দেশের ৬১টি স্বায়ত্তশাসিত, সরকারি কর্তৃপক্ষ ও স্বশাসিত সংস্থার ব্যাংকে থাকা বিপুল পরিমাণ উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমার বিধান করতে জাতীয় সংসদে একটি বিল উত্থাপন করা হয়েছে। সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় মেটাতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল মঙ্গলবার বিলটি উত্থাপন করেন।
Advertisement
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে ‘স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যান্সিয়াল কর্পোরেশনসহ স্বশাসিত সংস্থাসমূহের উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান আইন-২০২০’ শীর্ষক বিলটি উত্থাপন করেন মন্ত্রী।
এ সময় তিনি জানান, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থের সংস্থান প্রয়োজন, যা বর্তমানে সংগৃহীত রাজস্ব দ্বারা মেটানো দুরহ। তাই সংস্থাসমূহের তহবিলে রক্ষিত উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা প্রদানের মাধ্যমে বর্তমান সরকারের গৃহীত উন্নত দেশ গড়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই বিলটি আনা হয়েছে।
বিলে প্রস্তাবিত বিধানে বলা হয়েছে, সংস্থার বাৎসরিক পরিচালনা ব্যয়, নিজস্ব অর্থায়নে অনুমোদিত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বাৎসরিক ব্যয় নির্বাহের অর্থ, আপদকালীন ব্যয়ের জন্য বাৎসরিক পরিচালনা ব্যয়ের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশের সমপরিমাণ অর্থের অতিরিক্ত উদ্বৃত্ত অর্থ প্রতি অর্থবছর শেষ হওয়ার তিন মাসের মধ্যে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে।
Advertisement
বিলের তফসিলে ৬১টি প্রতিষ্ঠানের তালিকা করা হয়েছে। এই তফসিল সংশোধনেরও সুযোগ রাখা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হল- জাতীয় কারিকুলাম এবং টেক্সবুক বোর্ড, মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড, কারিগরি শিক্ষাবোর্ড, উচ্চ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড, ঢাকা, কুমিল্লা, যশোর, রাজশাহী, সিলেট, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও দিনাজপুর, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গাজীপুর, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড), পল্লী উন্নয়ন একাডেমি বগুড়া, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, মান নিয়ন্ত্রণ ও পরীক্ষা ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই), ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস), কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বার্ক), জাতীয় স্থানীয় সরকার ইনস্টিটিউট, পরমাণু শক্তি কমিশন, কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি), পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ), রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ), সেরিকালচার বোর্ড, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো, সেতু কর্তৃপক্ষ, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ, রাজশাহী), রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা), টেক্সাইল মিলস কর্পোরেশন (বিটিএমসি), চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন ও সহযোগী প্রতিষ্ঠান, কেমিক্যাল ইন্ড্রাস্ট্রিজ করপোরেশন ও সহযোগী প্রতিষ্ঠান, ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশন ও সহযোগী প্রতিষ্ঠান, পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন, প্রেট্রোবাংলা, শিপিং কর্পোরেশন, ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ, জুট মিল কর্পোরেশন, সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন (বিটিআরসি) বন শিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন, মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন, চা বোর্ড, পর্যটন কর্পোরেশন, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি), অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ), চট্টগ্রাম ওয়াসা, ঢাকা ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ড, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি), চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ, বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তপক্ষ, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন এবং বাংলাদেশ টেলি রেগুলেটরি কমিশন।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের নিজস্ব আইন ও বিধি অনুযায়ী আয়-ব্যয় ও বছর সমাপনান্তে তাদের হিসাব রক্ষণাবেক্ষণ করে। ব্যাংকে রক্ষিত হিসাবসমূহের স্থিতি হতে দেখা যায়, বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে বর্ণিত প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা আছে। উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় ও সরকারি অর্থের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে উল্লিখিত সংস্থাসমূহের তহবিলে রক্ষিত উদ্ধৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান করতে হবে। এর মাধ্যমে সরকার কর্তৃক গৃহীত উন্নত দেশ গড়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন ফাইন্যান্সিয়াল কর্পোরেশনসহ স্ব-শাসিত সংস্থাসমূহের উদ্ধৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান আইন-২০২০ শীর্ষক বিলটি আনা হয়েছে।
এইচএস/এমএসএইচ/এমএস
Advertisement