জাতিসংঘ ঘোষিত নতুন বৈশ্বিক উন্নয়ন কর্মসূচি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) সফল বাস্তবায়নে বাংলাদেশের বড় পাঁচটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। এর মধ্যে প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে অর্থের যোগান দেওয়া।সোমবার মহাখালীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ ও বাস্তবায়ন সম্পর্কিত সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন সিপিডির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে চলমান অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নীতির সঙ্গে কিভাবে যুক্ত হবে? কি প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনার অধীনে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে? কি ধরনের আর্থিক ও সম্পদের প্রবাহ থাকবে? পরিসংখ্যান কিভাবে বাস্তবায়ন হবে? জবাবদিহিতার কাঠাম ও সবার অংশগ্রহণ কিভাবে নিশ্চিত হবে?দেবপ্রিয় বলেন, আগামী দিনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অর্থায়নের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করবে অভ্যন্তরীণ সম্পদ। এ জন্য কর আহরণের পরিমাণ যেমন বাড়াতে হবে, তেমনি তার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে দেশ থেকে অর্থ পাচার বন্ধ করতে হবে। বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়তে হবে এবং রেমিটেন্স আয়কে ধরে রাখতে হবে।আর এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দিতে হবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যলয়কে। রাজনৈতিক ও কারিগরি নেতৃত্ব প্রধানমন্ত্রীর কার্যলয় না দিলে পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায় করা কঠিন হবে।তিনি আরও বলেন, এসডিজির কর্মসূচি তৈরিতে যেমন সবাই অংশগ্রহণ করেছে, তেমনি বাস্তবায়নে সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগে সরকার ও সরকারের বাহিরে যারা রয়েছে তাদের নিয়ে একটি ফোরাম গঠন করা যেতে পারে। সেই ফোরাম একপেশে না হয়ে অংশগ্রহণমূলক হতে হবে।এসডিজির বিষয়ে দেবপ্রিয় জানান, ১৭টি অভিষ্ঠ ও ১৬৯টি লক্ষ্য নিয়ে এসডিজির গাইড লাইন তৈরি করা হয়েছে। এতে একটি অন্তর্জাতিক ঐক্যমতের প্রকাশ ঘটেছে। এই ঐক্যমতে পৃথিবীর সকল মানুষের উন্নতর জীবন-যাপনের আকাঙ্খার প্রকাশ পেয়েছে। একই সঙ্গে সকল দেশের সকল মানুষের উন্নত জীবন যাপনের বিষয়টি স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে।দেবপ্রিয় বলেন, এসডিজি বাস্তবায়ন শুরু করতে হবে সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রর (এমডিজি) অসম্পূর্ণ থাকা কাজগুলো থেকে। এগুলোর মধ্যে সবার উপরে রয়েছে কর্মসংস্থান। ২০১৫ সালের মধ্যে আমাদের কর্মসংস্থান ১০০ শতাংশ হওয়ার কথা। সেখানে হয়েছে ৫৭ শতাংশ। যা ১৯৯১ সালে ছিলো ৬৮ শতাংশ। অর্থাৎ কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে আমরা আগানোতো দূরের কথা উল্টো পিছিয়ে গেছি। সুতরাং বেকারত্ব হ্রাস, অর্থের সংস্থান ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা আগামীতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।কর্মসংস্থানের মতোই বনাঞ্চল শোচনীয় পর্যয়ে রয়েছে উল্লেখ করে দেবপ্রিয় বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বনায়ন অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে বাংলাদেশে যে পরিমাণ বনাঞ্চল থাকার কথা গত ১৫ বছরে তা আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। এটি অত্যান্ত শোচনীয় পর্যায়ে রয়েছে। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে বনাঞ্চল ছিলো ১১ দশমিক ৫ শতাংশ। তা ২০১৪ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ১ শতাংশে।সুশাসনের বিষয়ে দেবপ্রিয় বলেন, এসডিজির এজেন্ডায় সুশাসন অন্তর্ভূক্ত করা একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। কিন্তু আমাদের উন্নয়ন পরিকল্পনার মধ্যে এখনো এটি এসেছে বলে মনে হচ্ছে না।অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ এর (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান। এছাড়াও অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, সিপিডির অতিরিক্ত পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষক তৌফিক ইসলাম খান প্রমুখ।এসআই/এআরএস/এমএস
Advertisement