ভারতের নতুন নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনকে (সিএএ) চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দেশটির সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে কেরালা রাজ্য সরকার। ধর্মের ভিত্তিতে তৈরি এই আইনের বিরুদ্ধে ভারতজুড়ে বিক্ষোভের মাঝে দেশটির প্রথম রাজ্য হিসেবে মঙ্গলবার কেরালা সরকার সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে। আগামী ২২ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টে কেরালা সরকারের দায়েরকৃত এই পিটিশনের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
Advertisement
বিতর্কিত এই নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে দেশটির সুপ্রিম কোর্টে ইতোমধ্যে ৬০টি পিটিশনের শুনানি হয়েছে। কেরালার বাম-রাজনৈতিক দল নেতৃত্বাধীন সরকার পিটিশনে বলেছে, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন সাম্যের অধিকারসহ সংবিধানের বেশ কয়েকটি অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন করেছে। আইনটি সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার মূলনীতির পরিপপন্থী।
কেরালার রাজ্য সরকার পাসপোর্ট আইন ও বৈদেশিক (সংশোধন) আদেশ-২০১৫ এর সংশোধিত নিয়মের বৈধতাকেও চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে। পাসপোর্ট আইনের সংশোধনীতে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালের আগে বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে যে অমুসলিমরা ভারতে প্রবেশ করেছেন; তারা দেশটিতে থাকতে পারবেন।
নতুন নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিবেশি বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত থেকে সেদেশে পাড়ি জমানো অমুসলিমদের ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ সহজ করা হয়েছে। তবে সমালোচকরা আশঙ্কা করছেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ও প্রস্তাবিত জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকার (এনআরসি) মাধ্যমে ভারতে মুসলিমদের প্রতি বৈষম্য করা হতে পারে।
Advertisement
কেরালা রাজ্য সরকারের পিটিশনে বলা হয়েছে, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ভারতীয় সংবিধানের ১৪, ২১ এবং ২৫ নম্বর অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন। সংবিধানের ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদে সমান অধিকার, ২১ অনুচ্ছেদে আইনের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতি ছাড়া কোনও ব্যক্তিকে জীবন বা ব্যক্তিগত স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত না করা এবং ২৫ অনুচ্ছেদে সকল ব্যক্তি বিবেকের স্বাধীনতার জন্য সমান অধিকারী বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
গত ৩১ ডিসেম্বর বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বাতিলের দাবিতে কেরালার বিধানসভায় একটি প্রস্তাব পাস হয়। বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনে রাজ্যের ক্ষমতাসীন সিপিআই (এম)- এলডিএফ এবং কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট নাগরিকত্ব আইন বাতিলের প্রস্তাবে সমর্থন জানায়।
কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ের আনা এই প্রস্তাব বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন পেয়ে পাস হয়। প্রস্তাবটি উত্থাপনের সময় বিজয় পিনারাই বলেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন দেশের ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তি ও আদর্শের পরিপন্থী। কিছু সম্প্রদায়কে নাগরিকত্ব দেয়ার মাধ্যমে এই আইনে ধর্মীয় বৈষম্য দেখা দেবে।
তিনি বলেন, সংবিধানের নীতি ও মূল্যবোধের সঙ্গে এই আইন সাংঘর্ষিক। দেশের মানুষের উদ্বেগের বিষয়টি বিবেচনা করে সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শ অক্ষুণ্ন রাখতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনটি কেন্দ্রের বাতিল করা উচিত।
Advertisement
গত ১১ ডিসেম্বর ভারতের সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাস হয়ে যাওয়ার পর দেশটির বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এখনও দেশটিতে এই আইনের বিরোধীতায় বিক্ষোভ করছেন অনেকে। বিতর্কিত এই নাগরিকত্ব আইনের বিরোধীতায় শুরু হওয়া বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত প্রায় ২৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।
সূত্র : এনডিটিভি, বিবিসি।
এসআইএস/এমএস