আন্তর্জাতিক

মনে হচ্ছে যেন পৃথিবীর শেষদিন

রহস্যময় করোনা ভাইরাসের ভয়ে কাঁপছে চীন। ২৫ জনের মৃত্যুর পর দেশটির পাঁচ শহর কার্যত ‘অবরুদ্ধ’ করে রাখার ঘোষণা দিয়েছে দেশটির সরকার। এসব শহরের স্টেশনগুলোতে নামানো হয়েছে সেনা-পুলিশ। স্টেশনের প্রবেশ পথে গার্ডরেলও বসানো হয়েছে।

Advertisement

চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন জানায়, ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৫ জনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া আরও ৮৩০ জন আক্রান্ত হয়েছে। কর্তৃপক্ষ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারে এমন এক হাজার ৭২ জনকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছে। চীনের মধ্যাঞ্চলীয় উহান নগরীতে প্রথম এ ভাইরাস দেখা দেয়।

সতর্কতা হিসেবে বেজিংয়ের নির্দেশ, ওই পাঁচ শহরে কোনো বিমান ওঠা-নামা করবে না। ট্রেন ছাড়বে না। বাসিন্দাদের বলা হয়েছে, খুব প্রয়োজন ছাড়া শহরের বাইরে না যেতে।

বিশেষজ্ঞদের সন্দেহ, উহান শহরের সি-ফুড ও মাছ-মাংসের বাজার থেকে করোনা ভাইরাসটি ছড়িয়েছে। এ বাজারে বিভিন্ন ধরনের বন্যপ্রাণীর মাংস বেআইনিভাবে বিক্রি হয়।

Advertisement

এদিকে চীনের বাইরেও এ ভাইরাসে আক্রান্তের খবর আসছে। আক্রান্তদের বেশির ভাগই চিন-ফেরত। সর্বশেষ খবরটি এসেছে সিঙ্গাপুর থেকে। এরপরই ভাইরাসের ‘উৎস’ উহান, হুয়াংগ্যাং ও ইঝৌ শহরকে ‘লকডাউন’ ঘোষণা করা হয়েছে।

সৌদি আরবে কর্মরত এক ভারতীয় নার্সের দেহেও করোনা ভাইরাস মিলেছে। ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ভি মুরলীধরন খবরের সত্যতা স্বীকার করে জানান, আক্রান্ত নার্স জেদ্দার আসির ন্যাশনাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের যেন দ্রুত চিকিৎসা হয় তা নিশ্চিতের জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে চিঠি লিখেছেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন।

চীনা কর্তৃপক্ষ বলছে, হুবেই প্রদেশের বন্দর-শহর উহানে এক কোটি ১০ লাখ মানুষের বাস। অনির্দিষ্টকালের জন্য ট্রেন চলাচল, বিমান পরিবহন বন্ধ করে দেয়ায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে শহরবন্দি লোকেদের মধ্যে। গতকাল উহানে এ নিয়ে সরকারি ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পর একই নির্দেশ আসে হুয়াংগ্যাংয়ের বাসিন্দাদের কাছেও। ৭৫ লাখ মানুষের বাস এ শহরে। গতকাল মধ্যরাতে ট্রেন-সহ সরকারি পরিবহণ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়া হয়। বন্ধ সিনেমা হল, সাইবার কাফে, বাজার-দোকানও।

ইঝৌ শহরও একই পথে হেঁটেছে। রাতের দিকে আরও দুটি শহর ‘বন্দি’ ঘোষণা করা হয়। ট্রেন-বিমানের পাশাপাশি ফেরি, বাস চলাচলও বন্ধ। এসব শহরের স্টেশনগুলোতে নামানো হয়েছে সেনা-পুলিশ। স্টেশনের প্রবেশ পথে গার্ডরেল বসানো হয়েছে।

Advertisement

চীনা সোশ্যাল মিডিয়া ‘উইবো’তে ‘শহরবন্দি’দের একজন লিখেছেন, ‘মনে হচ্ছে যেন পৃথিবীর শেষ দিন।’ তিনি লেখেন, ইতোমধ্যেই খাবারের অভাব দেখা দিয়েছে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় কান্নায় ভেঙে পড়েছেন অনেকে। আগামীকাল শনিবার (২৫ জানুয়ারি) চীনা নববর্ষ। প্রবাসীরা দেশে ফিরে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান, উৎসবে মেতে ওঠেন। উহানের স্টেশন, বিমানবন্দর উপচে পড়ে ভিড় সবসময় লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু এবার সে চিত্র নেই।

চিকিৎসকরা বলছেন, শ্বাস-প্রশ্বাসে ছড়ায় ভাইরাসটি। গত ৩১ ডিসেম্বর প্রথম ধরা পড়ে এটি। এরপর ২৫ জনের মৃত্যু হয়। জাপান, হংকং, ম্যাকাউ, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, আমেরিকা, সৌদি আরব, ভিয়েতনাম ও সিঙ্গাপুর থেকেও আক্রান্তের খবর মিলছে।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, তারা এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি যে ‘বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য সংকট’ ঘোষণা করা হবে কি-না। সংস্থার প্রধান বলেন, চীন যে কঠিন পদক্ষেপ নিয়েছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়।’

এমএআর