আমাদের দেশে কমলা চাষ নিয়ে কৃষি বিশেষজ্ঞদের মনে দীর্ঘদিন ধরে সংশয় ছিল। তবে সে সংশয় দূর করে দিয়েছেন চুয়াডাঙ্গার ওমর ফারুক। পাহাড়ি এলাকার পরিবর্তে সমতল জমিতে কমলা চাষে সফল হয়েছেন তিনি। সুমিষ্ট চায়না কমলা উৎপাদিত হয়েছে চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে। ওমর ফারুকের কমলা দেখতে প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক দর্শনার্থী আসেন। নার্সারি মালিক ফারুক এখন ‘কমলা ফারুক’ নামে পরিচিতি পেয়েছেন।
Advertisement
উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের নিধিকুন্ড গ্রামের ওমর ফারুক জানান, তিনি মূলত একজন ক্ষুদ্র নার্সারি ব্যবসায়ী। অনেকটা আগ্রহের বশে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নিধিকুন্ড গ্রামের মাঠে নিজের ১ বিঘা জমিতে চায়না কমলার বাগান করেন। ১০০টি চারা ধরে এক বিঘায়। পরিচর্যার পর ২ বছরের মাথায় ২০১৮ সালের নভেম্বরে গাছে কমলা ধরে। এ কমলা অবিকল চায়না কমলার মত দেখতে। রং ও স্বাদ একই রকম।
ফারুক জানান, ওই বছর তিনি আড়াই লাখ টাকার কমলা বিক্রি করেন। বাণিজ্যিকভাবে বাগান গড়ার জন্য ৩০ হাজার কলম চারা বাঁধেন। এ বছর প্রতিটি গাছে গড়ে ৫০-৫৫ কেজি করে কমলা ধরেছে। গাছে থোকায়-থোকায় ঝুলছে কেবল কমলা আর কমলা। ওমর ফারুকের কমলা বাগানের এ খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ার পর কৃষি বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, মিডিয়া কর্মী, আগ্রহী চাষি ও দূর-দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীদের ভিড় কমলা বাগানে লেগেই আছে।
ওমর ফারুক আরও জানান, কমলা চাষে খরচ অত্যন্ত কম। এ বছর তিনি ৮ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। দর্শনার্থীদের দেখার জন্য কমলা গাছেই রেখে দিয়েছেন। খেতে দিচ্ছেন কমলা। এতে তারা খুশি হয়ে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন কমলার চারা। অনেকেই বাগান তৈরির জন্য দিচ্ছেন চারার অর্ডার। প্রতি পিচ চারা ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গত দেড় মাসে ১৪ লাখ টাকার চারা বিক্রি করেছেন। এখনো ১৬ লাখ টাকার চারা বিক্রি হবে।
Advertisement
ওমর ফারুক আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘কেবল পাহাড় নয়; প্রযুক্তি ব্যবহার করে সমতল জমিতেও সুমিষ্ট কমলার চাষ সম্ভব। বিদেশ থেকে কমলা আমদানির দিন শেষ হতে চলেছে। বাণিজ্যিকভাবে বাগান করলে দেশীয় কমলা দিয়ে বাৎসরিক চাহিদা মেটানো সম্ভব।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, ‘কৃষি বিভাগ থেকে ওমর ফারুককে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। আগ্রহী কমলা চাষিদের এ ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।’
সালাউদ্দীন কাজল/এসইউ/এমএস
Advertisement