ভারতের রাজধানী শহর দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) মতো রাতের অন্ধকারে হামলা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়েও। গত বুধবার রাতে বিশ্বভারতীর হোস্টেলে ঢুকে ছাত্রদের ব্যাপক মারধর করা হয়। এ ঘটনায় অচিন্ত্য বাগদি ও সাবের আলি নামে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আরেক অভিযুক্ত সুলভ কর্মকার এখনো পলাতক।
Advertisement
আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়,বৃহস্পতিবার দুই আসামিকে বোলপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা, গুরুতর আঘাতসহ একাধিক অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে।
ঘটনার বর্ণনায় বিশ্বভারতীর শিক্ষার্থীরা জানান, অচিন্ত্য ও সাবের বুধবার বিকেলে আন্দোলনকারী অংশুক মুখোপাধ্যায়কে খুঁজতে বিদ্যাভবন বয়েজ় হোস্টেলে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাকে না পেয়ে রুমমেটটকে শাসিয়ে চলে আসেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে অংশুকের খোঁজ নিতে হোস্টেলে যাচ্ছিলেন দেবব্রত নাথ, স্বপ্ননীল মুখোপাধ্যায়সহ তিন ছাত্র। যাওয়ার পথে তাদের পথ আটকান অচিন্ত্যরা।
দেবব্রত বলেন, ‘ওরা আমাদের বলে, এত রাতে এখানে কী করছিস? তোরা তো হোস্টেলে থাকিস না!’ এই নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে স্বপ্ননীলকে পেরেক লাগানো কাঠের বাটাম দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। দেবব্রতের দাবি, অচিন্ত্যরা তাকে উইকেট দিয়ে পিটিয়েছেন, সঙ্গে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজও করেন।
Advertisement
হামলার খবর পেয়ে হোস্টেলে আসেন একাধিক শিক্ষক। আহত ছাত্রদের দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান তারা। অভিযোগ উঠেছে, সেখানেও তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে দৃষ্কৃতকারীরা।
তবে এমন পরিস্থিতিতে নিরাপত্তারক্ষীরা কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগীরা। এছাড়া রাতে পুলিশকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা আসেনি বলে অভিযোগ ছাত্রদের।যদিও এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পুলিশ সুপার। তিনি বলেন, বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে লিখিত বা মৌখিকভাবে কিছু জানায়নি। তারা না চাইলে পুলিশ ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারে না।
বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল চলছে। এ ইস্যুতে কিছুদিন আগে বিজেপির সংসদ সদস্য স্বপন দাশগুপ্ত একটি আলোচনা সভায় যোগ দিতে গেলে সেখানে তাকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ করে ছাত্ররা। এ ঘটনার শোধ নিতেই বুধবার রাতে হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে, ছাত্রদের ওপর হামলাকারীদের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা। কেউই তাদের দায় নিতে চাচ্ছে না।
Advertisement
বামপন্থী ছাত্রসংগঠন এসএফআইয়ের দাবি, অচিন্ত্য ও সাবের দু’জনই বিজেপির ছাত্রসংগঠন এবিভিপি’র সদস্য। যদিও এবিভিপি তা অস্বীকার করেছে। আর অচিন্ত্যর দাবি, তিনি তৃণমূলের সদস্য। কিন্তু তাকে অনেক আগেই বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)।
এছাড়া, হামলার ঘটনায় উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকেও দায়ী করেছেন অনেকেই। বৃহস্পতিবার তার পদত্যাগ দাবি করে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ, অচিন্ত্য ও সাবের উপাচার্যের ঘনিষ্ঠ।
যার বক্তৃতায় বাধা দেয়ার অভিযোগ নিয়ে এত ঘটনা সেই স্বপন দাশগুপ্ত বলছেন, এটা ছাত্র-সংঘর্ষের ঘটনা মাত্র। দু’পক্ষই তৃণমূলের মতো! এরসঙ্গে এবিভিপি’র কোনো সম্পর্ক নেই।
এসএ/এমকেএইচ