লেখাপড়া শেষ করে একটি বেসরকারি সংস্থায় (এনজিও) চাকরি করছেন সুজন হাসান জয়। চার বছর আগে তিনি শখের বসে বাড়ির ছাদে দুটি বিদেশি মুরগি পালন শুরু করেন। দুটি মুরগি থেকে এখন তার খামারে শতাধিক বিদেশি মুরগি। এই মুরগি পালন করেই মাসে ২৫-৩০ হাজার টাকা বাড়তি আয় করছেন এই যুবক। এই মুরগির খামার দেখে উদ্বুদ্ধ এলাকার বেকার যুবকরাও।
Advertisement
সাতক্ষীরা শহরের মুনজিতপুর এলাকার ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলামের ছেলে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুজন হাসান জয়। বাড়ির ছাদে জয়ের গড়ে তোলা মুরগির খামারে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির দেড় শতাধিক বিদেশি মুরগি। স্বল্প ব্যয় ও অধিক লাভজনক হওয়ায় জয় ঝুঁকেছেন মুরগি পালনে। মুরগির খামারটি দেখার জন্যও ছুটে আসেন বিভিন্ন এলাকার বেকার যুবকরা।
খামারি সুজন হাসান জয় বলেন, সখের বসে চার বছর আগে বগুড়া থেকে দুটি আমেরিকান সিল্কি মুরগি ক্রয় করে বাড়ির ছাদে পালন করা শুরু করি। দুটি মুরগি থেকে ডিম ও বাচ্চা দিলে মুরগির সংখ্যা বাড়তে থাকে। এছাড়া বিভিন্ন স্থান থেকে অন্যজাতের বিদেশি মুরগি সংগ্রহ করতে থাকি। এভাবেই বাড়ির ছাদে গড়ে তুলি ছোট একটি মুরগির খামার।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে খামারে বিভিন্ন দেশের ৯ প্রজাতির শতাধিক মুরগি রয়েছে। ইউরোপিয়ান ব্রামা, কচিং, আমেরিকান সেভ রাইট, সিল্কি ও ফিজেল, নেদারল্যান্ডস’র পলিশক্যাপ ও সেরমা, ভারতীয় কাদারনাথ ও বেনটাম প্রজাতির মুরগি রয়েছে সংগ্রহে। সংগ্রহে থাকা এ মুরগিগুলোর দাম বর্তমানে পাঁচ লাখ টাকারও বেশি।
Advertisement
জন হাসান জয় জানান, ইউরোপিয়ান ব্রামা মুরগি এক জোড়া বিক্রি হয় ২০ হাজার টাকা, বাচ্চা ৭-৮ হাজার টাকা। ইউরোপিয়ান কচিং মুরগির এক জোড়ার মূল্য ১০ হাজার টাকা, বাচ্চা ৪ হাজার টাকা। আমেরিকান সেভরাইট এক জোড়া ১২ হাজার টাকা, বাচ্চা ৫ হাজার টাকা, সিল্কির এক জোড়া ৭ হাজার টাকা, বাচ্চা দেড় হাজার টাকা। ফিজেল এক জোড়া ১০ হাজার টাকা, বাচ্চা ৪ হাজার টাকা, নেদারল্যান্ডস’র পলিশক্যাপ এক জোড়া ১৫ হাজার টাকা, বাচ্চা ৫ হাজার। সেরমা এক জোড়া ৮ হাজার টাকা, বাচ্চা দুই হাজার টাকা, ভারতীয় কাদারনাথ এক জোড়া ৩ হাজার টাকা, বাচ্চা ৫শ টাকা ও বেনটাম এক জোড়া ৫ হাজার টাকা, বাচ্চা দেড় হাজার টাকায় বিক্রি হয়।
তিনি বলেন, ঢাকা, বগুড়া, বরিশাল, খুলনা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রামের সৌখিন খামারিরা এসব মুরগি ক্রয় করেন। এছাড়াও স্থানীয় দুই একজন ক্রয় করেন। প্রতি মাসে আমার মুরগির খাবারসহ আনুসঙ্গিক খরচ হয় ৫-৬ হাজার টাকা। বর্তমানে প্রতি মাসে আয় হচ্ছে ২৫-৩০ হাজার টাকা। এসব মুরগি পালনে খুব বেশি পরিশ্রম করতে হয় না। সখের এই মুরগি পালন করে আমি স্বাবলম্বী হয়েছি।
জয়ের মা লিলি বেগম জানান, মুরগি পালন করে নিজের খরচ নিজেই জোগাড় করে জয়। এছাড়া সংসারেও খরচ দেয়। প্রতি মাসেই ২৫-৩০ হাজার টাকা রোজগার করে। অনেক সময় ছেলে বাড়িতে না থাকলে মুরগিগুলোর খাবার আমি সরবরাহ করি। অনেক সময় বিভিন্ন স্থান থেকে যুবকরা এই খামার দেখতে আসে।
৫ হাজার টাকায় এক জোড়া আমেরিকান সেভরাইট মুরগি ক্রয় করেছেন মুনজিতপুর এলাকার গৃহিণী সাকিলা বেগম। তিনি বলেন, জয়ের বিদেশি মুরগি পালন দেখে সখ করেই এক জোড়া ক্রয় করেছি। আমিও খামার গড়ে তোলার চেষ্টা করছি।
Advertisement
সাতক্ষীরা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, জয় নামের ওই যুবক কখনো আমাদের কাছে সহযোগিতা চেয়ে আসেনি। ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি প্রোগ্রাম নামে আমাদের প্রজেক্ট রয়েছে। এর মাধ্যমে উদ্যোগী যুবকদের সহায়তা করার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া লাইভ স্টক অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট নামে নতুন আরেকটি মেগা প্রকল্প চালু হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমেও সহযোগিতা করা যাবে। আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা ছাড়াও খামারটি আরও উন্নত ও সম্প্রসারণের জন্য আর্থিকভাবে সহযোগিতা করবো।
আরএআর/এমএস