করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য উহান শহরে ছয় দিনে একটি হাসপাতাল তৈরির কথা জানিয়েছে চীন। বর্তমানে দেশটিতে এক হাজার ২০০ জনের বেশি মানুষ এতে আক্রান্ত এবং ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
Advertisement
চীনে প্রথম এই ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয় উহান শহরে; যেখানে প্রায় এক কোটি ১০ লাখ মানুষের বসবাস। শহরটির হাসপাতালগুলোতে উদ্বিগ্ন বাসিন্দাদের উপচে পড়া ভিড় এবং ফার্মেসিগুলোতে ওষুধের সংকট তৈরি হয়েছে।
দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম বলছে, নতুন হাসপাতালে এক হাজার শয্যা থাকবে। চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম অনলাইনে যে ভিডিও পোস্ট করেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, খনন যন্ত্র এরইমধ্যে ওই স্থানে পৌঁছেছে। পুরো এলাকাটি ২৫ হাজার বর্গমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত।
২০০৩ সালে বেইজিংয়ে সার্স ভাইরাস মোকাবেলা করতে স্থাপিত আরেকটি হাসপাতালের আদলে এই হাসপাতালটি তৈরি করা হচ্ছে। হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের গ্লোবাল হেলথ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক জোয়ান কাউফম্যান বলেন, এটা মূলত রোগ-অন্তরণ বা রোগীদের আলাদা করে রাখার জন্য একটি হাসপাতাল; যেখানে সংক্রমণের শিকার রোগীদের পাঠানো হবে। এতে সুরক্ষা এবং জীবাণু প্রতিরোধী সরঞ্জাম থাকবে।
Advertisement
ছয় দিনে কিভাবে হাসপাতাল বানাবে চীন?
গ্লোবাল হেলথ এর জ্যেষ্ঠ ফেলো ইয়াংঝং হুয়াং বলেন, চীনের সাধারণত খুব দ্রুত জিনিসপত্র তৈরির রেকর্ড রয়েছে। এমনকি এ ধরনের বিশাল বিশাল প্রকল্পের ক্ষেত্রেও। তিনি বলেন, ২০০৩ সালে বেইজিংয়ের হাসপাতালটি সাত দিনে তৈরি করা হয়েছিল। তাই এবার মনে হচ্ছে নির্মাণকারী দলটি সেই রেকর্ড ভেঙে ফেলতে চাইছে। বেইজিংয়ের হাসপাতালের মতোই, উহান সেন্টারটিও আগে থেকেই নির্মিত ভবনে তৈরি করা হবে।
'এই কর্তৃত্ববাদী দেশটি শীর্ষ থেকে নিচে বা টপ-ডাউন মোবিলাইজেশন পদ্ধতি অনুসরণ করে থাকে। যার কারণে তারা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এড়িয়ে এবং আর্থিক সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে তাদের সব পুঁজি নির্দিষ্ট দিকে নিয়োগ করতে পারে।'
হুয়াং বলেন, ঠিক সময়ে কাজ শেষ করতে সারা দেশ থেকে প্রকৌশলীদের এখানে নিয়ে আসা হতে পারে। প্রকৌশলই হচ্ছে সেই কাজ যাতে চীন খুবই ভাল। দ্রুত গতিতে আকাশচুম্বী ভবন তৈরির রেকর্ড রয়েছে তাদের। এটা পশ্চিমাদের জন্য চিন্তা করাটাই কঠিন। এটা সম্ভব।
Advertisement
আর চিকিৎসা সরঞ্জামাদির কথা বলতে গেলে, উহান সেগুলো অন্য হাসপাতাল থেকে আনতে পারে কিংবা সরাসরি কারখানা থেকেও অর্ডার করতে পারে। শুক্রবার রাষ্ট্রীয় দৈনিক গ্লোবাল টাইমসের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, পিপলস লিবারেশন আর্মি থেকে ১৫০ জন চিকিৎসাকর্মী উহানে পৌঁছেছে। তবে নতুন হাসপাতাল তৈরির পর তারা সেখানে কাজ করবে কিনা সে বিষয়ে কিছু নিশ্চিত করা হয়নি।
সার্স মহামারির সময় কী ঘটেছিল?
২০০৩ সালে সার্সের উপসর্গে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য বেইজিংয়ে শিয়াওটাংশান হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছিল। সেটা তৈরি করা হয়েছিল সাত দিনে, যা বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুত হাসপাতাল তৈরির রেকর্ড ভেঙেছিল বলে ধারণা করা হয়।
চায়না ডট কম ডট সিএন জানায়, ঠিক সময়ে কাজ শেষ করার জন্য প্রায় ৪ হাজার মানুষ দিন রাত কাজ করেছিল। এরমধ্যে একটি এক্স-রে কক্ষ, সিটি কক্ষ, নিবিড় পর্যবেক্ষণ ইউনিট এবং ল্যাবরেটরি রয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে আলাদা পায়খানা ছিল।
দুই মাসের মধ্যে সেখানে দেশটিতে সার্স আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে এক-সপ্তমাংশকে ভর্তি করা হয়েছিল; যাকে দেশটির সংবাদ মাধ্যম চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে বিস্ময়কর ঘটনা বলে উল্লেখ করেছিল।
কাউফম্যান বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে এর নির্দেশ দেয়া হয়েছিল এবং নার্স ও অন্যান্য চিকিৎসকদের দেশটির অন্য হাসপাতালগুলো থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল ওই হাসপাতালে কাজ করতে। তাদেরকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে আলাদা নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল; যেখানে কিভাবে সংক্রামক রোগ মোকাবেলা করতে হবে এবং সার্স সনাক্তকরণ এবং সেগুলোকে আলাদা করার কঠোর ও নির্দিষ্ট উপায় উল্লেখ করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, সার্স মহামারির সময় ব্যয়ভার স্থানীয়ভাবে মেটানো হলেও রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকেও প্রচুর পরিমাণ ভর্তুকি দেয়া হয়েছিল; যা দিয়ে কর্মকর্তাদের বেতন ও নির্মাণ কাজে ব্যয় করা হয়।
কাউফম্যান বলেন, আমার মনে হয় না যে এর ব্যয়ভার উহান সরকারের ওপর পড়বে। কারণ এটা এখন সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। হুয়াংয়ের মতে, হাসপাতালটি মহামারি শেষ হয়ে যাওয়ার পরে চুপিসারে পরিত্যাগ করা হয়েছিল। বিবিসি বাংলা।
এসআইএস/এমএস