প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলপিজি) সর্বোচ্চ খুচরামূল্য নির্ধারণ ও নির্ধারিত সেই মূল্য সিলিন্ডার বোতলের গায়ে উল্লেখের বিষয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। রুলে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের এলপি গ্যাসের (তরলিকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস) মূল্য নির্ধারণে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়।
Advertisement
একই সঙ্গে সিলিন্ডারের গায়ে খুচরামূল্য লেখা এবং মূল্য নির্ধারণের জন্য কেন কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে জ্বালানি সচিব, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালককে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
সেই সঙ্গে সর্বোচ্চ খুচরামূল্য নির্ধারণে কমিটি গঠন ও মূল্য সিলিন্ডারের গায়ে লেখার বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, সে বিষয়ে জ্বালানি সচিব, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালককে আগামী ১ মার্চের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে।
এ সংক্রান্ত এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।
Advertisement
আদালতে এদিন রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. মনিরুজ্জামান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট অমিত তালুকদার।
আইনজীবী মো. মনিরুজ্জামান বলেন, বর্তমান নগরায়নের যে সময়টা চলছে এবং জাতি হিসেবে আমাদের যে অগ্রগতি তাতে বিকল্প জ্বালানি হিসেবে এলপিজি গ্যাসটা ব্যবহার করা হয়। এ গ্যাস সম্পূর্ণ আমদানি করা হয়। কিন্তু গ্যাসের সিলিন্ডারের মূল্য নির্ধারণের জন্য এখন পর্যত কোনো তদারকি বা কোনো নির্দিষ্ট দফতর নেই। ফলে এলপিজি গ্যাসের ক্রমবর্ধমান বাজারে একধরনের অরাজকতা বিরাজ করছে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ নিয়ে প্রকাশিত খবর, প্রতিবেদন সংযুক্ত করে গত ১৩ জানুয়ারি জনস্বার্থে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন এ আইনজীবী। রিটে এলপিজি গ্যাসের (সিলিন্ডার গ্যাস) মূল্য নির্ধারণের জন্য কমিশন গঠন ও সিলিন্ডারের গায়ে নির্ধারিত সে মূল্যের উল্লেখ থাকার নির্দেশনা চাওয়া হয়।
রিটকারী আইনজীবী সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের মূল কাজ হলো জ্বালানির যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করা। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো, এ বিষয়ে তাদের কোনো কর্মকাণ্ড নেই। এজন্য আদালতের কাছে মূল্য নির্ধারণের জন্য একটি কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়েছিলাম।
Advertisement
কমিটির কাজ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে এলপিজি গ্যাসের দাম কত আছে সে অনুপাতে আমাদের স্থানীয় বাজারে দাম কত হবে, তা নির্ধারণ করা। আইনজীবী মনিরুজ্জামান আও বলেন, খোলা বাজারে যখন এ গ্যাস বিক্রি করা হয় তখন সিলিন্ডারের গায়ে মূল্য লেখা না থাকায় বিক্রেতারা যে যার মতো দাম নিচ্ছে গ্রাহকদের কাছ থেকে। যেমন- গত নভেম্বরে আন্তর্জাতিক বাজারে এলপিজি গ্রাসের দাম প্রতি টনে ১০ ডলার বাড়ল, আর আমাদের এখানে প্রতি ১২ কেজির সিলিন্ডারে বাড়ল ১৩০ টাকা। অর্থাৎ টাকার হিসাবে ৮৫০ টাকা যদি আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়ে তাহলে সিলিন্ডারপ্রতি ১৩০ টাকা কীভাবে বড়ে!
গত ১ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক বাজারে ১২৯ ডলার দাম বাড়ার পরপরই ৪ জানুয়ারি আমাদের স্থানীয় বাজারে ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ২০০ টাকা বাড়িয়ে দেয়। যে সিলিন্ডার বিক্রি হয়েছে এক হাজার ১০০ টাকায়। অথচ বাড়তি দামের এলপিজি তখন পর্যন্ত বাজারেই আসেনি।
পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে আইনজীবী আরও বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের হিসাবে দেশে এলপিজির চাহিদা ছিল আট লাখ ২৫ হাজার টন। জ্বালানি মন্ত্রণালয় ও ব্যবসায়ীদের হিসাবে দেশে এলপিজি ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৩৮ লাখ। রাজধানীর পাশাপাশি জেলা, উপজেলা ও গ্রামপর্যায়েও এখন এলপিজি ব্যবহার করা হয়। এখন অনেক গাড়িতেও এলপিজি ব্যবহৃত হচ্ছে।
চাহিদা অনুযায়ী দেশে বার্ষিক ১৫ লাখ টনের বেশি এলপিজি দরকার। তবে আমদানি ও বিক্রি হচ্ছে বার্ষিক প্রায় ১০ লাখ টন। এর মধ্যে ২০ হাজার টন এলপিজি সরকারিভাবে বিক্রি হয়। অর্থাৎ বিপিসি মোট চাহিদার মাত্র ২ শতাংশ জোগান দেয়।
এআর/এফএইচ/এমএআর/পিআর/এমএস