চীনে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বাড়ছেই। এখন পর্যন্ত সেখানে ৫৬ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এদিকে চীন থেকে ফেরা এক ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে বলে সন্দেহ করছে ইসরায়েল।
Advertisement
শনিবার ওই ব্যক্তিকে তেল আবিবের শেবা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দেশটিতে এর আগেও কয়েকজনকে করোনাভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে সেসব ক্ষেত্রে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ভাইরাসের উপস্থিতি না পাওয়ায় তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। খবর রয়টার্স, জিউস প্রেস।
ইসরায়েলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চীনে করোনাভাইরাস ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ায় সেখান থেকে আসা সব যাত্রীর শারীরিক পরীক্ষা শেষে তবেই দেশে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে। কাউকে সন্দেহ হলে তাকে অন্য রোগীদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে আলাদাভাবে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত বেশ কয়েকজনকে পরীক্ষা করা হলেও তাদের কারও শরীরেই করোনাভাইরাসের উপস্থিতি মেলেনি।
শেবা হাসপাতালে ভর্তি রোগীর ক্ষেত্রে জানানো হয়েছে, তিনি ফ্লু আক্রান্ত। তবে অতিরিক্ত সতর্কতা স্বরূপ ল্যাবের প্রতিবেদন আসার পরেই তাকে যেতে দেয়া হবে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের উপস্থিতি না পাওয়া গেলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ধারণা করছে, কিছুদিনের মধ্যেই এ ভাইরাসে আক্রান্ত অসংখ্য রোগী দেশে ঢুকবে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাড়তি সতর্কতা নেয়া হয়েছে।
Advertisement
করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ কী?করোনাভাইরাস আক্রান্ত হলে গরু-ছাগল জাতীয় পশুর ডায়রিয়া, পাখিদের শ্বাসকষ্টজনিত রোগ হতে পারে। মানুষের ক্ষেত্রে প্রধান লক্ষণ জ্বর, শুষ্ক কাশি ও শ্বাসকষ্ট। প্রাথমিকভাবে এটি ততটা গুরুতর মনে না হলেও শেষপর্যন্ত প্রাণঘাতী হতে পারে। কারণ এখনও এই ভাইরাসের কোনো ওষুধ বা প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি।
কোন প্রাণী থেকে ছড়ায়?যে প্রাণীর শরীরে বাসা বাঁধার পর ভাইরাস ছড়াচ্ছে তা নির্ণয় করা গেলে সমস্যার সমাধান অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। নতুন করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে এর উৎস হচ্ছে উহান শহরে সামুদ্রিক খাবারের পাইকারি বাজার। ধারণা করা হচ্ছে, বেলুগা তিমির মতো সমুদ্রগামী কিছু স্তন্যপায়ী প্রাণী এই ভাইরাস বয়ে এনেছে। তবে বাজারে অহরহ বিচরণ করা মুরগি, বাদুর, খরগোশ, সাপের মতো প্রাণীগুলোও সন্দেহের বাইরে নয়।
গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহান শহরে প্রথমবারের মতো নতুন এই ভাইরাসটি ধরা পড়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নতুন এই ভাইরাসের নাম দিয়েছে ২০১৯-এনসিওভি। ধরা পড়ার এক মাসও হয়নি, এরই মধ্যে শুধু চীনেই অন্তত ৫৬ জন মারা গেছে, আক্রান্ত হয়েছে ১৩শ’র বেশি মানুষ। শনিবার পর্যন্ত ১৮টি শহরে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও চলাচলে কড়াকড়ি আরোপ করেছে চীনা কর্তৃপক্ষ। পরিস্থিতি দিন দিন আরও খারাপ হওয়ায় করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
চীনের উহান শহরে প্রায় ৮৯ লাখ মানুষের বসবাস। মূলত ওই শহরে প্রাদুর্ভাব ঘটার পর ভাইরাসটি বেইজিংসহ অন্যান্য প্রদেশেও ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া প্রতিবেশী দেশ জাপান, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, ম্যাকাও, ভারত, নেপাল এবং যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়াতেও এই ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। এমনকি ইউরোপেও ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস। ফ্রান্সে অন্তত তিনজন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
Advertisement
কেএএ/টিটিএন/এমএস