পুলিশের সরঞ্জামাদি বিক্রির জন্য বিখ্যাত রাজধানীর পলওয়েল সুপার মার্কেট। সরঞ্জামাদি বিক্রিতে এখানকার দোকানগুলোকে অনুমতিও দিয়েছে পুলিশ হেড কোয়ার্টার্স। আইডি কার্ড দেখিয়ে দোকানগুলো থেকে কেনাকাটা করতে পারার কথা শুধুমাত্র পুলিশ সদস্যদেরই। তবে অপরাধীরা দোকানিদের অতি মুনাফার লোভ দেখিয়ে এগুলো কিনে নানা অপরাধ সংগঠিত করছে। ন্যূনতম পরিচয় থাকলেই অপরাধীদের কাছে অবৈধভাবেই সরঞ্জামগুলো বিক্রি করছেন তারা।সরেজমিন সুপারমার্কেটিতে গিয়ে এচিত্র দেখা গেছে। পুলিশের পোশাক ও সরঞ্জাম সরবরাহের দায়িত্ব হেড কোয়ার্টার্সের লজিস্টিক বিভাগের। বিভাগটিই পলওয়েলের দোকানগুলোকে সরঞ্জাম বিক্রির অনুমোদন দেয়। তবে তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে দোকানিরা অপরাধীদের কাছে নিয়মিত বিক্রি করছে সরঞ্জামগুলো। যে কেউ গেলেই অবশ্য কিনতে পারবে না। এজন্য দোকানিদের সঙ্গে গভীর পরিচিতি থাকতে হবে। মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) সুত্র জানায়, এ বছর প্রায় শতাধিক ভুয়া ডিবি, পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনী সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে গোয়েন্দা পুলিশের হ্যান্ডকাফ, পোশাক, ওয়াকিটকিসহ অন্যান্য সরঞ্জাম। এসব সরঞ্জামাদি পলওয়েল সুপার মার্কেট থেকে কিনেছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে আসামিরা। ভুয়া ডিবি গ্রেফতারের পর সংবাদ সম্মেলন করে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম পলওয়েলের এসব দোকানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া ও অভিযান পরিচালনার কথা বলেছিলেন। তবে বাস্তবে চিত্রটা ভিন্ন। সরেজমিন দেখা গেল, পুলিশ ভাণ্ডার নামের একটি দোকান থেকে পুলিশের এএসআইয়ের ব্যাজ কিনলেন এক ক্রেতা। তার কাছে আইডি চায়নি ওই দোকানি। এমন আরো দুই দোকানির কাছে একইভাবে ক্যাপ ও ব্যাজ বিক্রি করার চিত্র দেখা গেল। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেন ওই দোকানের বিক্রয় কর্মকর্তা জালাল উদ্দিন। তিনি বলেন, আমরা এখন অনেক যাচাই বাছাই করে সরঞ্জাম বিক্রি করি। ভুয়া পুলিশের কাছে বিক্রির কোনো প্রশ্নই উঠে না। পরিচিতির বিষয়টিও সত্য নয়। পলওয়েলের দোকানগুলোতে ১ হাজার থেকে ১৫শ” টাকায় হ্যান্ডকাফ, ১ থেকে ২ হাজার টাকায় পুলিশের শার্ট ও প্যান্ট, ১৫০০ টাকায় বুট আর ২০ থেকে ৫০ টাকায় সবধরনের ব্যাজ বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি নেম ট্যাগ, হ্যান্ডকাফ রাখার খাপ, বেল্ট ক্যাপসহ পুলিশের যাবতীয় ব্যবহারসামগ্রী সাশ্রয়ী মূল্যে বিক্রি হচ্ছে এখানে।পুলিশ সদর দফতর জানায়, ২০১৫ সাল পর্যন্ত সারা দেশে ১০৩টি দোকানে পুলিশের সরঞ্জাম বিক্রির জন্য অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় রয়েছে ৪৯টি দোকান।তবে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকায় এসব বিক্রির দোকান ৬০টির বেশি। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি অভিযানে ভুয়া ডিবি-পুলিশ আটক হওয়ায় হাতকড়া, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, হেলমেট ও স্প্রিং ছড়ি বিক্রি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার হয়। তবে এরপরও দোকানগুলোতে এসব বিক্রি করতে দেখা গেছে।গাজীপুর পুলিশ স্টোরের বিক্রয় কর্মকর্তা সাজু জানান, আমরা আইডি কার্ড দেখেই বিক্রি করি। তবে আইডি কার্ড ভুয়া নাকি আসল সেটা যাচাই করার কোন উপায় আমাদের জানা নেই।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক বিক্রয় কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানান, অনেক সময় পুলিশের রেফারেন্সে অপরিচিতদের কাছে বিক্রি করেন তারা ।এবিষয়ে পুলিশের পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোরশেদ আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘পলওয়েলের দোকানগুলোর আইডি দেখে শুধুমাত্র পুলিশ সদস্যদের কাছে সরঞ্জাম বিক্রি করতে পারবে। বাইরের কেউ যাতে এগুলো না কিনতে পারে তাই দোকানগুলোর উপর নিয়মিত নজরদারি করা হয়।’ তবে এবিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মুনতাসিরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘এগুলো অনুমোদন ও নজরদারির সম্পূর্ণ দায়িত্ব পুলিশ হেড কোয়ার্টার্সের লজিস্টিক বিভাগের।’ এআর/এসকেডি/আরআইপি
Advertisement