আন্তর্জাতিক

করোনাভাইরাস আতঙ্ক : আমিরাতে ১৭৩ টাকার মাস্কের দাম ১৪ হাজার

করোনাভাইরাস আতঙ্কে বিশ্বজুড়ে হু হু করে বাড়ছে মাস্ক, স্যানিটাইজার ও ওষুধ বিক্রি। চীনে মাস্কের ঘাটতি দেখা দিয়েছে অনেক আগেই। এবার মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতও পড়েছে একই সংকটে। বুধবার আমিরাতে প্রথমবারের মতো প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির খবর প্রকাশিত হওয়ার পর দুবাইসহ দেশটির বেশিরভাগ শহরের ফার্মেসিগুলোতে মাস্কের জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন মানুষ।

Advertisement

আমিরাতের স্থানীয় দৈনিক গালফ নিউজ বলছে, বুধবার খুব অল্প সময়ের মধ্যে ফার্মেসিগুলোর মাস্কের মজুত শেষ হয়ে গেছে। আর তার সুযোগ নিচ্ছে স্থানীয় অনলাইন বেচাকেনার সাইটগুলো। স্বাভাবিকভাবে দেশটিতে ভাইরাসপ্রতিরোধী উন্নতমানের একেকটি এন-৯৫ মাস্কের দাম ১৭৩ টাকা। কিন্তু চাহিদা বাড়ায় অনলাইন কেনাবেচার সাইটে এই মাস্কের একটি বিক্রি হচ্ছে প্রায় ১৪ হাজার টাকায়।

গালফ নিউজের পক্ষ থেকে একাধিক ফার্মেসিতে যোগাযোগ করা হলে তারা জানায়, মাস্ক সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে এন-৯৫ মাস্কের মজুত পুরোপুরি শেষ হয়ে গেছে।

পরিস্থিতির বর্ণনায় গালফ নিউজ বলছে, আমিরাতে এন-৯৫ মাস্কের ২০ পিসের একটি প্যাকেটের দাম সাধারণত ১৫০ থেকে ১৮০ দিরহাম (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩ হাজার ৪৬০ থেকে ৪ হাজার ১৫২ টাকা প্রায়)। কিন্তু ভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার পর অনলাইনে একেকটি মাস্কই বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ৫৯৯ দিরহামে (৩ হাজার ৪৬০ থেকে ১৩ হাজার ৮১৮ টাকা প্রায়)।

Advertisement

দেশটিতে মাস্ক সংকট এতটাই বেড়েছে যে গলাকাটা দাম রাখার পরও অনলাইন সাইটগুলো প্রতিবার এক বক্সের বেশি অর্ডার নিচ্ছে না। দুবাইয়ের অ্যাসটার ফার্মেসির এক কর্মকর্তা বলেন, গত দু’দিনে আমাদের সব ধরনের মাস্ক বিক্রি হয়ে গেছে। স্থানীয়দের বেশিরভাগই মাস্ক ও স্যানিটাইজার কিনতে আসছেন। হাসপাতালগুলো তাদের কর্মীদের জন্য বিপুল সংখ্যক মাস্ক জমা করে রেখেছে।

লাইফ ফার্মেসির এক বিক্রয়কর্মী জানান, তাদের কাছে কিছু সার্জিক্যাল মাস্ক থাকলেও উচ্চমানের এন-৯৫ মাস্ক শেষ হয়ে গেছে। চীনে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার জেরে গত কয়েকদিন থেকে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে মুখের মাস্ক। এনএমসি ফার্মেসির এক বিক্রয়কর্মীও নিশ্চিত করেছেন, তাদের কাছে সব ধরনের মাস্কেরই মজুত শেষ। তবে নতুন মাস্ক কবে আসবে, তা বলতে পারেননি তিনি। আরেক ফার্মাসিস্ট বলেন, আজ সকালে দেশে প্রথমবার করোনাভাইরাস রোগী পাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে আমরা আরও বেশি ক্রেতা পাচ্ছি।

গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়। এরপর থেকে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা। দেশটিতে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ১৩২ জন, আক্রান্ত প্রায় ছয় হাজার।

চীন ছাড়াও এখন পর্যন্ত থাইল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ভিয়েতনাম, হংকং, সিঙ্গাপুর, ভারত, মালয়েশিয়া, নেপাল, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানি, কম্বোডিয়া, শ্রীলঙ্কা এবং তাইওয়ানে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বুধবার এই তালিকায় নাম লিখিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতও। দেশটিতে চীনের উহান থেকে ফেরা একটি পরিবারের সদস্যদের শরীরে এই ভাইরাস পাওয়া গেছে। ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকায় চীন থেকে ইতোমধ্যে নিজ দেশের নাগরিকদের সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি দেশ।

Advertisement

চীনের বিভিন্ন শহরেও মাস্ক বিক্রি বৃদ্ধি পেয়েছে। এশিয়ার অন্য দেশগুলোতেও প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় মাস্ক বিক্রি বেড়েছে কয়েকগুণ। মুখের মাস্ক মূলত দুই ধরনের। একটি হচ্ছে সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক, যা চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচারের সময় ব্যবহার করেন। এটি মূলত তরলজাতীয় পদার্থ ছিটকে মুখে লাগা ঠেকাতে ব্যবহার করা হয়।

সার্জিক্যাল মাস্ক ভাইরাস প্রতিরোধে সবসময় কার্যকর নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে এন-৯৫ বেশ কার্যকর। এটি শরীরে বাতাস থেকে ভাইরাসের প্রবেশ প্রায় ৯৫ শতাংশ প্রতিরোধ করতে সক্ষম। কিন্তু এর জন্য অবশ্যই মাস্কটি ঠিকভাবে পরতে হবে।

কেএএ/এসআইএস/এমএস