স্বাস্থ্য

সামান্য অসতর্কতা ডেকে আনতে পারে মহাবিপদ

সামান্য অসতর্কতা ডেকে আনতে পারে মহাবিপদ

নভেল করোনাভাইরাসে কেউ আক্রান্ত হলে তার শরীরে জ্বর, সর্দি ও কাশির উপসর্গ তাৎক্ষণিকভাবে না-ও দেখা দিতে পারে। সাধারণত আক্রান্ত হওয়ার ২ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে উপসর্গ দেখা দিতে পারে। সুতরাং নভেল করোনাভাইরাস দ্রুত শনাক্তকরণ, আক্রান্ত রোগীকে রেখে সুচিকিৎসা নিশ্চিত ও সংক্রমণ প্রতিরোধে এ ১৪ দিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ সময়ে সামান্য অসতর্কতা মহাবিপদ ডেকে আনতে পারে। মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকায় তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ কারণে নিকট অতীতে চীন ভ্রমণ করেছেন এবং জ্বর, সর্দি ও কাশি রয়েছে, এমন দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ১৪ দিন নিয়মতান্ত্রিকভাবে পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে।

Advertisement

এমন অভিমত স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহমুদুর রহমানের। সম্প্রতি চীনের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বাংলাদেশের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে খ্যাতনামা এ রোগতত্ত্ববিদ তার পরামর্শ-মতামত দেন।

ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, বিমানবন্দরসহ অন্যান্য বন্দরে (স্থল ও নৌ) চীন থেকে আগত দেশি-বিদেশি পর্যটকদের থার্মাল স্ক্যানার মেশিনে পরীক্ষা, স্বাস্থ্য কার্ড প্রদান ও তার সম্পর্কে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে ১৪ দিন জোরদার সার্ভিলেন্স (পর্যবেক্ষণ) নিশ্চিত করতে হবে। কেবল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ওপর নির্ভর না করে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে স্বপ্রণোদিত হয়ে টেলিফোন কিংবা মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে নিয়মিত ফলোআপ করতে হবে।

রাজধানীসহ সারাদেশে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও আইইডিসিআরের মাধ্যমে ১৯টি ইনফ্লুয়েঞ্জা সেন্টার পরিচালিত হচ্ছে। সে বিষয়টি উল্লেখ করে ড. মাহমুদুর বলেন, এসব সেন্টারের মাধ্যমে জ্বর ও সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত রোগী, বিশেষ করে সম্প্রতি বা নিকট অতীতে চীন ভ্রমণের তথ্য রয়েছে- এমন রোগীকে তিনটি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার মাধ্যমে করোনাভাইরাসের শঙ্কা রয়েছে কি-না, তা জানা যেতে পারে। প্রশ্নগুলো হলো চীনের উহান থেকে এসেছে কি-না, পরিবারের কেউ গিয়েছিল কি-না কিংবা পাড়া-প্রতিবেশী কেউ গিয়েছিল কি-না? এমন তথ্য পাওয়া গেলে নমুনা হিসেবে রোগীর মুখের লালা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সত্যিকার অর্থেই সে আক্রান্ত কি-না, সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে।

Advertisement

‘করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে রোগীকে পৃথক (আইসোলেশন) ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসা দিতে হবে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে চার ক্যাটাগরির চিকিৎসক- বক্ষব্যাধি, মেডিসিন, শিশু ও আইসিইউ চিকিৎসকদের করোনাভাইরাস ও এর চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। চিকিৎসক ও নার্সসহ চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট সবার জন্য পার্সোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্টের (পিপিই) ব্যবস্থা করতে হবে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য ল্যাবরেটরি প্রস্তুত রাখতে হবে। আশার কথা হল করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বাংলাদেশ সরকার তথা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আগাম সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে।’- বলেন ড. মাহমুদুর রহমান।

এদিকে, করোনাভাইরাসের ঝুঁকি এড়াতে সর্বোচ্চ প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার (২৭ জানুয়ারি) মন্ত্রিসভার বৈঠকেও এ ভাইরাস প্রতিরোধে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাসের ঝুঁকি এড়াতে করণীয় বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাচ্ছে। এরই মধ্যে বিমানবন্দর, নৌ ও স্থলবন্দর দিয়ে বিদেশ থেকে আগতদের করোনাভাইরাস স্ক্রিনিং (শনাক্ত) কার্যক্রম নেয়া হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে বিমানবন্দরের কোয়ারেন্টাইন (আক্রান্তকে আলাদাকরণ) ওয়ার্ড। পাশাপাশি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালকে রেফারেল হাসপাতাল হিসেবে নির্দিষ্ট রেখে সেখানে সঙ্গনিরোধ ওয়ার্ডও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

এছাড়া সবকটি মেডিকেল কলেজ ও জেলা হাসপাতালে সংরক্ষিত ইউনিট চালুর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সদের।

সূত্র জানিয়েছে, গত ২১ জানুয়ারি থেকে ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত বিদেশ থেকে আগত মোট দুই হাজার ৪৭০ জনের স্ক্রিনিং হয়েছে। তাদের মধ্যে দু’জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস আক্রান্ত কোনো রোগী পাওয়া যায়নি।

Advertisement

এমইউ/এইচএ/পিআর