চীনে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছেই। এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে ৮০ জন প্রাণ হারিয়েছে। এছাড়া আরও দুই হাজার ৭৪৪ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। চীনের গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, এই ভাইরাসে আক্রান্ত তিন শতাধিক মানুষ মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েছে। চীনের হুবেই প্রদেশে ৫০ হাজারের বেশি মেডিকেল স্টাফ এই ভাইরাস প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ এবং চিকিৎসায় অংশ নিয়েছেন।
Advertisement
রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসক এবং হাসপাতালের কর্মীরাও এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন। ফলে পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। এমন পরিস্থিতিতে এই ভাইরাস থেকে বাঁচতে সুরক্ষিত পোশাক ও মাস্ক পরে সেবা দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে প্লাস্টিকের টিউবে করে রোগীদের হাসপাতালে আনা নেওয়া করা হচ্ছে। এতে করে অন্যদের মধ্যে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা কমে যাবে।
চীনে এখন পর্যন্ত ২০ জন চিকিৎসাকর্মী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নতুন এই ভাইরাসের নাম দিয়েছে ২০১৯ নভেল করোনাভাইরাস। উহান শহরের একটি সামুদ্রিক খাবারের বাজার থেকেই প্রথম এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই ভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে উহান থেকে অন্য কোনো শহরে বা অন্য কোনো শহর থেকে উহানে যাতায়াত না করার পরামর্শ দিয়েছে চীনা কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে উহানের সব বাসিন্দাকে বাইরে চলাফেরা করার সময় মুখে মাস্ক পরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
Advertisement
চলতি সপ্তাহেই চীনা কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন যে, এই ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে ছড়াচ্ছে। হাঁচি-কাশির মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। সম্প্রতি একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, সুরক্ষিত পোশাক পরা হাসপাতালের দু'জন কর্মী একটি অ্যাম্বুলেন্স থেকে একজন রোগীকে নামাচ্ছেন। ওই রোগীকে একটি সিল করা প্লাস্টিকের টিউবে রাখা হয়েছে।
এই ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় কমপক্ষে দুই হাজার শয্যাবিশিষ্ট দুটি নতুন অস্থায়ী হাসপাতাল নির্মাণ করা হচ্ছে। মাস্ক এবং সুরক্ষিত পোশাক উৎপাদনে রীতিমতো হিমসিম খাচ্ছে বিভিন্ন কোম্পানি। জানুয়ারির শুরু থেকে এই ভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে থাকায় তখন থেকেই এই ভাইরাসের কার্যকরী প্রতিষেধক আনার চেষ্টা করে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।
এই ভাইরাস বিপজ্জনক হয়ে উঠছে কারণ এ বিষয়ে এখনও ভালোভাবে জানা সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে এই ভাইরাস কতটা বিপজ্জনক এবং এটা একজন থেকে আরেকজনের শরীরে কীভাবে ছড়িয়ে পড়ছে এ বিষয়গুলো এখনও পরিষ্কার নয়।
করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ কী?
Advertisement
এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে শুরুতে জ্বর ও শুষ্ক কাশি হতে পারে। এর সপ্তাহখানেক পর শ্বাসকষ্টও দেখা দেয়। অনেক সময় নিউমোনিয়াও হতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগীর অবস্থা বেশি খারাপ হওয়ায় তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা লাগে। তবে এসব লক্ষণ মূলত রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরই জানা গেছে।
সেক্ষেত্রে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার একদম প্রাথমিক লক্ষণ কী বা আদৌ তা বোঝা যায় কি-না তা এখনও অজানা। তবে নতুন এই করোনাভাইরাস যথেষ্ট বিপজ্জনক। সাধারণ ঠান্ডা-জ্বরের লক্ষণ থেকে এটি মৃত্যুর দুয়ার পর্যন্তও নিয়ে যেতে পারে।
এখন পর্যন্ত এটা জানা সম্ভব হয়েছে যে, এই ভাইরাস থেকে নিউমোনিয়া হবার আশঙ্কা রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই এটা অনেক ভয়াবহ হতে পারে। অপরদিকে, করোনাভাইরাস সংক্রমণের ক্ষমতা আরও প্রবল হচ্ছে এবং সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন।
মূলত চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া, নেপাল, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, ফ্রান্স এবং যুক্তরাষ্ট্রেও লোকজন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে চীনে সফর করেছেন এমন লোকজনের মাধ্যমেই এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। সে কারণে অনেক দেশই এই ভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে চীন সফরে নাগরিকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা এনেছে।
সোমবার দেশটির বিশেষজ্ঞরা দাবি করেছেন যে, তারা কার্যকর ভাবে এই ভাইরাসকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার উপায় খুঁজে পেয়েছেন। ন্যাশনাল হেলথ কমিশনের বিশেষজ্ঞ লি লানজুয়ান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ৫৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ৩০ মিনিটের মধ্যেই করোনাভাইরাসকে হত্যা করা সম্ভব। ইথার, ৭৫ শতাংশ ইথানল এবং ক্লোরিং সমৃদ্ধ জীবানুনাশক এই ভাইরাসকে কার্যকরীভাবে হত্যা করতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
টিটিএন/পিআর