নাগরিকত্ব সংশোধন আইন (সিএএ) ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা বুঝতে পারছি না কেন (ভারত সরকার) এটা করলো। তবে এটা দরকার ছিল না।’
Advertisement
সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরকালে সেখানকার সংবাদমাধ্যম গালফ নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ সরকারপ্রধান এ কথা বলেন।
তিন দিনের আরব আমিরাত সফরে গিয়ে ‘আবুধাবি সাসটেইনিবিলিটি উইক’ ও ‘জায়েদ সাসটেইনেবিলিটি অ্যাওয়ার্ড সেরিমনি’সহ কয়েকটি অনুষ্ঠানে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর গত ১৪ জানুয়ারি দেশে ফেরেন তিনি।
ব্যস্ত কর্মসূচিরই ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী গালফ নিউজকে ওই সাক্ষাৎকার দেন। এটি তাদের অনলাইনে প্রকাশ হয় শনিবার (১৮ জানুয়ারি)।
Advertisement
গত ডিসেম্বরে ভারতের সংসদে পাস হয় সিএএ। সংসদে বিলটি পাসের সময় ভারত সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ‘ধর্মীয় নির্যাতনের’ শিকার হয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়া সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দিতে এ আইন করা হয়েছে। যদিও বাংলাদেশে ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে কেউ দেশান্তরী হয়নি বলে জানিয়ে আসছে ঢাকা।
একদিকে সিএএ, অন্যদিকে আসাম রাজ্যে নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) প্রকাশের কারণে ভারত থেকে অনেকে বাংলাদেশে চলে আসছে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে খবর ছড়ায়।
নাগরিকত্ব সংশোধন আইনবিরোধী বিক্ষোভ চলছে ভারতজুড়ে
তবে এনআরসি প্রকাশের পর ভারত থেকে কেউ বাংলাদেশে আসছে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভারত থেকে উল্টো অভিবাসন হচ্ছে না (কেউ আসছে না)। বরং ভারতের জনগণ নানা সমস্যার মধ্যে আছে।’
Advertisement
সিএএ পাস এবং দেশজুড়ে এনআরসি কার্যকর করার ঘোষণা দেয়ার পর ভারতজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। সেই বিক্ষোভ রক্তপাতেও গড়িয়েছে। বাংলাদেশের বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, এনআরসি কার্যকর হলে যেসব ভারতীয় মুসলিম তাদের নাগরিকত্বের নথিপত্র দেখাতে পারবেন না, তারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা (এখনো) ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সিএএ এবং এনআরসিকে বাংলাদেশ সবসময় ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবেই দেখে আসছে। ভারত সরকারও বারবার বলে আসছে যে, এনআরসি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়, এমনকি গত অক্টোবরে আমার নয়াদিল্লি সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ব্যক্তিগত আমাকে একই কথা বলে নিশ্চিত করেছেন।’
বিস্তৃত ক্ষেত্রে সহযোগিতার মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বর্তমানে যেকোনো সময়ের তুলনায় সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হতেই হবেপ্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে বাস্তুচ্যুত করে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে উদ্বেগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমার থেকেই রোহিঙ্গা সংকটের সৃষ্টি এবং এর সমাধানও সেখানে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হলো, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসনসহ তাদের এমন অজস্র সংকট মোকাবিলায় কোনো অর্থবহ পদক্ষেপ এখনো নেয়নি মিয়ানমার। প্রত্যাবাসনে (এখন পর্যন্ত) দুটি উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে, একজন রোহিঙ্গাও স্বেচ্ছায় ফিরতে রাজি হয়নি। এতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরিতে মিয়ানমার সফল হয়নি।’
বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে ১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা
এই বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার বোঝা বাংলাদেশ অনির্দিষ্টকাল বয়ে বেড়াবে না বলেও সাফ জানিয়ে দেন সরকারপ্রধান। শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই সমস্যা যদি থেকেই যায়, তবে তা এ অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। সেজন্য এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান না হওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাজ করে যাওয়া উচিত।
সরকারপ্রধান জানান, বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাংলাদেশ এতদিন গ্যাসে নির্ভর করত। গ্যাস ফুরিয়ে আসায় উন্নয়নের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে এখন কয়লাসহ অন্য উৎসের দিকে নজর দিতে হচ্ছে। তবে বাংলাদেশ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতের দিকে মনোযোগ বাড়ালেও পরিবেশের সুরক্ষার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে।
বিশাল জনগোষ্ঠীর দেশে প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর চাপ বাড়ার বিষয়টি উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে কীভাবে তার সরকার উন্নয়ন করে যাচ্ছে, তা-ও তুলে ধরেন সাক্ষাৎকারে।
এইচএ/পিআর