সড়কে জীবনের নিরাপত্তার বিষয়ে চালকদের উদ্দেশে চলচ্চিত্র তারকা সাইমন সাদিক বলেছেন, 'শুধু আপনার জীবনই নয়, আপনার পরিবারের কথা অন্যের পরিবারের কথা ভেবে চালক হিসেবে দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। দুর্ঘটনার পর অনেক সময় আপনারা আন্দোলনে নামেন। আমরা আন্দোলন চাই না, কোনো দুর্ঘটনা, মৃত্যু চাই না। কারণ আপনার দিকে তাকিয়ে থাকে যেমন একটা পরিবার, তেমনি যিনি আপনার যানবাহনে বসে আছেন তার দিকেও তাকিয়ে অনেক মুখ। আমাদের সবাইকে ভাবতে হবে যে, সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য বেশি। কোনো অপমৃত্যু আমাদের কাম্য নয়।'
Advertisement
শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) সড়ক নিরাপত্তা আইন-২০১৮ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এবং পথচারীর নিরাপত্তা সম্পর্কে রিকশা, যানবাহন, মোটরসাইকেল ও রাইড শেয়ারিং অ্যাপসের চালকদের প্রশিক্ষণ দেয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পাথওয়ে। বিকেল ৫টায় রাজধানীর মিরপুর-৬ এর বি ব্লকের ২নং সড়কের ১নং হাউজে সংস্থার কার্যালয়ে দুই ঘণ্টাব্যাপী প্রশিক্ষণ ও সচেতনতামূলক এ কর্মসূচির চলে। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এসব কথা বলেন চলচ্চিত্র তারকা সাইমন সাদিক।
সড়কে না হেঁটে ফুটপাত ব্যবহারের জন্য পথচারীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, 'হঠাৎ করে সড়কে নেমে ৭০/৮০ কিলোমিটার স্পিডের গাড়ি থামিয়ে দেবেন না। আগে জীবন, তারপর সময়। ট্রাফিক নির্দেশনা অমান্য করে গতিসম্পন্ন গাড়ি থামাতে গিয়ে মৃত্যু ডেকে আনবেন না। আশা করছি, এ প্রশিক্ষণ ও সচেতনতামূলক কর্মসূচির মাধ্যমে অংশগ্রহণকারী চালক ভাইরা সড়কে দক্ষ চালকের পরিচয় দেবেন।'
কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের নতুন সড়ক নিরাপত্তা আইন ও সড়কে যানবাহন চালনা, যাত্রী-পথচারী নিরাপত্তার নানা দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ।
Advertisement
তিনি বলেন, 'দুর্ঘটনা তখনই বেশি ঘটে যখন সড়কে যানবাহন কম থাকে বা তুলনামূলক ফাঁকা থাকে। কারণ কে আগে বা পরে যাবে সে সম্পর্কে না জেনে যানবাহনের গতি বাড়িয়ে দিয়ে ঝুঁকি তৈরি করে। কোন যানবাহন জরুরি কোনটা কম জরুরি তা অধিকাংশ চালকই জানে না। নতুন নতুন যানবাহন সড়কে নামলেও চালকের মানসিকতা ও জ্ঞান সেকেলে। তাছাড়া সড়কের অবস্থা এবং সংকেতগুলো বুঝে না।'
তিনি বলেন, 'সড়কে দুর্ঘটনা শুধু চালকের কারণেই ঘটে না। পথচারী ও কখনো কখনো যাত্রীর বেপরোয়া মানসিকতার কারণে ঘটে। তবে চালক হিসেবে দুর্ঘটনার দায়টা বেশি। কারণ দুর্ঘটনা ঘটলে প্রথম দায় চাপানো হয় চালক-হেলপারের ওপরে।'
তিনি বলেন, 'রাগ-ক্ষোভ ও বিরূপ মেজাজ নিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসবেন না। বেপরোয়াভাবে রেষারেষি করে গাড়ি চালাবেন না। ইনডিকেটর, টায়ার, ব্রেক সবসময় চেক করবেন। দুর্ঘটনা ঘটলে নতুন আইনে চালক দায়ী হতে পারেন, কিংবা মৃত্যু ও পঙ্গুত্ব ডেকে আনতে পারেন। সবচেয়ে বড় বিষয় ড্রাইভিং সিটে বসা মানে সব যাত্রীর নিরাপত্তা কিংবা অন্য পরিবহনের যাত্রীর দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।'
বাংলাদেশ ড্রাইভার্স ট্রেনিং সেন্টারের মহাপরিচালক ট্রেনিং (থিওরি অ্যান্ড রোড) মো. মিজানুর রহমান বলেন, 'সরকার সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে ২৭ হাজার ৭৯৩ রিকশা এবং দুই হাজার ভ্যানসহ মোট ২৯ হাজার ৭৯৩টির লাইসেন্স প্রদান করেছে। কিন্তু পরিসংখ্যানে দেখা যায় এরপরেও কয়েক লাখ লাইসেন্সবিহীন রিকশা ও ভ্যান সড়কে বিভিন্ন স্থানে চলাচল করছে। কোনো রিকশাচালকেরই সড়ক ব্যবহার বিধির ওপর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই।'
Advertisement
পাথওয়ে'র নির্বাহী পরিচালক মো. শাহিন বলেন, 'মোটরসাইকেল এবং রাইড শেয়ারিং চালকদের ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে অধিকাংশ চালকদের তেমন কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। যার ফলে দেখা যাচ্ছে সড়কে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে এবং তারা বিভিন্ন সময়ে সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছেন। এছাড়াও দেখা যাচ্ছে, মহাসড়ক গুলোতে নসিমন, করিমন ও ইজি বাইকসহ বিভিন্ন ধরনের ছোট এবং মাঝারি যানবাহন চলাচল করছে। এগুলোর চালকরা সঠিকভাবে সড়ক ব্যবহার করছেন না। ফলে বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনার সৃষ্টি হচ্ছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব তাদেরকে একটি প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। যাতে করে তারা সড়কের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পারে এবং সড়ককে নিরাপদ রাখতে পারে। আমরা পাথওয়ের মাধ্যমে সেই কাজটিই করছি।'
জেইউ/এফআর/পিআর