প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাণকেন্দ্র চীনের মধ্যাঞ্চলের উহান শহর থেকে শত শত বিদেশি নাগরিককে সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু করেছে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এবং নিহতের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকায় যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি দেশ তাদের নাগরিকদের উহান থেকে সরিয়ে নিচ্ছে।
Advertisement
বুধবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ইতোমধ্যে চীন থেকে প্রায় ২০০ জাপানি নাগরিক বিমানে করে টোকিও পৌঁছেছেন। অস্ট্রেলিয়া চীন থেকে ফেরানো ৬০০ নাগরিককে মূল ভূখণ্ডে নেয়ার আগে সতর্কতা হিসেবে দুই সপ্তাহের জন্য ক্রিসমাস আইল্যান্ডে রাখতে চায়; যা মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন এই ঘোষণা দেয়ার পরপরই শুরু হয়েছে ব্যাপক সমালোচনা। কারণ, দ্বীপটি অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বন্দিশিবির হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সেখানকার অবস্থা খুবই খারাপ, এমনকি মানবাধিকার লঙ্ঘন হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। এক হাজার মানুষের জন্য তৈরি হলেও ওই শিবিরটিতে বর্তমানে চার সদস্যের একটি শ্রীলংকান পরিবার রয়েছে।
চীন থেকে নিজেদের ৫৩ নাগরিককে ফিরিয়ে নিতে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে একযোগে কাজ করার কথা জানিয়েছে নিউজিল্যান্ড। জাপানের ২০০ নাগরিক উহান থেকে ফিরলেও সেখানে দেশটির আরও ৬৫০ নাগরিক রয়েছেন যারা দেশে ফিরতে চান। এসব মানুষকে ফিরিয়ে নিতে আরও কয়েকটি ফ্লাইট চালুর পরিকল্পনা করছে জাপান সরকার।
Advertisement
জাপানি গণমাধ্যম বলছে, চীন ফেরত নাগরিকদের মধ্যে অনেকেই জ্বর ও কাশিতে ভুগছেন। তবে উপসর্গ দেখা না দিলেও তাদের সবাইকেই হাসপাতালে নিয়ে বিশেষ ওয়ার্ডে রেখে পরীক্ষা করা হচ্ছে। এগুলোর ফলাফল না আসা পর্যন্ত তাদের বাড়ি থেকে বের না হওয়ার নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে।
এদিকে, বুধবার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি কিছু সাধারণ নাগরিকও উহান ছেড়ে গেছেন। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, দেশে ফিরলেও তাদের অন্তত দুই সপ্তাহ বিমানবন্দরের হ্যাঙ্গারে বিশেষ ব্যবস্থায় থাকতে হবে। যুক্তরাজ্যও তাদের অন্তত ২০০ নাগরিককে দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করছে। যদিও কিছু ব্রিটিশ নাগরিকের অভিযোগ, তাদের দেশে ফেরাতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। এছাড়া, পৃথক দুটি বিমান ইউরোপের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়ার কথা রয়েছে, এরমধ্যে প্রথম ফ্লাইটে ২৫০ জন ফরাসি নাগরিক চীন ছাড়বেন। চলতি সপ্তাহেই চারটি ফ্লাইটে নিজেদের ৭০০ নাগরিককে ফিরিয়ে নেবে দক্ষিণ কোরিয়া। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, করোনাভাইরাস আক্রান্ত নাগরিকদের চিকিৎসার সব খরচই সরকার বহন করবে।
গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়। এরপর থেকে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা। চীন ছাড়াও ১৯টি দেশের অন্তত ৭৮ জন এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এ পর্যন্ত চীন, থাইল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ভিয়েতনাম, হংকং, সিঙ্গাপুর, ভারত, মালয়েশিয়া, নেপাল, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানি, কম্বোডিয়া, শ্রীলঙ্কা, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং তাইওয়ানে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া ইসরায়েলেও এক রোগীর শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
Advertisement
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নতুন এ ভাইরাসের নাম দিয়েছে ২০১৯ নভেল করোনাভাইরাস। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে চীনে সফর করেছেন এমন লোকজনের মাধ্যমেই এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। সে কারণে অনেক দেশই এ ভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে চীন সফরে নাগরিকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
এদিকে, প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে গবেষণাগারে করোনাভাইরাস তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। একে করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কারের পথে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন তারা।
করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ কী?
এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে শুরুতে জ্বর ও শুষ্ক কাশি হতে পারে। এর সপ্তাহখানেক পর শ্বাসকষ্টও দেখা দেয়। অনেক সময় নিউমোনিয়াও হতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগীর অবস্থা বেশি খারাপ হওয়ায় তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা লাগে। তবে এসব লক্ষণ মূলত রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরই জানা গেছে।
সেক্ষেত্রে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার একদম প্রাথমিক লক্ষণ কী বা আদৌ তা বোঝা যায় কি-না তা এখনও অজানা। তবে নতুন এই করোনাভাইরাস যথেষ্ট বিপজ্জনক। সাধারণ ঠান্ডা-জ্বরের লক্ষণ থেকে এটি মৃত্যুর দুয়ার পর্যন্তও নিয়ে যেতে পারে।
কেএএ/এমকেএইচ