>> নির্মাণব্যয় ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা>> পাঁচ হাজার কোটি টাকা দেবে বাংলাদেশ সরকার>> বাকি টাকা আসবে জাইকার তহবিল থেকে>> ২০২৩ সালে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা
Advertisement
বুর্জ খলিফা, পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার, তাইপে ১০১- এর মতো সুউচ্চ ভবনের নির্মাণ প্রতিষ্ঠান স্যামসাং গ্রুপের কনস্ট্রাকশন ইউনিট- স্যামসাং কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ট্রেডিং (সিঅ্যান্ডটি) করপোরেশন। অত্যাধুনিক ও বৈচিত্র্যময় নির্মাণশৈলীর মাধ্যমে আকর্ষণীয় ও দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা তৈরির এ প্রতিষ্ঠানের হাতেই নির্মিত হবে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল।
গত বছর ২৮ ডিসেম্বর তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টার্মিনাল উদ্বোধনের পর জাতীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে নতুন যুক্ত হওয়া ড্রিমলাইনার ৭৮৭-৯ সিরিজের নতুন দুটি উড়োজাহাজ ‘সোনার তরী’ ও ‘অচিন পাখি’ও উদ্বোধন করেন তিনি।
তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রসঙ্গে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বলেন, তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ হলে এটি হবে এ অঞ্চলের সেরা বিমানবন্দর। তার ভাষায়, আন্তর্জাতিক মানের সেবা নিশ্চিত করতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল অত্যাধুনিকভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স যেভাবে আকাশে শান্তির নীড়, আমাদের নতুন টার্মিনালও হবে ভূমিতে শান্তির পরশ। আগামী ৪৮ মাসের মধ্যে এ টার্মিনালের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি।
Advertisement
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন
শাহজালাল বিমানবন্দরের প্রধান টার্মিনালের দক্ষিণ পাশে তিন নম্বর টার্মিনালটি নির্মাণ করা হবে, যার আনুমানিক নির্মাণব্যয় ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। টার্মিনালটি নির্মাণে পাঁচ হাজার কোটি টাকা দেবে বাংলাদেশ সরকার। বাকি টাকা আসবে জাপান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা- জাইকার তহবিল থেকে। নতুন এ টার্মিনালের নির্মাণকাজ ২০২৩ সালে শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
টার্মিনালটি নির্মাণে স্যামসাং কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ট্রেডিং করপোরেশন পাঁচ হাজার কোটি টাকা (১.৬ বিলিয়ন ডলার) বরাদ্দ পেয়েছে। অত্যাধুনিক এ টার্মিনাল নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর বছরে প্রায় দুই কোটি যাত্রী এটি ব্যবহার করতে পারবেন।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তৌহিদ-উল আহসান জাগো নিউজকে বলেন, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের চেহারা পাল্টাতে নতুন এ টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক এ বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল দরপত্রের আর্থিক প্রস্তাবে টিকেছে স্যামসাং কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ট্রেডিং (সিঅ্যান্ডটি) করপোরেশন।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, অত্যাধুনিক নির্মাণকৌশল ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্যামসাং থার্ড টার্মিনালের জন্য আকর্ষণীয় পোর্টফোলিও তৈরি করা করেছে। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি প্রকৌশল ও নির্মাণ সংস্থা হিসেবে বিভিন্ন খাতে নিজেদের শাখা-প্রশাখা বিস্তৃত করেছে। উঁচু ভবন থেকে বিমানবন্দর, চিকিৎসা সুবিধা, গতানুগতিক ধারার বাইরে নতুন ভবন নির্মাণ এবং অত্যাধুনিক উৎপাদন সুবিধাসম্পন্ন স্থাপনা নির্মাণ করতে সক্ষম প্রতিষ্ঠানটি।
তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের নকশা
বুর্জ খলিফা, পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার, তাইপে ১০১ সুউচ্চ ভবন, সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরের ৪ নম্বর টার্মিনাল নির্মাণ, দক্ষিণ কোরিয়ার ইনচেওন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, আবুধাবির ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক নির্মাণ করেছে স্যামসাং কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ট্রেডিং করপোরেশন। প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কন্সট্রাকশন গ্রুপ সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচন করছে- বলেন তৌহিদ-উল আহসান।
উল্লেখ্য, স্যামসাং ইলেক্ট্রনিকস এক দশক ধরে বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। স্থানীয় বাজারের চাহিদা মেটাতে প্রতিষ্ঠানটি নরসিংদীতে হাই-টেক কারখানা স্থাপন করেছে। সেখানে স্মার্টফোন সংযোজন করা হচ্ছে। এছাড়া ঢাকায় প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্রও রয়েছে।
২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদিত হয়। এর আগে ২০১৫ সালে বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ ও সম্প্রসারণের প্রাথমিক সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন ও খসড়া মাস্টারপ্ল্যান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে উপস্থাপন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দেন। ২০১৭ সালের ১১ জুন এ প্রকল্পের জন্য চারটি প্রতিষ্ঠানকে যৌথভাবে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেয় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। প্রাথমিকভাবে এ প্রকল্পের মেয়াদকাল ছিল ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। কিন্তু নানা কারণে নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু করা যায়নি। পরে গত বছরের সেপ্টেম্বরে এটির নির্মাণে দরপত্র আহ্বান করে সিভিল এভিয়েশন।
শাহজালাল বিমানবন্দরের দ্বিতীয় টার্মিনাল
বেবিচকের তথ্য অনুযায়ী, তৃতীয় টার্মিনালে থাকবে ২৬টি বোর্ডিং ব্রিজ। প্রথম ধাপে ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ চালু হবে। উড়োজাহাজ রাখার জন্য ৩৬টি পার্কিং থাকবে। বহির্গমনের জন্য ১৫টি সেলফ সার্ভিস চেক ইন কাউন্টারসহ মোট ১১৫টি চেক ইন কাউন্টার থাকবে।
এছাড়া ১০টি স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট কন্ট্রোল কাউন্টারসহ থাকবে ৬৬টি ডিপারচার ইমিগ্রেশন কাউন্টার। আগমনীর ক্ষেত্রে পাঁচটি স্বয়ংক্রিয় চেক ইন কাউন্টারসহ মোট ৫৯টি পাসপোর্ট ও ১৯টি চেক ইন অ্যারাইভাল কাউন্টার থাকবে। এর বাইরে টার্মিনালে ১৬টি আগমনী ব্যাগেজ বেল্ট স্থাপন করা হবে। গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য তৃতীয় টার্মিনালের সঙ্গে মাল্টিলেভেল কার পার্কিং ভবন নির্মাণ করা হবে। এতে ১৩৫০টি গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে।
তৃতীয় টার্মিনাল ভবনের সঙ্গে ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ পথ ও উড়াল সেতু নির্মাণ করা হবে। এর মাধ্যমে মেট্রোরেল ও ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগ ব্যবস্থা থাকবে। এতে থাকবে আন্তর্জাতিকমানের অত্যাধুনিক অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা। তৃতীয় টার্মিনাল প্রকল্পের প্রথম ধাপের সঙ্গে বর্তমান টার্মিনাল ভবনগুলোর আন্তঃযোগাযোগ ব্যবস্থা থাকবে না। তবে প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপে কানেকটিং করিডোরের মাধ্যমে পুরনো টার্মিনাল ভবনগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা হবে।
আরএম/এমএআর/এমএস