অদৃশ্য সাপের দংশন-আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার দুই গ্রামের প্রায় দশ হাজার মানুষ। ইতোমধ্যে এ গায়েবি সাপ আতঙ্কে গ্রাম ছেড়েছেন অনেকে। বন্ধ হয়ে গেছে ছেলেমেয়েদের স্কুল কলেজে যাওয়া। এলাকাবাসি জানিয়েছেন, গায়েবি এই সাপ বাতাসের মতো গায়ে পড়ে কামড় বসিয়ে হাওয়ায় অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, এটি ‘মাস সাইকোজেনিক ইলনেস’ বা গণমানসিক অসুস্থতা। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার সূত্রপাত গত ১০ সেপ্টেম্বর। এদিন রাতে ওই উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের জায়েদপুর গ্রামের মকছেদ আলীর ছেলে বাবর আলী সাপের কামড়ে মারা যান। এরপর থেকে ওই গ্রামের লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গ্রামের লোকজনের দাবি হঠাৎ করেই শরীরের যেকোনো স্থানে মশার কামড়ের মতো অনুভব হচ্ছে। কিছু সময়ের মধ্যেই অসহনীয় জ্বালা পোড়া, শরীর ঝিনঝিন, মাথা ঘোরা ও চোখে অন্ধকার নেমে আসছে। এছাড়া একই উপজেলার পান্টি ইউনিয়নের জেয়ার্দার পাড়া ও পশ্চিম পাড়া এলাকার মানুষের মধ্যে একই ধরনের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। নারীদের মধ্যেই এ আতঙ্ক বেশি বিরাজ করছে। গ্রামবাসীর দাবি, এ পর্যন্ত শতাধিক মানুষকে সাপে দংশন করেছে। এসব জিন সাপের কাজ। এ সাপ দেখা যায় না, বাতাসের মতো আসে। তারপর দংশন করে চলে যায়। সাপের কামড়ে মাথা ঘোরা, পায়ে জ্বালাপোড়া, বমি ও খিঁচুনি হয়। তারা বলছেন, একমাত্র কবিরাজের মাধ্যমেই বিষ নামিয়ে সুস্থ হওয়া সম্ভব। সে কারণে এলাকার কবিরাজ বাড়িতে সাপের বিষ নামাতে গ্রামবাসী ভিড় করছেন। এই সুযোগে তথাকথিত কবিরাজরা গাঁট মোটা করছেন। তারা আতঙ্কগ্রস্ত মানুষের শরীর ব্লেড দিয়ে কেটে ও বাবলা গাছের কাঁটা ফুঁটিয়ে চিকিৎসা করছেন। এর পাশাপাশি চলছে মসজিদে শিরনি বিতরণ ও দোয়া অনুষ্ঠান এবং ‘সাপের দেবি মা মনসাকে’ তুষ্ট করতে পদ্ম পূরাণ পালাগান।‘সাপের কামড়ের শিকার’ সাহেলা খাতুন জাগো নিউজকে জানান, ‘হঠাৎ করেই শরীরের যেকোনো স্থানে মশার কামড়ের মতো অনুভব হচ্ছে। কিছু সময়ের মধ্যেই অসহনীয় জ্বালাপোড়া অনুভূত হচ্ছে। সেই সঙ্গে শরীর ঝিনঝিন করা, মাথা ঘোরা ও চোখে অন্ধকার নেমে আসছে। সকলে বলছে সাপে কামড়েছে। কিন্তু সাপকে কামড়াতে তো দেখলাম না। আবার কবিরাজরা বলছে যে সাপে কামড়িয়েছে।এদিকে, অদৃশ্য এই সাপের কামড় আতঙ্কে গ্রাম ছাড়ার ঘটনাও ঘটেছে। অনেকেই বাড়িতে তালা লাগিয়ে সাপে কাটার ভয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। আতঙ্কে অনেকেই নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। সাপের ভয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে অনেক শিক্ষার্থী। খোদ জনপ্রতিনিধিরাও ব্যাপারটিকে বিশ্বাস করছেন। এদিকে, মানুষের আতঙ্ক দূর করতে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে এলাকায় মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। তারা এলাকায় সচেতনতামূলক কাজ করছে। এটাকে ‘গণমানসিক অসুস্থতা’ আখ্যায়িত করে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ চিকিৎসকদের। কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আকুল উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, এটা আসলে কোনো রোগ নয়। এটা মানুষের মাঝে একটা আতঙ্ক। কিছু মানুষ আছেন যারা ওই গ্রামে এ ধরনের গুজব ছড়িয়ে মানুষের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করছেন। কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনের সংসদ সদস্য আব্দুর রউফ রোববার এলাকা পরিদর্শন করে মানুষকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেন।আল-মামুন সাগর/এমজেড/আরআইপি
Advertisement