রাজধানীর গুলশান এলাকায় ইতালিয়ান ত্রাণকর্মী সিজারে তাভেল্লা (Cesare Tavella) হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ সদস্যদের নিজস্ব নিরাপত্তা জোরদারে নির্দেশনা জারি করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। শুধু তাই নয়, প্রত্যেক পুলিশ সদস্যকে পেশাদারিত্বের প্রতি যত্নবান হতে বলেছে ডিএমপি।গত বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ১৮টি পয়েন্ট ধরে নির্দেশনা দিয়েছে ডিএমপি সদর দফতর। তাতে বলা হয়েছে, ডিএমপির প্রত্যেক পুলিশ সদস্য নিজস্ব নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি সতর্কতামূলক পেশাদারিত্ব রক্ষা করবে।ডিএমপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। এছাড়া জাগো নিউজের কাছে এ সংক্রান্ত নথিও রয়েছে। নথি অনুযায়ী, আনুষ্ঠানিকভাবে ডিএমপির প্রত্যেকটি বিভাগের মাধ্যমে থানা পুলিশকে এসব নির্দেশনা সুষ্ঠুভাবে পরিপালন করতে হয়েছে।প্রসঙ্গত, গত সোমবার সন্ধ্যায় গুলশানের ২ নম্বর কূটনীতিক এলাকার ৯০ নম্বর সড়কে ইতালিয়ান নাগরিক সিজার তাভেল্লাকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। হত্যাকাণ্ডের পর ইসলামিক স্টার্ট নামে একটি সংগঠন তাকে হত্যার দায় স্বীকার করলেও বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ।স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবি, আইএস এই ঘটনায় সঙ্গে জড়িত নয়। বাংলাদেশে আইএসের কোনো অস্তিত্বও অস্বীকার করেছেন তিনি। এঘটনার পর রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে নড়েচড়ে বসে পুলিশ।ডিএমপির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিটি পুলিশ সদস্যকে দায়িত্ব পালনকালে ১৮টি নির্দেশ সঠিকভাবে পরিপালন করতে বলা হয়েছে। যারা পালন করবে না তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে ডিএমপি।ডিএমপির নির্দেশনামূলক চিঠিতে বলা হয়, আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিটি পুলিশ সদস্য পরিচ্ছন্ন ও পূর্ণ পোশাকে দায়িত্বস্থলে নিয়োজিত থাকবেন। আইন-শৃঙ্খলার কাজে নিয়োজিত থাকাকালে রায়ট গিয়ার (হেলমেট, বুলেট প্রুফ জ্যাকেট, লেগ গার্ড বুট) পরিধান করে যেতে হবে।কর্তব্যরত অবস্থায় পুলিশ সদস্যরা নিজের অস্ত্র, গোলাবারুদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত ও ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে। ডিএমপির ওই ১৮টি নির্দেশনার আরো বলা হয়, মোতায়েনকৃত এলাকায় পুলিশ সদস্যরা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকবে না, নিজেদের নিরাপত্তার দৃষ্টি সীমানায় থাকবে।কর্তব্যরত অবস্থায় অহেতুক ফোনে কেউ কথা বলবে না। কারণ হিসেবে ডিএমডির ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, অহেতুক ফোনে কথা বলার সময় মনোযোগী থাকা যায় না। তখন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা কিংবা সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। শুধু তাই নয়, প্রকাশ্যে যাতে কোনো পুলিশ সদস্য ধুমপান না করেন সে জন্যও নির্দেশনা দিয়েছে ডিএমপি।উল্টোপথে পুলিশ সদস্যরা গাড়ি চালাবেন না। নিজেরা ট্রাফিক আইন বাস্তবায়ন করবেন। কিন্তু নিজেরা ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করে বেপরোয়া গাড়ি চালানো বন্ধ করতে হবে। নিরাপত্তা ও তল্লাশিতে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা অবশ্যই বুলেট প্রুফ জ্যাকেট পরিধান করবে।চেকপোস্টগুলোতে মূল লক্ষ্য থাকবে সন্দেহভাজনদের শনাক্ত করা। এসময় সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করা। কমপক্ষে একজন অনগার্ড অবস্থায় থাকবেন। রাত্রিকালীন দায়িত্বরতরা অবশ্যই রিফ্লেকটিভ ভেস্ট পরিধান করবেন।মোটরসাইকেল চালানোর সময় নিজেরা অবশ্যই হেলমেট ব্যবহার করবেন ও ড্রাইভিং লাইসেন্স সঙ্গে রাখা। ঝুঁকি নিয়ে ট্রাফিকের দায়িত্বরতরা গাড়ি না থামিয়ে ওয়ারলেসের মাধ্যমে থামানোর চেষ্টা করা। যাতে কোনো সদস্য মর্মান্তিক দুর্ঘটনার কবলে না পড়ে সে দিকে খেয়াল রাখা।নিরাপদ দূরত্বে গাড়ি থামানো। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে অনিরাপদ রাস্তায় চলাচল না করা। পুলিশের বিস্ফোরক ও তেল কিংবা পেট্রল সরবরাহ সংক্রান্ত বিভাগে কর্মরতরা আরো সতর্ক হয়ে দায়িত্ব পালন করবেন। পুলিশের ড্রাইভাররাও গাড়ির চালানোর নির্দেশনা নিজেরা ঠিকমতো পালন করবেন।ডিএমপির ওই নির্দেশনাও এও বলা হয়েছে, যারা এই নির্দেশনা না মেনে চলবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে ঢাকা মহানগর পুলিশ সদর দফতর।এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ডিএমপির উপ-কমিশনার (ডিসি-মিডিয়া) মুনতাসিরুল ইসলাম বলেন, পুলিশ এমনিতেই অনেক সতর্ক হয়ে গেছে। কূটনৈতিকপাড়াসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও চেকপোস্টগুলোতে সতর্কতামূলক তল্লাশি ও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।তবে আনুষ্ঠানিকভাবে ডিএমপির পক্ষ থেকে থানা পুলিশকে পরিপালনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে কি-না সে সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোস্তাক আহমেদ বলেন, ঘটনার পর হত্যাকাণ্ড এলাকার আশপাশে নিরাপত্তা ব্যাপকভাবে বাড়ানো হয়েছে। পুরো রাজধানী ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার আওতায় আনার পরিকল্পনা করেছে ডিএমটি।কূটনৈতিক জোনকে নিরাপত্তা পরিকল্পনায় আরো বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। পুলিশ সদস্যদের আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।জেইউ/বিএ
Advertisement