মতামত

প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন

জাতিসংঘ মিশন থেকে ফিরে গতকাল রোববার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সফর পরবর্তী নানা বিষয়ে কথা বলেছেন। মূলত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭০তম অধিবেশনে যোগদানের নানা দিক তুলে ধরতেই এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হলেও বাদ যায়নি সাম্প্রতিক নানা প্রসঙ্গও। সঙ্গত কারণেই এসেছে দুই বিদেশি নাগরিক হত্যার প্রসঙ্গটিও। প্রধানমন্ত্রী কথা বলেছেন দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি, রাজনৈতিক সংকট থাকা না থাকা, জঙ্গিবাদসহ নানা বিষয়ে। বাদ যায়নি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষকদের আন্দোলনের বিষয়ও। দুই বিদেশি নাগরিক হত্যার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন-‘এ ঘটনার পেছনে নিশ্চয়ই তাদের (বিএনপি-জামায়াতের) মদদ আছে। আমাদের অর্জনগুলো ম্লান করানোর জন্য এই ঘটনাগুলো ঘটানো হয়। এর পেছনে নিশ্চয়ই একটা উদ্দেশ্য আছে। তাদের হাত আছে।’ আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএসের এ দেশে তৎপরতার বিষয়টি আলোচনায় থাকলেও প্রধানমন্ত্রী তা নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, এখন পর্যন্ত বলতে পারি, ‘আমাদের এখানে আইএস বা তেমন কোনো সংগঠনের তৎপরতা গড়ে উঠতে পারেনি।’এছাড়া নেতিবাচক বিষয়গুলো বেশি বেশি গণমাধ্যমে আসার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা একটি ঘটনা ঘটলে বেশি সেনসেটিভ হয়ে যাই- অর্জনগুলো যেন শ্যাডো হয়ে গেল, হারিয়ে গেল। আমরা এত মানসিক দৈন্যে কেন ভুগি।’এ কথা ঠিক একটি দেশ বা রাষ্ট্রের দু`একটি ঘটনা দিয়েই সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করা উচিত নয়। তবে কোনো ঘটনা ঘটলে তার প্রতিকারের জন্যই কিন্তু গণমাধ্যম বিষয়টি তুলে ধরে। যখন ব্যবস্থা নেওয়া হয়, মানুষজন আশ্বস্ত হয়। সে খবরও গণমাধ্যমে আসে। তাই ঘটনা ঘটলে হতাশার যেমন কারণ নেই, তেমনি ঘটনার খবরে উদ্বেগেরও অবকাশ নেই। মানুষ দেখতে চায় সরকার কী করছে। ‘জঙ্গিবাদ নেই, ষড়যন্ত্রকারীদের কাজ, ঘটনা সুপরিকল্পিত’- এসব বিষয় গড়পড়তা বলা যায়। কিন্তু দুই জন বিদেশি নাগরিকের হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া, খুনিদের এখনো ধরা না পড়ার বিষয়টি অবশ্যই উদ্বেগের। প্রশ্ন উঠেছে, গোয়েন্দা সংস্থা এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা নিয়েও। ঘোষণা দিয়ে ব্লগার হত্যা, একই কায়দায় দুই বিদেশি নাগরিককে খুন- এসব তো ঘটেই চলেছে। তাহলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর মানুষ আস্থা রাখবে কী করে? ত্বরিৎ কোনো ব্যবস্থা কেনো নেওয়া যায় না। এছাড়া যেসব এলাকায় হত্যা বা অপরাধকাণ্ড সংঘটিত হয় সেখানকার দায়িত্বরত পুলিশের কী কোনো দায় নেই? রংপুরে জাপানি নাগরিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে পুলিশ ফাঁড়ির কাছেই। রাজধানীতে কূটনৈতিক জোনে ইতালীয় নাগরিককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এর দায়-দায়িত্ব কে নেবে?  কথায় আছে চল্লিশ মণ দুধের মধ্যে এক ফোটা গো-মূত্রই কিন্তু সর্বনাশ করে। সরকারের যতই অর্জন থাক না কেন মানুষ যদি নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে (সেটা দেশি বিদেশি যারাই হোক না কেন) তাহলে শেষ পর্যন্ত সবকিছুই কিন্তু ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। তাই জান-মালের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে সর্বাগ্রে। জঙ্গিবাদ দ্বারাই হোক কিংবা ষড়যন্ত্রকারীদের মাধ্যমেই হোক- অস্থিতিশীল পরিস্থিতি কারোরই কাম্য নয়। এদিকে নজর দেওয়াটাই এখন জরুরি।এইচআর/এমএস

Advertisement