বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেড়েই চলেছে। এতে এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭০ জনে। মাত্র একদিনেই মারা গেছে ৩৮ জন। এর মধ্যে শুধু উহান শহরেই অসুস্থ হয়ে মারা গেছে ১৬২ জন এবং আক্রান্ত হয়েছে অন্তত সাড়ে চার হাজার। চীনে সরকারি হিসাব অনুযায়ী, দেশটিতে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বর্তমানে ৭ হাজার ৭শ ১১ জন।
Advertisement
এ পরিস্থিতিতে অবরুদ্ধ উহান থেকে নিজ দেশের নাগরিকদের সরিয়ে নিতে শুরু করেছে বিভিন্ন দেশ। গত বুধবার ২শ নাগরিককে বিশেষ ফ্লাইটে ফিরিয়ে নিয়েছে জাপান। বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় ফ্লাইটে দেশে ফিরেছেন আরও নয়জন। আগ্রহী নাগরিকদের দেশে ফেরাতে অন্তত আরও একটি বিশেষ বিমান পাঠানো হবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে জাপানি সংবাদমাধ্যম এনএইচকে জানিয়েছে, প্রথম ফ্লাইটে দেশে ফেরাদের মধ্যে অন্তত তিনজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। যদিও তাদের দু’জনের শরীরে কোনো ধরনের উপসর্গ ছিল না। এছাড়া, দ্বিতীয় ফ্লাইটে ফেরা নয়জনই জ্বর-কাশির মতো অসুস্থতায় ভুগছেন।
চীন ফেরত সবাইকেই হাসপাতালের বিশেষ ওয়ার্ডে রেখে পরীক্ষা করা হচ্ছে। এগুলোর ফলাফল না আসা পর্যন্ত তাদের বাইরে বের না হওয়ার নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে।
Advertisement
জাপান ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রও তাদের ২শ নাগরিককে ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্রস্থল উহান থেকে সরিয়ে নিয়েছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, দেশে ফিরলেও তাদের অন্তত দু'সপ্তাহ বিমানবন্দরের হ্যাঙ্গারে তৈরি করা বিশেষ ব্যবস্থায় থাকতে হবে। ফ্রান্স, ব্রিটেন, কানাডাও তাদের নাগরিকদের দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করেছে।
চীন থেকে ফেরানো ৬শ নাগরিককে মূল ভূখণ্ডে নেয়ার আগে সতর্কতা হিসেবে দু'সপ্তাহের জন্য ক্রিসমাস আইল্যান্ডে রাখার ঘোষণা দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন এই ঘোষণা দেয়ার পরপরই শুরু হয়েছে ব্যাপক সমালোচনা।
কারণ, ওই দ্বীপটি অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বন্দিশিবির হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার দূরে। সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। এক হাজার মানুষের জন্য তৈরি হলেও ওই শিবিরটিতে বর্তমানে চার সদস্যের একটি শ্রীলংকান পরিবার রয়েছে।
এছাড়া, চীন থেকে নিজেদের ৫৩ নাগরিককে ফিরিয়ে নিতে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে একযোগে কাজ করার কথা জানিয়েছে নিউজিল্যান্ড। চলতি সপ্তাহেই চারটি ফ্লাইটে নিজেদের ৭শ নাগরিককে ফিরিয়ে নেবে দক্ষিণ কোরিয়া। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, করোনাভাইরাস আক্রান্ত নাগরিকদের চিকিৎসার সব খরচই সরকার বহন করবে।
Advertisement
গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়। এরপর থেকে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা। চীন ছাড়াও ১৯টি দেশের অন্তত ৯১ জন এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এ পর্যন্ত চীন, থাইল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ভিয়েতনাম, হংকং, সিঙ্গাপুর, ভারত, মালয়েশিয়া, নেপাল, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানি, কম্বোডিয়া, শ্রীলঙ্কা, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং তাইওয়ানে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া ইসরায়েলেও এক রোগীর শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নতুন এ ভাইরাসের নাম দিয়েছে ২০১৯ নভেল করোনাভাইরাস। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে চীনে সফর করেছেন এমন লোকজনের মাধ্যমেই এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। সে কারণে অনেক দেশই এ ভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে চীন সফরে নাগরিকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
এদিকে, প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে গবেষণাগারে করোনাভাইরাস তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। একে করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কারের পথে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন তারা।
করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ কী?
এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে শুরুতে জ্বর ও শুষ্ক কাশি হতে পারে। এর সপ্তাহখানেক পর শ্বাসকষ্টও দেখা দেয়। অনেক সময় নিউমোনিয়াও হতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগীর অবস্থা বেশি খারাপ হওয়ায় তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা লাগে। তবে এসব লক্ষণ মূলত রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরই জানা গেছে।
সেক্ষেত্রে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার একদম প্রাথমিক লক্ষণ কী বা আদৌ তা বোঝা যায় কি-না তা এখনও অজানা। তবে নতুন এই করোনাভাইরাস যথেষ্ট বিপজ্জনক। সাধারণ ঠান্ডা-জ্বরের লক্ষণ থেকে এটি মৃত্যুর দুয়ার পর্যন্তও নিয়ে যেতে পারে।
টিটিএন/কেএএ/জেআইএম