‘সেই তো নখ খসালি, তবে কেন লোক হাসালি?’ গ্রাম বাংলার বহুল প্রচলিত প্রবাদ। দুঃখজনক হলেও সত্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের অবস্থা হয়েছে ঠিক তাই।
Advertisement
যাব না, পাকিস্তান যাব না। আর গেলেও এক সপ্তাহের বেশি থাকবো না। থাকা যাবে না। পাকিস্তানে মোটেই জীবনের নিরপত্তা নেই। রাজ্যের নিরাপত্তা হুমকি বিরাজমান। নানারকম ঝক্কি আর ঝুঁকি আছে সেখানে।
তারপরও সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে অনুমতি মিলেছে বড়জোর ৭ থেকে ৮ দিনের জন্য পাকিস্তান থাকার ব্যপারে। তা জানিয়েই বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ৪৮ ঘণ্টা আগে স্থানীয় প্রচার মাধ্যমকে জানিয়েছেন, কোনোভাবেই পাকিস্তানে সাত থেকে আট দিনের বেশি অবস্থান করা যাবে না। তাই আমরা আপাততঃ তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে পাকিস্তান যাচ্ছি।
শেষ পর্যন্ত এসব বক্তব্য, মুখের কথা মুখেই থেকে গেছে। বাংলাদেশ পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতেই পাকিস্তান যাচ্ছে। তাও একবারে নয়। তিন দফায়। প্রথমে ২৪-২৭ জানুয়ারি তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে। সেই তিন ম্যাচ হবে লাহোরে। এরপর ফিরে এসে আবার যাবে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। ওই ধাপে রাওয়ালপিন্ডিতে একটি টেস্ট (৭-১১ ফেব্রুয়ারি) খেলবে টাইগাররা।
Advertisement
আর তৃতীয় ও শেষবার আবার পাকিস্তান যাবে এপ্রিলের প্রথম ভাগে। ৩ এপ্রিল একটি ওয়ানডে এবং ৫-৯ এপ্রিল দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট। এই পর্বের খেলা হবে করাচিতে।
তার মানে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ আর তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ পুরো। সঙ্গে যোগ হলো একটি ওয়ানডেও এবং সেটা একবারে নয়, তিনবারে। পাকিস্তানের তিন শহর লাহোর, রাওয়ালপিন্ডি ও করাচিতে।
তার মানে পিসিবির সব দাবিই মেনে নিয়েছে বিসিবি। তার মানে শেষ পর্যন্ত ক্রিকেট কুটনীতিতে জয় হলো পিসিবিরই। তারা পূর্ণাঙ্গ সিরিজে বাংলাদেশকে চেয়েছিল। তবে সেটা ছিল একবারে অন্তত ১৭-১৮ দিনের। তবে বিসিবি এই বলে আত্মতৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে পারে, তাহলো- আমরা তিনবারে গেলেও কোনোবারই গড়পড়তা সাত-আট দিনের বেশি থাকবো না। কারণ, যে সফরসূচি দেয়া হয়েছে, তাতে সবক’টা সফরই ছোট্ট পরিসরের। কোনোবারেই সাত থেকে আট দিনের বেশি অবস্থানের সুযোগ নেই।
এদিকে পিসিবির দেয়া প্রেস রিলিজ দেখার অল্প কিছুক্ষণ পর বিসিবি পরিচালক ও মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস জাগো নিউজকে জানিয়েছিলেন, ‘আমরা আপাতত শুধু তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে যাব। সেটা খেলে আসার পর অবস্থা বুঝে বাকি ম্যাচগুলো খেলার চিন্তা করবো। আমরা প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে পুরো বিষয়টি পরিষ্কার করবো।’
Advertisement
জালাল ইউনুসের কথা শুনে মনে হয়েছিল তাহলে বিসিবি আপাততঃ শুধু টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতেই যাবে। তারপর টি-টেয়েন্টি সিরিজ খেলার পর জাতীয় দল দেশে ফিরে এসে ক্রিকেটার, কোচিং স্টাফ আর সবাই মিলে পাকিস্তানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও আনুসাঙ্গিক বিষয় পর্যবেক্ষণের পর বাকি ম্যাচ খেলতে যাওয়া নিশ্চিত হবে।
কিন্তু কিছুক্ষণ পর বিসিবি মিডিয়া ম্যানেজার রাবিদ ইমামের পাঠানো প্রেস রিলিজ। এই প্রেস রিলিজ যেন পিসিবির দেয়া প্রেস রিলিজেরই কার্বণ কপি! এবং সেখানে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের একটি ছোট্ট বিবৃতিও আছে।
সেখানে নাজমুল হাসান পাপন পিসিবিকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, ‘আমি অবশ্যই পিসিবিকে ধন্যবাদ দিব পরিবেশ-পরিস্থিতিটা অনুভব করার জন্য। আমরা সন্তুষ্ট যে দু’পক্ষ মিলে একটা গ্রহণযোগ্য সমাধান করতে পেরেছি। যা আইসিসি এফটিপির বাস্তবায়নে এক বড় উদাহরণ হয়ে থাকবে।’
প্রশ্ন হলো, যদি বিসিবি পূর্ণাঙ্গ সফরে যেতে রাজিই হয়। তাহলে কেন জালাল ইউনুস জাগো নিউজকে মুঠোফোনে এমন একটা ভিন্ন কথা বলতে পারলেন?
তাকে উদ্বৃত করে জাগো নিউজে প্রকাশিত সংবাদ সম্পর্কে ব্যাখ্যা চাইলে জালাল ইউনুস বলেন, ‘আমি বলিনি যে, আমরা পরবর্তীতে টেস্ট খেলতে যাব না। আমি বলেছি, আগে প্রাথমিকভাবে আমরা তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে পাকিস্তান যাব। তারপর যেহেতু আরও দুইবার যাবার বিষয় আছে, তাই টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলে আসার পর পুরো সফরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ আনুসাঙ্গিক বিষয় পর্যালোচনা করা হবে। সেটা সন্তোষজনক হলে পরেরবার খেলতে যাবে। পিসিবি যে তিন বারে পূর্ণাঙ্গ সূচি করেছে, সে খেলার সূচির সাথে দ্বি-মত নেই আমার। তবে যাবার আগে প্রতিবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুঁটিয়ে সব বিচার বিশ্লেষণ করে তারপর যাবার কথা বুঝিয়েছি।’
এআরবি/আইএইচএস/এমএস