২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে করা ছয় জাতির পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে বিরোধ শুরু হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নভূক্ত (ইইউ) চুক্তির অংশীদার তিন সদস্যরাষ্ট্র ফ্রান্স, জার্মানি এবং যুক্তরাজ্য এক যৌথ বিবৃতি দেয়ার পর ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি তাদের সতর্ক করে বলেছেন, যদি কিছু হয় তাহলে ইউরোপিয়ান সেনারাও বিপদে পড়বে।
Advertisement
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সাম্প্রতিক উত্তেজনার পর ইরান চুক্তির শর্ত না মানার ঘোষণা দেয়। তার প্রায় এক সপ্তাহ পর গতকাল চুক্তির অপর তিন পক্ষ যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি বিবৃতিতে জানায়, ইরানের যুক্তি তারা মেনে নেয়নি। তবে একই সঙ্গে ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ চাপপ্রয়োগের প্রচারণাতেও তারা যোগ দিচ্ছে না।
ব্রিটিশ দৈনিক ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেন, ‘আজ আমেরিকার সেনারা বিপদে আছে, আগামীকাল ইউরোপিয়ান সেনারাও বিপদে পড়তে পারে।’ ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে চুক্তি থেকে প্রত্যাহারের পর ইউরোপের অংশীদাররা এতদিন চুক্তিটি বাঁচিয়ে রাখার ইচ্ছা পোষণ করে আসছিল।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় নতুন করে আরও একটি পারমাণবিক চুক্তি করার যে প্রস্তাব ইরানকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন দিয়েছেন তা প্রত্যাখান করে হাসান রুহানি বলেন, ‘লন্ডনের প্রধানমন্ত্রী এটা কী করে ভাবছেন তাই আমি বুঝি না। তিনি চুক্তিটিকে পাশ কাটিয়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আহ্বান জানাচ্ছেন।’
Advertisement
ইরানের প্রেসিডেন্ট ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে আরও বলেন, ‘আপনি যদি ভুল পদক্ষেপ নেন, তাহলে এটা হবে আপনার জন্য ক্ষতির। সঠিক পথে আসুন। আর সঠিক পথ হচ্ছে পারমাণবিক চুক্তিতে ফিরে আসা।’ ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল পার্লামেন্টে বলেন, ‘ইরান পারমাণবিক উৎপাদন সংক্রান্ত চুক্তির বেশ কিছু শর্ত লঙ্ঘন করছে।’
পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে বিরোধের এই প্রক্রিয়ায় জার্মানি, ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্যের বিবৃতিতে বিতর্ক শুরু হয়েছে। তাদের এই বিতর্কের কারণে শেষ পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে পারে ইরান। এমনকি জাতিসংঘ পুনরায় ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে।
ছয় বিশ্ব শক্তির সঙ্গে ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তির শর্ত ইরান মানবে না বলে গত ৬ জানুয়ারি ঘোষণা দেয়। পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণের সীমা না মানার ঘোষণার সঙ্গে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করে ইরান।
ইরান শর্ত মানছে না দাবি করে ২০১৮ সালে চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন ট্রাম্প। আগের চুক্তি বাতিল করে নতুন চুক্তি স্বাক্ষরে আগ্রহী বলে জানান তিনি। এরপর ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির লাগাম টানতে দেশটির বিরুদ্ধে বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন চুক্তির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে ইরান। কিন্তু চুক্তির অন্যান্য পক্ষ জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ছাড়াও রাশিয়া এবং চীন এই চুক্তি বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছিল। কিন্তু মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানের তেল রফতানিতে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এছাড়া চুক্তির শর্ত ইরান না মানার ঘোষণা দেয়ার এক সপ্তাহ পর তিনপক্ষের ওই বিবৃতির কারণে চুক্তিটির ভবিষ্যত এখন গভীর সংকটে।
Advertisement
এসএ/এমকেএইচ