বিশেষ প্রতিবেদন

সীমান্ত হত্যার পাল্টা জবাব দেয়া দরকার

বাংলাদেশ সীমান্তে ভারত যা করছে, তা খুবই ন্যক্কারজনক বলে মনে করি। সীমান্তে হত্যার পাল্টা জবাব দেয়া দরকার। কারণ সীমান্তে এমন কিছুই ঘটেনি যে এভাবে পাখির মতো গুলি করে মানুষ হত্যা করতে হবে। এটি একটি জাতির জন্য খুবই অপমানজনক ঘটনা।

Advertisement

বলছিলেন কূটনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক এম শাহিদুজ্জামান। ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) কর্তৃক উপর্যুপরি বাংলাদেশিদের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন জাগো নিউজের কাছে।

প্রসঙ্গত, কয়েক দিন ধরে সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। গত বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) নওগাঁর পোরশার হাঁপানিয়া সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে তিন বাংলাদেশি গরু ব্যবসায়ী নিহত হন। এর আগের দিন ২২ জানুয়ারি লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা সীমান্তে দুই বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী। গত ৮ জানুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জের ওয়াহেদপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হন দুই বাংলাদেশি যুবক। আহত হন আরও দুজন। মূলত ভারত থেকে গরু আনতে গিয়ে বিএসএফের বন্দুকের মুখোমুখি হন তারা।

সীমান্তে নির্বিচারে হত্যা চললেও বিষয়টি ভিন্নভাবে দেখছে সরকার। গতকাল (২৫ জানুয়ারি) এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হয় খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের কাছে। তিনি বলেন, ‘স্থানীয় প্রশাসনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে অবৈধভাবে ভারতে ঢুকে গরু আনতে গিয়ে বিএসএফের গুলিতে কেউ নিহত হলে তার দায় নেবে না সরকার।’

Advertisement

ঠিক একই সুরে কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এম আবদুল মোমেনও। গত বছর ১২ অক্টোবর এ বিষয়ে তাকেও জিজ্ঞাসা করা হয়। তিনি ওই সময় বলেছিলেন, ‘সীমান্তে যারা মারা যাচ্ছে, তাদের অধিকাংশই চোরাকারবারি। সীমান্ত হত্যা বন্ধে ঢালাওভাবে ভারতকে দোষারোপ না করে নিজেদেরও দায়িত্বশীল হতে হবে।’

এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক শাহিদুজ্জামান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার সবকিছু উজাড় করে ভারত সরকারকে সুবিধা দিচ্ছে। অপরদিকে ভারতের বিজেপি সরকার প্রতিদিন হুমকি দিচ্ছে যে, বাঙালি মুসলমানদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেবে। ভারত-বাংলাদেশ যুদ্ধাবস্থায় নেই। অথচ প্রতিদিন রক্ত ঝরছে সীমান্তে। ভারত সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ইঙ্গিত ছাড়া এমন হত্যাকাণ্ড হতে পারে না।’

‘ভারতের সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করতে চায় এবং এ অজুহাতে বাঙালিদের পুশইন করতে চায়। পশ্চিমবঙ্গে হুমকি দিচ্ছে। এ হুমকি বাস্তবায়ন করতে হলে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করার প্রয়োজনবোধ করছে মোদি সরকার। এ সম্পর্ক কোনোভাবেই স্বাভাবিক বলা যায় না’- যোগ করেন এ বিশ্লেষক।

তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক আদালতে রোহিঙ্গাদের বিজয় হয়েছে। এ সময় ভারতের উচিত ছিল বাংলাদেশকে সমর্থন দেয়া। তা দেয়নি। রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত আগে থেকেই মিয়ানমারের সঙ্গে ছিল। অথচ এ সমর্থন ভুল ছিল, এটা আজ প্রমাণিত।

Advertisement

‘ভারতের আচরণের পাল্টা জবাব না দিলে বিপদ আরও বাড়বে। আমার কাছে মনে হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর ভারত সরকারও নাখোশ। সম্প্রতি শেখ হাসিনা মধ্যপ্রাচ্যের একটি দৈনিকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সেখানে ভারত প্রসঙ্গে স্পষ্ট কথা বলেছেন তিনি। মানে, তার কথা ভারত সরকারের পছন্দ হয়নি। পাকিস্তানের সঙ্গে মিলিয়ে বাংলাদেশের তুলনা করেছে মোদি সরকার। অথচ বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের মধুর সম্পর্ক মনে করা হয়। বিজেপি একেবারে মুসলিমবিরোধী অবস্থান নিয়ে বাংলাদেশকে মূল্যায়ন করছে।’

ভারতের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, অবিলম্বে ভারতের সঙ্গে ট্রানজিটসহ গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্থগিত করা দরকার। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ওপর ভরসা করলে চলবে না। তিনি কূটনৈতিক সম্পর্ক বোঝেন কি-না, সন্দেহ আছে। তবে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে সজাগ আছেন বলে বিশ্বাস করি। প্রধানমন্ত্রীর উচিত অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করা। বিশেষ করে পাকিস্তানের সঙ্গে অবশ্যই সম্পর্ক উন্নয়ন করা দরকার। চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো, এটি আমাদের জন্য শুভ সংবাদ। আমি মনে করি, সার্কের অন্য দেশগুলোর মধ্যে একটি বোঝাপড়া সম্পর্ক গড়া দরকার এবং ভারতকে বোঝানো উচিত যে, তোমার আচরণে এ অঞ্চলের দেশগুলো অসন্তুষ্ট।’

হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোটায় নামানোর কথা। অথচ হত্যাকাণ্ড যেকোনো সময়ের চেয়ে বাড়ছে। এটি না থামাতে পারলে ভয়াবহ রূপ নেবে। ভারতীয় বাহিনী যেকোনো সময় বাংলাদেশে ঢুকে যেতে পারে।’

‘ভারতের গরু কেন প্রবেশ করছে, এটা আমার মাথায় আসছে না’ উল্লেখ করে এম শাহিদুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের ঘোষণা দেয়া উচিত যে, আমরা ভারতের গরু চাই না। তাহলে আমাদের খামারিরা রক্ষা পাবে। ভারত নিজেই উত্তর প্রদেশ ও রাজস্থান থেকে গরু এনে বর্ডারের কাছে রাখছে এবং বিক্রি করে ঠেলে দিচ্ছে। আবার তারাই বাংলাদেশিদের গুলি করে হত্যা করছে। তার মানে, এটি উপলক্ষ মাত্র। আসল কথা হচ্ছে মানুষ হত্যা করা। এ অপরাধে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর (অমিত শাহ) পদত্যাগ দাবি করা উচিত বাংলাদেশের। কারণ এ দানব ক্ষমতায় থাকলে অন্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো থাকতে পারে না।’

এএসএস/এমএআর/জেআইএম