চীনে আতঙ্ক ছড়ানো করোনাভাইরাস বিশ্বের অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নতুন এই ভাইরাসের নাম দিয়েছে ২০১৯ নভেল করোনাভাইরাস। মূলত চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া, নেপাল, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, ফ্রান্স এবং যুক্তরাষ্ট্রেও লোকজন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে।
Advertisement
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে চীনে সফর করেছেন এমন লোকজনের মাধ্যমেই এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। সে কারণে অনেক দেশই এই ভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে চীন সফরে নাগরিকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা এনেছে। এদিকে, চীন থেকে ঘুরে এসেছেন এমন লোকজনকে দুই সপ্তাহ বাড়িতেই থাকার পরামর্শ দিয়েছে সিঙ্গাপুর।
চীন থেকে দেশে ফিরেছেন এমন লোকজনকে ১৪ দিন স্কুল, হেলথ কেয়ারসহ বিভিন্ন স্থানে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই চীনে এই ভাইরাসে ৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া আরও প্রায় তিন হাজার মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুতর।
এমন পরিস্থিতিতে এই ভাইরাস যেন ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সিঙ্গাপুর। দেশটির বিমানবন্দরে চীন ফেরত লোকজনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের আপাতত বাড়িতেই থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
Advertisement
শুধু তাই নয়, লোকজনকে বলা হয়েছে একেবারেই প্রয়োজন না হলে তারা যেন এই মুহূর্তে চীনে সফর না করেন। বুধবার থেকে বিমাবন্দরগুলোতে টেম্পারেচার স্ক্রিনিং করা হবে। চীন থেকে আসা সব ফ্লাইটের যাত্রীদের এ ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে।
চীন থেকে দেশে ফিরে এসেছেন এমন লোকজনকে দুই সপ্তাহে প্রতিদিন দু'বার করে শরীরের তাপমাত্রা মাপাসহ স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করতে বলা হয়েছে। সম্প্রতি চীন থেকে দেশে ফিরেছেন ৮শ শিক্ষার্থী। তাদের আপাতত বাড়িতেই থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সিঙ্গাপুরকে নিরাপদ রাখতে কোনো প্রচেষ্টাই বাকি রাখা হবে না বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ কী?
এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে শুরুতে জ্বর ও শুষ্ক কাশি হতে পারে। এর সপ্তাহখানেক পর শ্বাসকষ্টও দেখা দেয়। অনেক সময় নিউমোনিয়াও হতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগীর অবস্থা বেশি খারাপ হওয়ায় তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা লাগে। তবে এসব লক্ষণ মূলত রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরই জানা গেছে।
Advertisement
সেক্ষেত্রে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার একদম প্রাথমিক লক্ষণ কী বা আদৌ তা বোঝা যায় কি-না তা এখনও অজানা। তবে নতুন এই করোনাভাইরাস যথেষ্ট বিপজ্জনক। সাধারণ ঠান্ডা-জ্বরের লক্ষণ থেকে এটি মৃত্যুর দুয়ার পর্যন্তও নিয়ে যেতে পারে।
চীনে এখন পর্যন্ত দুই হাজার ৭৪৪ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। চীনের গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, এই ভাইরাসে আক্রান্ত তিন শতাধিক মানুষ মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েছে। চীনের হুবেই প্রদেশে ৫০ হাজারের বেশি মেডিকেল স্টাফ এই ভাইরাস প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ এবং চিকিৎসায় অংশ নিয়েছেন।
কমপক্ষে দুই হাজার শয্যাবিশিষ্ট দুটি নতুন অস্থায়ী হাসপাতাল নির্মাণ করা হচ্ছে। মাস্ক এবং সুরক্ষিত পোশাক উৎপাদনে রীতিমতো হিমসিম খাচ্ছে বিভিন্ন কোম্পানি। জানুয়ারির শুরু থেকে এই ভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে থাকায় তখন থেকেই এই ভাইরাসের কার্যকরী প্রতিষেধক আনার চেষ্টা করে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।
এই ভাইরাস বিপজ্জনক হয়ে উঠছে কারণ এ বিষয়ে এখনও ভালোভাবে জানা সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে এই ভাইরাস কতটা বিপজ্জনক এবং এটা একজন থেকে আরেকজনের শরীরে কীভাবে ছড়িয়ে পড়ছে এ বিষয়গুলো এখনও পরিষ্কার নয়।
এখন পর্যন্ত এটা জানা সম্ভব হয়েছে যে, এই ভাইরাস থেকে নিউমোনিয়া হবার আশঙ্কা রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই এটা অনেক ভয়াবহ হতে পারে। অপরদিকে, করোনাভাইরাস সংক্রমণের ক্ষমতা আরও প্রবল হচ্ছে এবং সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন।
টিটিএন/পিআর