মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলীর বাসায় প্রবেশ করে হত্যাচেষ্টার ঘটনা পরিকল্পিত। হত্যাচেষ্টার আগে সাবেক গাড়িচালক নাজমুলের পরিকল্পনায় দুষ্কৃতিকারীরা উত্তরা আশকোনা এলাকার একটি হোটেলে বৈঠক করে। ওই বৈঠকে নাজমুল ছাড়া আরও ৬ জন অংশ নেন। বৈঠকে ব্রিফ শেষে তাদের হাতে দেয়া হয় সাতটি চাপাতি ও সুইচ গিয়ার ছুরি।
Advertisement
ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মো. ফরহাদ (১৮) নামে একজনকে সোমবার (১৩ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর উত্তরা থেকে পুলিশ অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই, ঢাকা মেট্রো-উত্তর) গ্রেফতার করে। গ্রেফতার ফরহাদ নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দার আনন্দপুরের মো. শহিদুল্লাহর ছেলে। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতেই পিবিআই এসব তথ্য জানায়।
সোমবার বিকেলে রাজধানীর পশ্চিম আগারগাঁও ৬০ ফিট এলাকাস্থ পিবিআই ঢাকা মেট্রো উত্তর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানান বিশেষ পুলিশ সুপার মো. বশির আহমেদ। এ সময় এসপি মিনা মাহমুদা ও এসপি রেজাউল মাসুদ রেজা উপস্থিত ছিলেন।
বশির আহমেদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী হত্যাচেষ্টার ঘটনায় ভুক্তভোগী জঙ্গি হামলা বলে দাবি করলেও পিবিআই প্রাথমিকভাবে এটিকে ডাকাতির ঘটনা বলে মনে করছে। গ্রেফতার ফরহাদকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, ঘটনার সঙ্গে ৭ জনের সংশ্লিষ্ট রয়েছে। এর মধ্যে মূল পরিকল্পনাকারী হলেন- ডা. সারওয়ার আলীর স্ত্রীর সাবেক গাড়িচালক নাজমুল।
Advertisement
তিনি বলেন, গ্রেফতার ফরহাদ ডে লেবার হিসেবে কাজ করে। ৩ জানুয়ারি তাকেসহ আরও একজনকে দৈনিক ৫০০ টাকা চুক্তিতে কাজে নেয় নাজমুল। পরে এ চক্রে আরও চারজন যোগ হয়ে আশকোনার একটি রেস্টুরেন্টে ডাকাতির পরিকল্পনা করে। ঘটনার দিন বিকেলেও আশকোনার রোজ ভ্যালি হোটেলের ৩০৩ নম্বর কক্ষে সাতজন পরিকল্পনা করে এবং সন্ধ্যার পর ঘটনাস্থল রেকি করে।
বশির আহমেদ বলেন, প্রাথমিকভাবে এ ঘটনাকে ডাকাতি বলে মনে হচ্ছে। টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নিতে তাদের ভাড়ায় ডাকা হয়েছিল বলে ফরহাদ জানিয়েছে। তবে কোনো জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা আছে কি না তা মূল পরিকল্পনাকারীকে গ্রেফতার করা গেলে সব বেরিয়ে আসবে। ঘটনায় জড়িত সাতজনই চিহ্নিত হয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে দু’জন ছাড়া অন্যদের নাম পরিচয় গোপন রাখা হচ্ছে।
ঘটনার দিনের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরের ওই বাসার তৃতীয় তলায় সারওয়ার আলীর মেয়ে এবং চতুর্থ তলায় তিনি থাকেন। দুর্বৃত্তদের দু’জন প্রথমে তৃতীয় তলায় গিয়ে মেয়ে, মেয়ের স্বামী ও সন্তানকে জিম্মি করে। তাদেরকে আঘাত করে সারওয়ার আলীর অবস্থান জানতে চায়।
চতুর্থ তলার ফ্ল্যাটের কথা বললে একজন ওপরে যায় এবং দরজায় নক করে। দরজা খোলা হলে প্রথমে সারওয়ার আলীর স্ত্রী ও পরে সারওয়ার আলীকে জিম্ম করে। পরে তৃতীয় তলা থেকে আরও একজন আসে। এ সময় তারা চিৎকার করলে দ্বিতীয় তলার থাকা এক মেজর এবং তার ছেলে গিয়ে তাদের বাঁচান। এর মধ্যে সারওয়ার আলীর মেয়ে ৯৯৯ এ ফোন করে পুলিশের সহায়তা চাইলে তাৎক্ষণিক পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয়। এ সময় দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।
Advertisement
বশির আহমেদ বলেন, বাসায় দু’জনই গিয়েছিল। বাকি পাঁচজন বাসার আশপাশে ছিল। ফরহাদও বাসার আশপাশে অবস্থান করছিল। পুলিশ যে দু’জনকে গ্রেফতার করে আদালতে জবানবন্দি রেকর্ড করিয়েছে তারা মূল পরিকল্পনায় জড়িত সাতজনের বাইরে। তবে গ্রেফতার ওই দু’জনেরও এ ঘটনায় সহযোগিতা রয়েছে। এর সঙ্গে দু’জন শিক্ষিত যুবকও রয়েছে।
জেইউ/আরএস/এমএস