রাজধানীর গুলশানে সিসারে তাভেল্লা নামে একজন ইতালীয় নাগরিককে গুলি করে হত্যার এক সপ্তাহ না যেতেই রংপুরে জাপানি নাগরিক হোসি কুনিওকে হত্যা করা হল। গুলশান টু রংপুর। হত্যার ধরন ও টার্গেট একই রকম। টার্গেট বিদেশি নাগরিক। হত্যাকারীরা মুখোশধারী, মোটরসাইকেলে এসে কাছ থেকে গুলি করে হত্যা। এবং জঙ্গি সংগঠন আইএসের দায় স্বীকার।স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন দু`টি হত্যাকাণ্ড একই সূত্রে গাঁথা। এর পেছনে ষড়যন্ত্রের কথাও বলা হচ্ছে সরকারের তরফ থেকে। কিন্তু পর পর দুই জন বিদেশি নাগরিক হত্যার পরও পুলিশ এখনো পর্যন্ত হত্যাকারীদের ধরতে পারেনি। পাওয়া যায়নি হত্যার কোনো মোটিভ বা ক্লু । হত্যাকারীরা ধরাছোয়ার বাইরে থাকলে এই সিরিজ হত্যাকাণ্ড শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে থামবে সেটি এক গভীর ভাবনা এবং উদ্বেগের বিষয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ মিশন শেষে দেশে ফিরে হত্যাকারীদের প্রেপ্তারের বিষয়ে কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। এখন দেখার বিষয় সেটি কতোটা বাস্তবায়িত হয়। সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে গুলশানে কূটনীতিক পাড়ায় সিসারে তাভেল্লা নামে একজন ইতালীয় নাগরিককে গুলি করে হত্যা করা হয়। এর কয়েকদিন পর শনিবার বেলা ১১টার দিকে রংপুরের মাহিগঞ্জ আলুটারি এলাকায় রিকশায় করে যাওয়ার সময় মুখোশধারী অজ্ঞাত পরিচয় দুই বন্দুকধারীর গুলিতে জাপানি নাগরিক হোসি কুনিও আহত হন। পরে তাকে হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে তিনি মারা যান। দুই বিদেশি নাগরিককে হত্যার দায় স্বীকার করেছে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস। শনিবার আইএসের এক টুইটার বার্তার বরাত দিয়ে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়।আইএসের টুইটার বার্তার বরাত দিয়ে রয়টার্সের ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশে এক সপ্তাহের মধ্যে দুই বিদেশি নাগরিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে এবং এ ধরনের আরো হামলার আশঙ্কা রয়েছে। ‘এ ধরনের নিরাপদ সিরিজ অভিযান ক্রুসেড পরিচালনাকারী জোটভুক্ত দেশগুলোর বিরুদ্ধে করা হবে। কোনো মুসলিম দেশে তারা নিরাপদ থাকবে না বা বাস করতে পারবে না।’ বলে হুমকিও দিয়েছে আইএস। এ দুই বিদেশিকে হত্যার পেছনে জঙ্গি সংগঠন জড়িত কিনা সেটি বৃহৎ তদন্তের বিষয়। কিন্তু সাধারণ হত্যাকাণ্ড হিসেবে বিবেচনা করলেও তো সিরিজ খুনিদের ধরা উচিত ছিল। পুলিশ তো বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে পারছেই না হত্যার পর খুনিদের গ্রেপ্তারেও কোনো সক্ষমতার পরিচয় দিতে পারছে না। এ রকম একটি অবস্থায় শুধু ‘ষড়যন্ত্র’ তত্ত্ব বা রাজনৈতিকভাবে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে বসে থাকলে চলবে না। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যে বা যারাই জড়িত থাক না কেন তাদের ধরতে তো কোনো বাধা নেই। গুলশানের কূটনীতিক জোনের মত নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যেও খুনিরা পার পেয়ে যাচ্ছে আবার নিভৃত পল্লীতেও তারা নির্বিঘ্নে হত্যাকাণ্ড চালিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, যেখানে খুশি সেখানেই তারা তাদের উদ্দেশ্য সফল করছে। মুষ্টিমেয় সন্ত্রাসীরা তাদের কিলিং মিশন সাকসেস করছে অবলীলায় আর আমাদের প্রশিক্ষিত পুলিশ বাহিনী তাদের ধরতে পারছে না। এটা পুলিশের সক্ষমতার অভাব নাকি অন্য কোনো সমস্যা? একের এর এক বিদেশি নাগরিক হত্যায় সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর পক্ষ থেকে উদ্বেগ জানানো হচ্ছে। বাংলাদেশে চলাচলের ওপর সতর্কতা আরোপ করছে। এ অবস্থা তো দেশের জন্য মঙ্গল জনক হতে পারে না। জাপানি নাগরিক বাংলাদেশে এসে আলু এবং ঘাসের প্রকল্প শুরু করেছিলেন। বিদেশি অনেক নাগরিকই আছেন যারা সম্ভাবনাময় বাংলাদেশে এসে অনেক কিছু করতে চায়। কিন্তু তারা যদি হত্যাকাণ্ডের শিকার হন সেক্ষেত্রে কেউ কি আর এদেশে আসতে চাইবে। এছাড়া পর্যটন, বিদেশি বিনিয়োগসহ নানা আর্থসামাজিক ক্ষেত্রেও এ ধরনের হত্যাকাণ্ড নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি তো বটেই বাংলাদেশের ভাবমূর্তির স্বার্থেও হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা অত্যন্ত জরুরি। এই ‘পুনরাবৃত্তি রোধ’ করার কথা আমরা ইতিপূর্বেও সম্পাদকীয় স্তম্ভে বলেছিলাম। কিন্তু পুনরাবৃত্তি রোধ করা যায় নি। তাই আবারও বলছি, এখানেই থামুক হত্যাযজ্ঞ। হত্যাকারীদের ধরতে সর্বশক্তি নিয়োগ করুন। নইলে ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। এইচআর/এমএস
Advertisement