আল্লাহ তাআলা মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। আর মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন তামাম সৃষ্টি। যার মধ্যে রয়েছে পশু-প্রাণীও। যুক্তরাজ্যভিত্তিক ন্যাচার ওয়াচ ফাউন্ডেশন দিবসটি সারাবিশ্বে প্রাণীপ্রেমীদের নিয়ে পালন করে থাকে। যার শুরু হয়েছিল ১৯৩১ সালে ইতালির ফ্লোরেন্স শহরে। এতে ইতালির সাধু-সন্ন্যাসীদের অবদানও অনেক বেশি।অনেকে মনে করেন বর্তমান সভ্যতাই কেবল পশু-প্রাণীর ওপর গুরুত্বারোপ ও এ বিষয়ে জ্ঞান-বিজ্ঞানের দুয়ার খুলে দিয়েছে। আজ থেকে দেড় হাজার বছর পূর্বেই পশু-পাখি সংরক্ষণ ও এর অধিকারের ব্যাপারে ইসলাম যে দিকনির্দেশনা দিয়েছে তা এক কথায় অনন্য। পশু-প্রাণীর অধিকারে ইসলাম যে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে। জাগো নিউজে তা তুলে ধরা হলো-পশু-পাখি ও জীব-জন্তু আল্লাহ তায়ালার অনন্য দান। আল্লাহ তায়ালা মানুষের খেদমতের জন্য এগুলো তৈরি করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِي آدَمَ وَحَمَلْنَاهُمْ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَرَزَقْنَاهُم مِّنَ الطَّيِّبَاتِ وَفَضَّلْنَاهُمْ عَلَى كَثِيرٍ مِّمَّنْ خَلَقْنَا تَفْضِيلاً অর্থাৎ `নিশ্চয় আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি, আমি তাদেরকে স্থলে ও জলে চলাচলের বাহন দান করেছি; তাদেরকে উত্তম জীবনোপকরণ প্রদান করেছি এবং তাদেরকে অনেক সৃষ্ট বস্তুর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি।` (সূরা বনি-ইসরাইল : আয়াত ৭০)রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীব-জন্তুকে হত্যা না করে সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছেন। হাদিসে এসেছে, একদা হজরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু কুরাইশের কিছু যুবকের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি দেখলেন, যুবকেরা পাখি ও মুরগিকে তাক করে (তীর নিক্ষেপ করে) লক্ষ্যবস্তুতে সঠিকভাবে আঘাত করার বিষয়ে প্রতিযোগিতা করছে। তারা ইবনে ওমরকে দেখে, দৌড়ে পালাচ্ছিল। ইবনে ওমর তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঐ সব ব্যক্তিকে অভিশাপ করেছেন যারা প্রাণীকে (তীর নিক্ষেপের) লক্ষ্যবস্তু বানায়।’ (মুসলিম)হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘একদা কোনো এক নবি একটি গাছের নিচে অবতরণ করলেন। অতঃপর একটি পিঁপড়া তাঁকে কামড় দিল। তখন তিনি গাছের নিচ থেকে তার গচ্ছিত মালামাল বের করে পিঁপড়ার আবাসস্থল শনাক্ত করে তাতে আগুন দিয়ে পিঁপড়াগুলোকে পুড়ে মারলেন। ফলে আল্লাহ তাঁকে ওহির মাধ্যমে জিজ্ঞেস করলেন, হে নবি! আপনাকে তো একটি পিঁপড়া কামড় দিয়েছে; আপনি কেন সব পিঁপড়া মেরে ফেললেন, (বুখারি)। এ হাদিসে পিপিলিকার ঘরকে সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। যদি ওই নবি শুধু একটি পিঁপড়াকে শাস্তি দিতেন, যেটি তাঁকে কামড় দিয়েছিল তাহলে আল্লাহ তাঁকে তিরস্কার করতেন না।হজরত ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সঙ্গে সফরে ছিলাম। তিনি তাঁর হাজত মেটানোর জন্য গেলে আমরা একটি পাখিকে দুটি ছানাসহ দেখতে পেলাম এবং আমরা পাখির বাচ্চা দুটি নিয়ে এলাম। এ অবস্থায় পাখিটি বাচ্চা দুটির মায়ায় আমাদের পিছু নিল এবং ডাকাডাকি করছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাজত থেকে ফিরে এ দৃশ্য দেখে বললেন, ‘কে এদেরকে পিতা-মাতা থেকে ছিন্ন করে ভীতির মধ্যে ফেলে দিল, যাও বাচ্চা দুটিকে তাদের পিতা-মাতার কাছে ফিরিয়ে দাও।’হাদিসে এসেছে, ‘একদা এক ব্যক্তি হাঁটতে হাঁটতে পিপাসার্ত হয়ে গেল। অতঃপর লোকটি একটি কূপে নেমে পানি পান করে আসতেই একটি কুকুরকে পিপাসায় কাতরাতে দেখলেন। এবং কুকুরটি তৃষ্ণায় ভিজা মাটি খাচ্ছে। তখন তিনি মনে মনে বললেন, কুকুরটির আমার মতোই পিপাসার্ত, অতঃপর তিনি আবারও কূপে নেমে জুতায় পানি ভরে; পানিসহ জুতা মুখে করে উপরে এসে কুকুরটিকে পানি পান করালেন। অতঃপর আল্লাহ তার ওপর খুশি হয়ে তাকে ক্ষমা করে দিলেন। সাহাবিরা বললেন : হে আল্লাহর রাসুল, পশুর মধ্যেও কি আমাদের কোনো পুণ্য আছে? তিনি বললেন, প্রত্যেক প্রাণের মধ্যেই প্রতিদান রয়েছে।’ (বুখারি)পশুর সঙ্গে সদয় আচরণ ও দয়া প্রদর্শনের একটি দিক হচ্ছে, যে পশু হিংস্র ও মানুষের ক্ষতি করে সেসব পশুকে সুন্দরভাবে হত্যার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কোনোভাবেই তাকে কষ্ট দিয়ে মারা যাবে না। যেসব পশুকে হত্যার অনুমতি দেয়া হয়েছে তা হচ্ছে—বৃদ্ধ কুকুর, ইঁদুর, বিচ্ছু ও সাপ। তবে এগুলোকে আগুনে পুড়িয়ে মারা যাবে না।আর যেসব জীব-জন্তুর গোশত আমরা ভক্ষণ করি; যেমন—গরু, ছাগল ও ভেড়া ইত্যাদি এবং গৃহপালিত পাখি, এগুলোকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে সুন্দরমত জবাই করতে হবে, যাতে জবাইয়ের সময় তাদের কষ্ট কম হয়।হাদিসে এসেছে, ‘ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, একদা এক ব্যক্তি একটি ভেড়া জবাই করার জন্য শোয়ানো অবস্থায় রেখে চাকুতে ধার দিচ্ছিলেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : তুমি কি পশুটিকে দু’বার মারতে চাও? তুমি কি পশুটিকে শোয়ানোর আগে চাকুতে ধার দিয়ে নিতে পারতে না?কোনো পশু রোগে আক্রান্ত হলে তাকে দ্রুত চিকিত্সার বিষয়েও জোর দেয়া হয়েছে। রোগাক্রান্ত পশুকে সুস্থ পশু থেকে পৃথক রাখতে বলা হয়েছে। যাতে করে অন্য পশু রোগাক্রান্ত না হয়। এমনিভাবে ইসলাম পশু-পাখির সব অধিকার সংরক্ষণের ব্যাপারে খুব গুরুত্বারোপ করেছে।পরিশেষে....ইসলামে পশু-পাখির ব্যাপারে এই সুমহান অবস্থানের কথা সারা দুনিয়ায় প্রচার করা প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানি দায়িত্ব। পশু-পাখির ব্যাপারেও ইসলামের দিকনির্দেশনা রয়েছে, তা মানুষের কাছে বলতে হবে। আমরা যদি এ দায়িত্ব যথাযথ পালন করতে পারি তাহলে মানুষের কাছে ইসলামের সৌন্দর্য বাড়বে। সাধারণ মানুষ সত্যিই অনুভব করবে যে, ইসলাম সত্যিকারার্থে ন্যাচারাল তথা বাস্তব ধর্ম এবং মানুষসহ সব প্রাণীর প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দেয়। আল্লাহ তাআলা সবাইকে পশু-প্রাণীর সংরক্ষণের তাওফিক দান করুন। আমিন।জাগো ইসলামে লেখা পাঠাতে ই-মেইল : jagoislam247@gmail.comজাগোনিউজ২৪.কমের সঙ্গে থাকুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।এমএমএস/পিআর
Advertisement