙ্ক ছড়াচ্ছে করোনাভাইরাস?

বিশ্বজুড়ে এখন এক আতঙ্কের নাম করোনাভাইরাস। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। সে কারণে প্রতিরোধের মাধ্যমেই এই রোগ থেকে বেঁচে থাকার পথ খুঁজছে মানুষ। কিন্তু এর মধ্যেই নতুন করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে এই ভাইরাস।

Advertisement

সম্প্রতি চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে ১০ বছর বয়সী এক শিশুর শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে। তবে সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে তার শরীরে এই ভাইরাসের কোনো লক্ষণই দেখা যায়নি। ফলে নতুন করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে যে, লক্ষণ বোঝা না যাওয়ায় এই ভাইরাস নীরবেই ছড়িয়ে পড়তে পারে।

আক্রান্ত ব্যক্তির সামান্য হাঁচি, কাশি, কফের মাধ্যমে সহজেই ছড়িয়ে পড়ছে এই ভাইরাস। কিন্তু কারো শরীরে যদি এ ধরনের কোনো লক্ষণ না থাকে তারপরেও সে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। সম্প্রতি আক্রান্ত শিশুটির ক্ষেত্রে এমন ঘটনাই লক্ষ করা যাচ্ছে।

নববর্ষ উপলক্ষে পরিবারের সঙ্গে চীনের কেন্দ্রীয় শহরে ঘুরতে গিয়েছিল ওই শিশুটি। নিজেদের শহরে ফিরে আসার পর অসুস্থতা দেখা দেওয়ায় তার বাবা-মা এবং দাদা-দাদীকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে ১০ বছরের ওই শিশুটি সুস্থ ছিল।

Advertisement

কিন্তু তারপরেও তার বাবা-মা তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করায়। পরে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, কোনো ধরনের লক্ষণ ধরা না পড়লেও ওই শিশুটি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।

ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারোলিনার গিলিংস স্কুল অব গ্লোবাল পাবলিক হেলথের মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড ইমিউনোলজির অধ্যাপক রালফ বারিক বলেন, আপনার শরীরে হয়তো এই ভাইরাসের সাধারণ লক্ষণ থাকতে পারে যা একটি সম্প্রদায়ে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটাতে পারে। তবে অনেকেরই শরীর ততটা খারাপ না লাগায় তারা হাসপাতালে যান না। ফলে নীরবেই এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে।

অধ্যাপক রালফ বারিক কয়েক দশক ধরে করোনাভাইরাস নিয়ে গবেষণা করছেন। ২০০৩ সালে সার্সের প্রাদুর্ভাবের আগেও সতর্ক করেছিলেন তিনি।

গত ২৪ জানুয়ারি ল্যানচেট মেডিকেল জার্নালে ১০ বছরের ওই শিশুর করোনাভাইরাসে আক্রান্তের বিষয়টি প্রকাশিত হয়। এমন আরও একটি ঘটনা ঘটেছে চীনের বাইরে। সম্প্রতি জার্মানিতে চারজন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।

Advertisement

কোম্পানির একটি ট্রেনিংয়ে অংশ নিয়েছিলেন তারা। সেখানে চীন থেকে আসা তাদের এক সহকর্মীও যোগ দিয়েছিলেন। তিনি যখন সেখানে ছিলেন তখন তার মধ্যে এই ভাইরাসের কোনো লক্ষণই দেখা যায়নি। এমনকি তিনি সুস্থও ছিলেন।

তবে চাইনিজ সেন্টার ফর ডিজেজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের উপ-পরিচালক ফেং জিজিয়ান বলেন, শিশু এবং নবজাতকদের মধ্যে এ ধরনের ভাইরাসের লক্ষণ কম প্রকাশ পায় যেখানে বয়স্কদের ক্ষেত্রে এই লক্ষণ বেশি থাকে।

করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ কী?

এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে শুরুতে জ্বর ও শুষ্ক কাশি হতে পারে। এর সপ্তাহখানেক পর শ্বাসকষ্টও দেখা দেয়। অনেক সময় নিউমোনিয়াও হতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগীর অবস্থা বেশি খারাপ হওয়ায় তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা লাগে। তবে এসব লক্ষণ মূলত রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরই জানা গেছে।

সেক্ষেত্রে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার একদম প্রাথমিক লক্ষণ কী বা আদৌ তা বোঝা যায় কি-না তা এখনও অজানা। তবে নতুন এই করোনাভাইরাস যথেষ্ট বিপজ্জনক। সাধারণ ঠান্ডা-জ্বরের লক্ষণ থেকে এটি মৃত্যুর দুয়ার পর্যন্তও নিয়ে যেতে পারে।

গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়। এরপর থেকে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা। চীন ছাড়াও ১৯টি দেশের অন্তত ৯১ জন এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

এ পর্যন্ত চীন, থাইল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ভিয়েতনাম, হংকং, সিঙ্গাপুর, ভারত, মালয়েশিয়া, নেপাল, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানি, কম্বোডিয়া, শ্রীলঙ্কা, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং তাইওয়ানে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া ইসরায়েলেও এক রোগীর শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নতুন এ ভাইরাসের নাম দিয়েছে ২০১৯ নভেল করোনাভাইরাস। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে চীনে সফর করেছেন এমন লোকজনের মাধ্যমেই এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। সে কারণে অনেক দেশই এ ভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে চীন সফরে নাগরিকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

টিটিএন/জেআইএম