ভারতের মেডিক্যাল শিক্ষার্থী নির্ভয়া ধর্ষণকাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত চার আসামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর পিছিয়ে যাচ্ছে। চার ধর্ষকের একজন মঙ্গলবার নতুন করে ফাঁসি মওকুফের আবেদন করায় আগামী ২২ জানুয়ারি ফাঁসি কার্যকরের কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। বুধবার নয়াদিল্লি সরকার হাইকোর্টকে এ তথ্য জানিয়েছে বলে এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
Advertisement
গত সপ্তাহে দিল্লি হাইকোর্ট জানিয়েছিল, নির্ভয়া ধর্ষণকাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত বিনয় শর্মা, মুকেশ কুমার, অক্ষয় কুমার সিংহ এবং পবন গুপ্তকে আগামী বুধবার (২২ জানুয়ারি) সকাল সাতটায় তিহার কারাগারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে দেশটির এক তরুণী মেডিকেল ছাত্রীকে চলন্ত বাসে নির্যাতন, গণধর্ষণ এবং হত্যার ঘটনার সাত বছর পর তাদের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করা হয়।
এনডিটিভি বলছে, অভিযুক্ত মুকেশ কুমার মঙ্গলবার ফাঁসি মওকুফের আবেদন করেছে। এই আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার পর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগে দেশটির আইনে অন্তত ১৪ দিনের নোটিশ দেয়ার বিধান রয়েছে।
মঙ্গলবার বিচারপতি মনমোহন এবং সঙ্গীতা ধিংড়া শেহগালকে দিল্লি সরকার ও কেন্দ্র জানায়, আসামি মুকেশ সিং নিজের মৃত্যুদণ্ডের পরোয়ানাকে চ্যালেঞ্জ করে যে আবেদন দায়ের করেছেন সেটি প্রিম্যাচিওর।
Advertisement
তিহার কারাগার কর্তৃপক্ষ বলছে, মৃত্যু পরোয়ানা কার্যকর করার আগে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা করার আবেদনের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। নয়াদিল্লি সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী আইনজীবী রাহুল মেহরা বলেন, রাষ্ট্রপতি আসামির প্রাণ ভিক্ষার আবেদন প্রত্যাখ্যান করলে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির ভাগ্য চূড়ান্ত হবে।
দিল্লি হাইকোর্ট বলছে, প্রাণভিক্ষার আবেদনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত ২২ জানুয়ারি চার অভিযুক্তের কাউকে ফাঁসিতে ঝোলানো যাবে না।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর দিল্লির একটি হলে সিনেমা দেখে বন্ধুর সঙ্গে বাসে করে ফিরছিলেন প্যারামেডিক্যালের ওই ছাত্রী। যাত্রী কম থাকায় বাসের চালক-সহকারী-সহ অন্তত ছয়জন মিলে নির্ভয়ার বন্ধুকে পিটিয়ে হাত-পা বেঁধে বাসের পেছনের দিকে ফেলে রাখে। মেয়েটিকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে তারা। পরে দু'জনকে দিল্লির একটি সড়কের পাশে বাস থেকে ছুড়ে ফেলা হয়।
পরে আহত অবস্থায় দেশটির সরকার মেডিক্যাল এই শিক্ষার্থীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর পাঠায়। সেখানে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর ২৬ ডিসেম্বর মারা যান তিনি। এ ঘটনায় ভারতজুড়ে তীব্র বিক্ষোভ শুরু হয়। নির্ভয়ার হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ সাজার দাবিতে দেশটির লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে দিনের পর দিন বিক্ষোভ করতে থাকেন।
Advertisement
নির্ভয়া হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি বাসচালক রাম সিং কারাগারে বন্দি অবস্থায় মারা যান। এছাড়া দোষী সাব্যস্ত আরেক ধর্ষক কিশোর থাকায় আদালতের নির্দেশে তাকে তিন বছরের জন্য দেশটির কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়।
২০১৫ সালে সাজার মেয়াদ শেষে এই তরুণ মুক্তি পাওয়ার পর আবারও ভারতে তীব্র বিক্ষোভ সৃষ্টি হয়। পরে দেশটির ধর্ষণের সাজার আইন পরিবর্তন করে ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সীদেরও ‘প্রাপ্তবয়স্ক’ হিসেবে বিবেচনা করার বিধান করা হয়।
২০১৩ সালে দেশটির দ্রুত বিচার আদালত বাকি চার ধর্ষকের সর্বোচ্চ সাজা ঘোষণা করে। পরে দেশটির হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগও ওই সাজা বহাল রাখে।
সূত্র : এনডিটিভি।
এসআইএস/পিআর