ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে বিরোধের প্রক্রিয়া শুরু করেছে চুক্তির সংশ্লিষ্ট ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য ফ্রান্স, জার্মানি এবং যুক্তরাজ্য। চুক্তির শর্ত ইরান না মানার ঘোষণা দেয়ার প্রায় এক সপ্তাহ পর তিনপক্ষ এক বিবৃতি দেয়ায় চুক্তি নিয়ে গভীর সঙ্কট তৈরি হয়েছে।
Advertisement
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তৈরি হওয়ার পর ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে সব ধরনের সীমা স্থগিত করে ইরান; যে কারণে দেশটি পারমাণবিক অস্ত্র এবং পারমাণবিক চুল্লি তৈরিতে ইউরেনিয়ামের ব্যবহার করতে পারে বলে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ২০১৮ সালে পারমাণকি চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করার জবাবে এই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে ইরান।
ফ্রান্স, জার্মানি এবং যুক্তরাজ্য এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, ইরানের এই যুক্তি তারা মেনে নেয়নি। একই সঙ্গে ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ চাপপ্রয়োগের প্রচারণাতেও তারা যোগ দিচ্ছে না। এছাড়া আর কোনও বিকল্প নেই বলে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে বিরোধের এই প্রক্রিয়ায় জার্মানি, ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্যের বিবৃতিতে বিতর্ক শুরু হয়েছে। তাদের এই বিতর্কের কারণে শেষ পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে পারে ইরান।
ছয় বিশ্ব শক্তির সঙ্গে ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তির শর্ত ইরান মানবে না বলে গত ৬ জানুয়ারি ঘোষণা দেয়। পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণের সীমা না মানার ঘোষণার সঙ্গে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করে ইরান। কূটনীতির দরজা খোলার রাখার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ওই তিন বিশ্ব শক্তি বলছে, ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের প্রচারণায় তারা যুক্ত হচ্ছে না। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক ঘটনাবলিতে এটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে যে, পুরো অঞ্চলকে হুমকির মুখে ফেলে চলমান উত্তেজনায় আমরা পারমাণবিক বিস্তারের সঙ্কট যুক্ত করতে পারি না।
Advertisement
জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেইকো মাস বলেছেন, আমাদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার : আমরা এই চুক্তির সংরক্ষণ এবং চুক্তিতে একটি কূটনৈতিক সমাধান চাই। চুক্তির সব পক্ষের সঙ্গে নিয়ে আমরা বিষয়টির সমাধান করবো। এখন আলোচনার যে প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে আমরা তাতে ইরানকে গঠনমূলকভাবে অংশগ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।
তেহরান চুক্তির শর্ত সীমিত করায় এখন ইরান, রাশিয়া, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি এবং যুক্তরাজ্য ভিয়েনায় রাজনৈতিক স্তরের এক বৈঠকে মিলিত হবে। সেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনার পর ঘোষণা থেকে ফিরে না আসলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে পারে ইরান।
ইরান শর্ত মানছে না অজুহাতে ২০১৮ সালে পারমাণবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেয়ার ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একই সঙ্গে আগের চুক্তি বাতিল করে ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র নতুন পারমাণবিক চুক্তি স্বাক্ষর করতে আগ্রহী বলে জানান তিনি। চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির লাগাম টানতে দেশটির বিরুদ্ধে বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন চুক্তির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে ইরান।
চুক্তির অন্যান্য পক্ষ জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ছাড়াও রাশিয়া এবং চীন এই চুক্তি বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। কিন্তু মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানের তেল রফতানিতে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
Advertisement
সূত্র : বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান, রয়টার্স।
এসআইএস/এমএস