সবক্ষেত্রেই প্রত্যেকে একজন ভালো লিডার হওয়ার চেষ্টা করেন। তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন ও কর্মীদের কাছ থেকে যথাযথভাবে কাজ আদায় করে নিতে নানাবিধ কৌশল অবলম্বন করেন। কিন্তু একজন ভালো লিডার হতে কৌশলের পাশাপাশি অনেক গুণাবলীও অর্জন করতে হয়। কর্মক্ষেত্রে যার ব্যাপক প্রভাব রয়েছে।কর্মীদের সঙ্গে কথা এবং কাজে আন্তরিক হওয়া উচিত। মুখের ভাষার দ্বারা মানুষ আহত হয়, তাই শব্দ নির্বাচনে সতর্ক থাকা উচিত। সবসময় সব কথাই যে খুব চিন্তা করে বলতে হবে এমন নয়, কিন্তু মনে রাখতে হবে- অনেক সময় অনেক খেয়ালী মন্তব্য অথবা হাসি কেউ কেউ অন্যভাবেও নিতে পারেন। আপনি বিশৃঙ্খলা মেনে নিবেন না, তার জন্য যে-ই দায়ী হোক না কেন। সবার কাছ থেকে আপনি কেমন ব্যবহার আশা করেন তার একটি নমুনা তৈরি করবেন। এছাড়া একটি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পদ্ধতির ব্যবস্থা করা উচিত যাতে সবাই নির্ভয়ে অভিযোগের কথা বলতে পারেন।আপনার উচিৎ সবাইকে বলতে দেয়া। টেবিলের এক প্রান্তে বসে শুধু আপনি কথা বলবেন আর অন্যরা মাথা দোলাবে এমন ভাবা ঠিক নয়। অনেক সময় প্রতিষ্ঠানে অনেক বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং আপনি নিজেই তার সমাধান করার চেষ্টা করেন এবং আপনার সিদ্ধান্ত কর্মীদের উপর চাপিয়ে দেন। হয়তো অনেক কর্মী আপনার সিদ্ধান্ত সহজভাবে নেন না ফলে সিদ্ধান্তটি বাস্তবে রূপ নেয় না। আপনি চাইলেই আপনার কর্মীদের সাথে সমস্যাটি ভাগাভাগি করে নিতে পারতেন এবং একটি সুনির্দিষ্ট সমাধানে আসতে পারতেন। এতে যদি সমস্যার সমাধান নাও হতো তাতে আফসোস করার মত কিছু থাকতো না বরং আপনার দায়িত্ব, যাতে সবাই বুঝতে পারে যে প্রতিষ্ঠানের আলোচনা সভায় সবার কথা বলার সুযোগ আছে। প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি বিভাগের উন্নতির সাথে জড়িত ঐ বিভাগের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। লক্ষ্য রাখতে হবে গুটিকয়েকের পরিশ্রমের মাধ্যমে নয় বরং সকলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে উন্নতি নিশ্চিত হয়েছে।চেষ্টা করুন একজন কর্মীর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে এবং সেই লক্ষ্যে তাকে প্রস্তুত করুন। দেখবেন আপনি একজন ভালো কর্মী তৈরি করেছেন এবং যিনি ভবিষ্যতে আপনাকে সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে। আমরা অবশ্য মনে করি, ‘কর্মী তৈরি করে লাভ কি? প্রশিক্ষণ পাওয়ার পর তারা অন্য প্রতিষ্ঠানে চলে যাবে।’ প্রশ্ন হচ্ছে, দোষটা কি কর্মীর? নাকি আপনার? একজন কর্মী একজন ভালো লিডার ছেড়ে কখনই অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার কথা নয়। এবার প্রশ্ন করুন নিজেকে, আপনি ভালো লিডার কিনা? অনেক লিডারের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তিনি কর্মীদের কাজের প্রশংসা করেন না। ভাবেন তাতে তারা ‘মাথায় উঠে যাবেন!’ এটা মোটেও সঠিক নয়। আপনার প্রশংসা ঐ কর্মীর কাজের প্রেষণা অনেকাংশে বাড়িয়ে দিবে। সফল যারা তারা জানে কিভাবে অন্যকে উৎসাহিত করতে হয়। ব্যবসার ক্ষেত্রে ভাল লিডার হতে হলে এই গুণটি আপনার থাকা প্রয়োজন। আপনার ভেতরে যদি এই গুণটি থাকে তাহলে আপনি অন্যদের তুলনায় আলাদা হবেন। আপনার কাজে আপনার ব্যক্তিত্ব ফুটে উঠবে।মাঝে মাঝে নিজেকে পরীক্ষা করুন- আপনি কেমন লিডার। ধরুন একটি কাজ নিয়ে আপনার কর্মীদের সাথে আলোচনা করুন যে, কে এই কাজটির দায়িত্ব নিতে চায়? যদি দেখেন একজনও এগিয়ে আসছে না বরং অপেক্ষা করছে আপনি কখন কাকে এই দায়িত্বটি দিবেন। তাহলে বুঝতে হবে আপনি এখনও ভালো লিডার হতে পারেননি।নিয়োগ এবং পদোন্নতির সিদ্ধান্ত প্রত্যেক কর্মীর কর্মদক্ষতা ও যোগ্যতার উপর নির্ভর করে নিতে হবে। আপনার সিদ্ধান্ত যেন পক্ষপাতমুক্ত হয় তার দিকে লক্ষ্য রাখা উচিত। যখন কোন কর্মীর কাজের মূল্যায়ন হয় তখন যাতে সেই মূল্যায়ন প্রক্রিয়া ব্যক্তিগত অনুভূতির প্রভাবমুক্ত হয়। নিরপেক্ষ থাকতে চেষ্টা করতে হবে এবং অন্যদেরও এমন হতে উৎসাহিত করতে হবে।কর্মীর ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবনের সমস্যা এবং তার সঠিক সমাধানে আপনাকে এগিয়ে আসতে হবে। এতে আপনি ঐ কর্মীর কাছে আস্থাভাজন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি লাভ করবেন। এর ফলে ঐ কর্মী আপনার চিন্তা এবং পরিকল্পনাকে অধিক গুরুত্ব প্রদান করবে।প্রত্যেক কর্মীর মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক এবং একে অন্যের প্রতি আস্থা তৈরি করা, একজন সফল লিডারের গুণাবলীর মধ্যে অন্যতম।মোটকথা, একজন কর্মী যখন সকল বিষয়ে আপনার উপর আস্থা রাখতে পারবে এবং নিঃসংকোচে, নির্দ্বিধায় সবকিছু আপনাকে খুলে বলতে পারবে কেবল তখনই আপনি নিজেকে একজন সফল লিডার হিসেবে ভাবতে পারবেন। তাই অদ্ভুত চিন্তা-চেতনা থেকে বেরিয়ে আসুন। একটি সুষ্ঠু এবং সুশৃঙ্খল কর্মপরিবেশ আপনার কর্মীদের প্রদান করুন, দেখবেন একটি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কর্মীবাহিনী তৈরি হয়েছে। যারা লক্ষ্য অর্জনে বদ্ধপরিকর। লেখক: ব্যবস্থাপক, এইচআর অ্যান্ড অ্যাডমিন, আকিজ গ্রুপ।এসইউ/এমএস
Advertisement