চীন থেকে আসা এক অসুস্থ শিশুর শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সন্দেহ হওয়ায় তাকে পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছিলেন মালয়েশিয়ার চিকিৎসকরা। কিন্তু তা না করেই শিশুটিকে নিয়ে পালিয়েছে তার পরিবার। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
Advertisement
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, দুই বছর বয়সী শিশুটির শরীরে ইনফ্লুয়েঞ্জার লক্ষণ ছিল। তবে সে নতুন ২০১৯ এনসিওভি’তে আক্রান্ত বলে সন্দেহ ছিল চিকিৎসকদের। এ কারণে একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে তাকে শহরের সুলতানা আমিনা হাসপাতালে পাঠানো হয়। হাসপাতালের চিকিৎসকরা তার বাবা-মাকে জানান, তাদের সন্তানকে অধিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পেরমাই হাসপাতালে নিতে হবে। কিন্তু সেটি না করেই পরেরদিন পালিয়ে একটি ফ্লাইটে চীনে ফেরত যান তারা।
গত শুক্রবার এ ঘটনা ঘটার পরপরই জোহর বারু থানায় অভিযোগ করেন সুলতানা আমিনা হাসপাতালের এক চিকিৎসক। এরই মধ্যে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ।
মালয়েশিয়ায় এ পর্যন্ত অন্তত চারজনের শরীরে নতুন করোনাভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়েছে। তারা সবাই চীনা নাগরিক। এর মধ্যে তিনজন একই পরিবারের সদস্য। তারা হলেন ৬৫ বছর বয়সী এক নারী এবং তার ২ ও ১১ বছর বয়সী দুই নাতি। ওই নারীর স্বামীও করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন। আর চতুর্থ ব্যক্তি উহানের বাসিন্দা। তিনি সম্প্রতি সিঙ্গাপুর ভ্রমণ করে আসা একটি পর্যটক দলের সঙ্গে ছিলেন।
Advertisement
করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ কী?করোনাভাইরাস আক্রান্ত হলে গরু-ছাগল জাতীয় পশুর ডায়রিয়া, পাখিদের শ্বাসকষ্টজনিত রোগ হতে পারে। মানুষের ক্ষেত্রে প্রধান লক্ষণ জ্বর, শুষ্ক কাশি ও শ্বাসকষ্ট। প্রাথমিকভাবে এটি ততটা গুরুতর মনে না হলেও শেষপর্যন্ত প্রাণঘাতী হতে পারে। কারণ এখনও এই ভাইরাসের কোনো ওষুধ বা প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি।
কোন প্রাণী থেকে ছড়ায়?যে প্রাণীর শরীরে বাসা বাঁধার পর ভাইরাস ছড়াচ্ছে তা নির্ণয় করা গেলে সমস্যার সমাধান অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। নতুন করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে এর উৎস হচ্ছে উহান শহরে সামুদ্রিক খাবারের পাইকারি বাজার। ধারণা করা হচ্ছে, বেলুগা তিমির মতো সমুদ্রগামী কিছু স্তন্যপায়ী প্রাণী এই ভাইরাস বয়ে এনেছে। তবে বাজারে অহরহ বিচরণ করা মুরগি, বাদুর, খরগোশ, সাপের মতো প্রাণীগুলোও সন্দেহের বাইরে নয়।
গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহান শহরে প্রথমবারের মতো নতুন এই ভাইরাসটি ধরা পড়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নতুন এই ভাইরাসের নাম দিয়েছে ২০১৯-এনসিওভি। ধরা পড়ার এক মাসও হয়নি, এরই মধ্যে শুধু চীনেই অন্তত ৫৬ জন মারা গেছে, আক্রান্ত হয়েছে দুই হাজারের বেশি মানুষ। যদিও দেশটির এক চিকিৎসাকর্মী দাবি করেছেন, চীনা সরকার মিথ্যা বলছে। সেখানে এখন পর্যন্ত প্রায় এক লাখ মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।
শনিবার পর্যন্ত অন্তত ১৮টি শহরে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও চলাচলে কড়াকড়ি আরোপ করেছে চীনা কর্তৃপক্ষ। পরিস্থিতি দিন দিন আরও খারাপ হওয়ায় করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
Advertisement
চীনের উহান শহরে প্রায় ৮৯ লাখ মানুষের বসবাস। মূলত ওই শহরে প্রাদুর্ভাব ঘটার পর ভাইরাসটি বেইজিংসহ অন্যান্য প্রদেশেও ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া প্রতিবেশী দেশ জাপান, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, ম্যাকাও, ভারত, নেপাল এবং যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়াতেও এই ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। এমনকি ইউরোপেও ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস। ফ্রান্সে অন্তত তিনজন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। অপরদিকে, এক ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে বলে সন্দেহ করছে ইসরায়েল।
সূত্র: দ্য স্ট্রেইট টাইমস, রয়টার্স
কেএএ/টিটিএন/এমএস