মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ কারাগারে তার আইনজীবীদের বলেছেন, বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড নিয়ে ১৯৭২ সালে ৪২টি মামলা দায়ের হয়েছিল। ওই মামলার কোনোটিতেই (মুজাহিদ) আসামি ছিলাম না। শনিবার মুজাহিদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় কারাগারে সাক্ষাৎ করতে গেলে মুজাহিদ তার আইনজীবীদের সঙ্গে এসব কথা বলেছেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।মুজাহিদ আরো বলেন, ওই বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড নিয়ে ১৯৭২ সালে একটি তদন্ত কমিটিও করা হয়েছিল। যে কমিটিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সিনিয়র দুইজন আইনজীবীর সঙ্গে জহির রায়হানও ছিলেন। যার রিপোর্ট আজ পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়নি বলে দাবি করেন মুজাহিদ।মুজাহিদের বরাত দিয়ে শিশির মনির বলেন, তিনি আমাদের বলেছেন, যে অভিযোগে উনাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে, উনি মনে করেন রাষ্ট্রপক্ষ তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ আনতে ব্যর্থ হয়েছে। আন্দাজ-অনুমানের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপক্ষ এ অভিযোগ তার বিরুদ্ধে আনা হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। আর ওই অভিযোগের সঙ্গে ওনার দূরতম কোনো সম্পর্কও নেই।শিশির বলেন, উনি আমাদের আবারো বলেছেন, বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড নিয়ে ১৯৭২ সালে ৪২টি মামলা দায়ের হয়েছিল। তবে ওই মামলার কোনোটিতেই তিনি আসামি ছিলেন না। ওই বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড নিয়ে ১৯৭২ সালে একটি তদন্ত কমিটিও করা হয়েছিল। যার আহ্বায়ক ছিলেন জহির রায়হান এবং সদস্য সচিব ছিলেন ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। অথচ ওই কমিটির রিপোর্ট আজ পর্যন্ত রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে উপস্থাপন করেননি।শিশির মনির সাংবাদিকদের আরো বলেন, মুজাহিদ বলেছেন, তিনি ’৭১ সালে একজন ছাত্র ছিলেন। অথচ বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের দায় তার ঘাড়েই চাপানো হয়েছে। তিনি আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন এবং আছেন।আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) আবেদন করার জন্য প্রস্তুতি নিতে আইনজীবীদের বলেছেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ। তিনি মনে করেন, তার রিভিউ আবেদনের প্রত্যেকটি যুক্তি বিবেচনায় নিয়ে মহামান্য আপিল বিভাগ তার দণ্ড মওকুফ করবেন এবং তাকে খালাস দেবেন।রায়ের একটি অনুলিপি মুজাহিদের কাছে দিয়েছেন জানিয়ে শিশির বলেন, উনি বলেছেন, রায়টি পূর্ণাঙ্গভাবে পর্যালোচনা করবেন এবং রিভিউ আবেদন দায়ের করার পূর্বমুহূর্তে আরেকবার আইনজীবীদের সঙ্গে দেখা করতে চান। কোনো গ্রাউন্ডে রিভিউ করা হচ্ছে জানতে চাইলে শিশির বলেন, মুজাহিদকে আলবদর প্রধান বলা হলেও রাষ্ট্রপক্ষ এ বিষয়ে কোনো ধরনের প্রমাণ দিতে পারেননি। তাই এই গ্রাউন্ডকে সামনে রাখা হবে বলে তিনি জানান।রিভিউ শুনানির বিষয়ে জানতে চাইলে শিশির মনির বলেন, এখন হাইকোর্টে অবকাশ চলছে। তাই অবকাশ শেষ হলেই এর শুনানি হবে বলে আমি মনে করি।এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মুজাহিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে কারাগারে যান পাঁচ আইনজীবী। তারা বেলা পৌনে ১১টায় ভেতরে প্রবেশ করে সাক্ষাৎ শেষে সাড়ে ১১টার দিকে বের হয়ে আসেন। এসময় অ্যাডভোকেট শিশির মনির ছাড়াও সঙ্গে ছিলেন নজরুল ইসলাম, মশিউল আলম, মতিউর রহমান আকন্দ ও গাজী তামিম।সাক্ষাৎ শেষে বের হয়ে জেলগেটে শিশির মোহাম্মদ মনির বলেন, আমরা মুজাহিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। তিনি দেশবাসীকে সালাম জানিয়েছেন এবং ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন। তিনি শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন এবং মানসিকভাবেও অত্যন্ত দৃঢ় রয়েছেন।এফএইচ/বিএ
Advertisement