রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে সোমবার দুপুরে জ্বর ও কাশি নিয়ে একজন চীনা নাগরিক ভর্তি হয়েছেন। তিনি সম্ভাব্য নোবেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এমন গুঞ্জন উঠেছে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে তাকে পৃথক কক্ষে রাখা হয়েছে। তবে সত্যিই তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কি না, সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে এখনও সরকারি রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসি,আর) নমুনা হিসেবে লালা পরীক্ষা করা হয়নি।
Advertisement
স্বাস্থ্য অধিদফতরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, ওই বিদেশি নাগরিক চীন থেকে এলেও তিনি উহান প্রদেশে ভ্রমণ করেননি।
যে বেসরকারি হাসপাতালে ওই চীনা নাগরিক ভর্তি আছেন সে হাসপাতালের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, মেট্রোরেল প্রকল্প, স্যামসাং ও হুয়াইয়েসহ বিভিন্ন বিদেশি কোম্পানির কর্মরতদের চিকিৎসার ব্যাপারে এ হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে। তাদের কেউ না কেউ প্রতিদিনই হাসপাতালে হেলথ চেকআপ কিংবা পরীক্ষা করাতে আসেন। তবে এ হাসপাতালে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়নি।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ এবং আইইডিসি,আর পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরার কাছে এ রোগের সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা উভয়েই জ্বর ও কাশি নিয়ে একজন বিদেশি নাগরিক ভর্তি হয়েছেন বলে শুনেছেন। তারা ওই রোগীর লালা নমুনা হিসেবে সংগ্রহ করে পরীক্ষা করবেন বলে জানান।
Advertisement
যে চীনা নাগরিকের কথা বলা হচ্ছে তিনি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্ক্যানার মেশিন পেরিয়ে এসেছেন কি না, স্ক্যানারে তার জ্বর ও সর্দি-কাশি ধরা পড়েছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে আইইডিসি,আর পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, বিমানবন্দর থেকে সুনির্দিষ্টভাবে এমন কোনো রোগীর তথ্য জানানো হয়নি।
তিনি বলেন, আজ (২৭ জানুয়ারি) সকাল পর্যন্ত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্ক্যানার মেশিন ও হ্যান্ড স্ক্যানিং মেশিনের মাধ্যমে ২ হাজার ৪৭০ জন যাত্রীর শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত দেশে কোনো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়নি।
‘বিমানবন্দর দিয়ে আগত যাত্রীদের, বিশেষ করে চীন থেকে আগত যাত্রীদের স্ক্যানার মেশিনে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পাশাপাশি প্রত্যেককে হেলথ কার্ড দেয়া হচ্ছে। তারা কোথায় অবস্থান করছেন, সে সম্পর্কে তথ্যউপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। নতুন এ ভাইরাসের উপসর্গ জ্বর-সর্দি-কাশি থাকলে তাদের আইইডিসি,আরের কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানানো হচ্ছে’,- যোগ করেন তিনি।
মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা আরও বলেন, এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ২ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে রোগের উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
Advertisement
এ পর্যন্ত কতজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ পর্যন্ত দুজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তাদের কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নন।’
আরও কয়েকজন যারা চীন থেকে ফিরেছেন এবং জ্বর-সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হয়েছেন, তারা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। আগামীকাল তাদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। তিনি বলেন, ‘জ্বর-সর্দি-কাশি থাকলে তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হবেন, এমনটা বলা যাবে না। চীনে বর্তমানে এমনিতেই ইনফ্লুয়েঞ্জায় অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুসরণ করে সম্ভাব্য সব প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। যারা চীন থেকে ফিরছেন, তাদের কেউ যদি জ্বর-সর্দি-কাশি রয়েছে বলে জানায়, তবে তাদের নমুনা পরীক্ষা করে ওই ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে করোনাভাইরাস নাকি সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত সে সম্পর্কে নিশ্চিত করা হবে।’
উল্লেখ্য, চীনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এরই মধ্যে মৃতের সংখ্যা ৮০ ছুঁয়েছে। এ ছাড়া দেশটিতে এই ভাইরাসে প্রায় ৩ হাজার মানুষ সংক্রমিত হয়েছে।
চীনের বাইরে ফ্রান্স, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, নেপাল, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ভিয়েতনামে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। চীনের বাইরে সারা বিশ্বে ২ হাজারের বেশি মানুষ এ ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে।
এমইউ/জেডএ/এমএস