করোনাভাইরাসে ভয়াবহ সংকট তৈরি হয়েছে চীনের উহান শহরে। লোকজন বাইরে বের হতে পারছে না, যানবাহন চলছে না, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও হাতের নাগালে পাওয়া যাচ্ছে না। সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছেন যারা উহান শহরে ঘুরতে গেছেন। অনেকেই সেখানে আটকা পড়েছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তারা ওই শহরও ছাড়তে পারছেন না।
Advertisement
চীনের একটি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী বাদেফাক কাওসেলা। তিনি থাইল্যান্ডের নাগরিক। উহান শহরের একটি অ্যাপার্টমেন্টে ভাড়া থাকেন তিনি। সম্প্রতি সাহস করে অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়েছিলেন এই থাই শিক্ষার্থী। মুখে মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, মাথায় টুপি এবং এক গাদা কাপড় পরে বাইরে বের হন বাদেফাক। করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতেই এতো রকম ব্যবস্থা নিয়ে বেরিয়েছেন।
সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বাড়ছেই। এখন পর্যন্ত ১০৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন করে এক হাজার ৩শ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। ফলে এখন পর্যন্ত চার হাজার ১৯৩ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
চীনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশই হুবেই প্রদেশের বাসিন্দা। মূলত চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে গত বছরের ডিসেম্বরে প্রথম এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া, নেপাল, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, ফ্রান্স এবং যুক্তরাষ্ট্রেও লোকজন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে।
Advertisement
হুবেই প্রদেশের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সেখানে ২৪ জনের বেশি মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। সোমবার পর্যন্ত সেখানে এক হাজার ২৯১ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।
উহানের টোংগজি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী বাদেফাক (২৩) বলেন, আপনি যেখানেই যাবেন, যে কাউকে স্পর্শ করার আগে আপনাকে নিজের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। অথবা কেউ হাঁচি, কাশি দিলে বা শ্বাস নিলে্ও আপনাকে দূরত্ব বজায় রাখার কথা সব সময় মাথায় রাখতে হবে।
তিনি আরও জানিয়েছেন, শহরে দুধ, ডিমের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের সংকট বেড়ে গেছে। এক কোটি ১০ লাখ মানুষের বসবাস ওই শহরে। করোনাভাইরাসের প্রকোপ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় অনেক কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না।
রয়টার্সকে তিনি বলেন, এখানে সবকিছুই অপ্রতুল। সবাই সবকিছু মজুত করতে চাচ্ছে, কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, রাস্তায় কোনো গাড়ি চলছে না। অনেকেই নিজেদের গাড়ি নিয়ে বের হলেও তারা সবাই ফার্মেসি বা হাসপাতালে দৌড়াচ্ছেন।
Advertisement
এই মুহূর্তে বাদেফাক বাড়ি ফিরতে চাইছেন। কিন্তু থাইল্যান্ডে ফিরতে হলে তাকে কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। এক্ষেত্রে ঠিক কত সময় লাগবে সে বিষয়টি এখনও নিশ্চিত নয়।
ইতোমধ্যে থাই সরকার একটি সামরিক বিমান প্রস্তুত করে রেখেছে। যে কোনো সময় নিজ দেশের নাগরিকদের ওই বিমানে করে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। তবে প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান ওচা সোমবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, বিমান পাঠিয়ে লোকজনকে দেশে আনার বিষয়ে তারা এখনও বেইজিংয়ের অনুমতি পাননি।
এই ভাইরাস যেন ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য গত সপ্তাহে বেশিরভাগ বাণিজ্যিক বিমানের ফ্লাইট বাতিল করা হয়। প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ বলেন, চীনা কর্তৃপক্ষ বলছে, এই মুহূর্তে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সে কারণে আমরা একটি পরিকল্পনা করেছি। সময় হলেই আমরা বিমান পাঠানোর অনুমতি নেব।
থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, উহানে ৬৪ জন থাই নাগরিক রয়েছেন। বাদেফাক বলছেন থাই দূতাবাস তাকে জানিয়েছে, হুবেই প্রদেশের উহান এবং অন্যান্য শহরে ১১৮ জন থাই নাগরিক রয়েছেন।
এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থা নিতে না পারায় দেশে এবং দেশের বাইরে ব্যাপক সমালোচনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে থাই সরকারকে। অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে অভিযোগ করেছেন যে, সরকার এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
থাইল্যান্ডে এখন পর্যন্ত আটজন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে সাতজনই চীনা পর্যটক। তারা উহান থেকে থাইল্যান্ড ভ্রমণে গিয়েছিলেন। অপর একজন থাই নারী যিনি সম্প্রতি উহান থেকে ঘুরে এসেছেন। সোমবার এক বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ বলেছেন, উহানে থাকা বেশিরভাগ থাই নাগরিক সেখানেই অবস্থান করতে চাচ্ছেন।
কিন্তু বাদেফাকের দাবি ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষই বাড়ি ফিরতে চাচ্ছেন। তিনি বলেন, সবাই জানে এখানে থাকাটা নিরাপদ নয়। তিনি বলেন, আমি এখন যেভাবে আছি তা মোটেও ভালো নয়। এই শহরটা একটা ভুতুড়ে শহরে পরিণত হয়েছে।
টিটিএন/পিআর